সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। যার আয়তন ১৭ বর্গ কিলোমিটার। সেখানে নীল আকাশের সঙ্গে মিলে মিশে থাকে সমুদ্রের নীল পানি। সারি সারি নারিকেল গাছ আর আকাশে উড়ে যাওয়া গাঙচীল, এই দ্বীপের মূল সৌন্দর্যের আধার। এখানে প্রচুর নারিকেল গাছ থাকায় স্থানীয়রা সেন্টমার্টিনকে ‘নারিকেল জিঞ্জির’ বলে থাকে। তবে দারুচিনির দ্বীপ হিসেবেই সেন্টমার্টিনের জনপ্রিয়তা বেশি।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাথ উপজেলায় অবিস্থিত। টেকনাথ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে ও মায়ানমারের উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় এর অবস্থান।
প্রতি বছর দেশ বিদেশি পর্যটকরা এই দ্বীপে ভিড় করেন। বিশেষ করে শীতের সময়। সাগর যখন শান্ত থাকে পর্যটকরা তখন সেই নীল জলে সাঁতরে বেড়ায়। কেউ আবার গা ভিজিয়ে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যায়। সেন্টমার্টিনে পানির রঙ একদম নীল। মনে হবে যেন, মনের মাধুরি মিশিয়ে কেউ নীলের ছোঁয়া দিয়েছে।
সেন্টমার্টিনে যাওয়ার উপযুক্ত সময় হিসাবে নির্বাচন করা হয় অক্টোবর থেকে মার্চ মাসে। কারণ এই সময়টাতে বৃষ্টি কম হয়। শীতের কুয়াশায় সমুদ্রের পাড়ে বেশ উপভোগ্য লাগে। বর্ষার সময় সাগর উত্তপ্ত থাকে। ঢেউগুলো অনেক বড় থাকে। তাই পর্যটকরা ওই সময় কক্সবাজার ঘুরেই ফিরে যান। মৌসুম থাকে বলে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলে সাধারণত অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। তাই এই সময়টাতেই ঘুরে আসতে পারেন সেন্টমার্টিন।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে যেতে হলে পরিবহনে সরাসরি টেকনাফ যেতে হবে। ঢাকা থেকে হানিফ, শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন, সেন্টমার্টিন ট্রাভলস, গ্রীন সেন্টমার্টিন, রিলাক্সসহ আরো বেশ কিছু বাস রয়েছে। যার মূল্য পড়বে নন-এসি-৯০০, নন-এসি-১০০০ (শ্যামলী বিজনেস ক্লাস), নন-এসি-১১০০ (সেন্টমার্টিন পরিবহন বিজনেস ক্লাস), এসি-১২০০-১৬০০ টাকা (ইকোনমি ক্লাস), এসি-১৮৫০ টাকা (রিলাক্স বিজনেস ক্লাস), গ্রিনলাইন এসি-২০০০ টাকা (বিজনেস ক্লাস)। বাসে টেকনাফ পৌছাতে সময় নিবে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা।
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন সকাল থেকে আসা-যাওয়া করে সি-ট্রাক, কেয়ারি সিন্দাবাদ এবং নাফসি জাহাজ। চমৎকার এসব জাহাজের পাশাপাশি ট্রলারও চলাচল করে এই সমুদ্র রুটে। পছন্দসই বাহনে যেতে পারেন।
নিরাপদ জলযান হিসেবে কেয়ারি সিন্দাবাদ ও নাফসি জাহাজই নির্ভরযোগ্য। কক্সবাজার বি আই ডব্লিও টি এ ঘাট থেকে ছাড়ে সকাল ৭টায়। এই সময় জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভরশীল। জোয়ারের সময়ের উপর নির্ভর করে ভোর ৫টা থেকে ৭টার মধ্যে জাহাজ ছাড়ে। সেন্টমার্টিন থেকে ছাড়বে বিকেল ৩.৩০ মিনিটে। উভয় দিক থেকে গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগে আনুমানিক ৫ ঘণ্টা।
এসব জাহাজে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। অন্যদিকে প্রতিদিনই বিকেল ৩টায় এসব জাহাজ সেন্টমার্টিন ছেড়ে আসে। শীত মৌসুমে সমুদ্র শান্ত থাকে এবং গ্রীষ্ম-বর্ষা মৌসুমে সমুদ্র উত্তাল থাকে, তখন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ।
যেখানে থাকবেন
সেন্টমার্টিন জেটি ঘাটের সঙ্গেই বাজারে অনেক হোটেল রয়েছে। দামাদামি করে সেখানে থাকতে পারেন। ছুটির দিন কিংবা অতিরিক্ত ভিড়ের দিন গেলে অবশ্যই আগে বুকিং দিয়ে যাবেন।
নিরিবিলিতে থাকতে চাইলে পশ্চিম বিচের দিকে চলে যেতে হবে। সেখানে বেশকিছু বিচ ভিউ রিসোর্ট (আটলান্টিক রিসোর্ট, পান্না রিসোর্ট, ড্রিম নাইট রিসোর্ট, সায়রী ইকো রিসোর্ট, নোনাজল বিচ রিসোর্ট, কিংশুক রিসোর্ট, সীমানা পেরিয়ে রিসোর্ট) রয়েছে। সমুদ্রের পানি রিসোর্টের উঠানে এসে বাড়ি খায়। ভাড়া সময়ভেদে ১৫০০-৪৫০০ পর্যন্ত।
কি খাবেন ও কেমন খরচ
ডাব, চিংড়ি, ক্র্যাব ফ্রাই, মাছের বারবিকিউ পাওয়া যায়। বাজারে সব হোটেলেই মাছ সাজিয়ে রাখা হয় যেটা বলবেন বারবিকিউ করে দিবে। জেটি থেকে বাজারের রাস্তা ধরে শেষ মাথায় হাতের বামে পেয়ে যাবেন পেয়াজু, সিঙ্গারা, সমুচার দোকান । তবে সন্ধ্যা ৭.৩০ মধ্যেই শেষ হয়ে যায় খাবার। তাই সময় করে আগেই যাবেন। সকালের নাস্তা ৫০-১০০ টাকা, দুপুরের খাবার প্যাকেজ ১২০-২০০ টাকা, রাতের বারবিকিউ প্যাকেজ ২৫০-৩৫০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন।
যাওয়ার আগে কিছু পরামর্শ_
- ময়লা-আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলবেন না।
- জেটির কাছে উত্তর দিকের বিচের একটি জায়গা বেশি বিপদজনক। কাজেই এড়িয়ে চলুন।
- হেঁটে বা সাইকেলে গেলে স্থানীয়/রিসোর্ট থেকে জেনে যাবেন ভাটার সময় কখন।
- পশ্চিম বিচ থেকে বিকেলে ট্রলার রিজার্ভ করে গেলে আসার সময় সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে আসতে পারবেন।
- চেষ্টা করবেন ২টার মধ্যে ছেঁড়াদ্বীপের উদ্দ্যেশ্য ট্রলারে রওনা দিতে তাহলে বেশি সময় কাটাতে পারবেন।
- প্যাকেজ ট্রলারে করে গেলে সময়ের দিকে লক্ষ্য রাখবেন।
- ছেঁড়াদ্বীপ যাওয়া সবচেয়ে ভালো হয় যদি ভোরবেলা সূর্য উঠার পর পর যেতে পারেন। সূর্যের তেজ বাড়ার আগে আগে ঘুরে চলে আসতে পারবেন। তখন মানুষও কম থাকে।