দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এখানে আছে দেশের অকৃত্রিম সব সৌন্দর্যের উপাদান। এটি কক্সবাজার জেলার একটি উপজেলা, যা কক্সবাজার থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৫৫৯ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সৃষ্টি হয় মহেশখালী দ্বীপ। ৩৬২ দশমিক ১৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি মহেশখালী, সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা- এই চারটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত।
এই দ্বীপ মহেশখালীর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কয়েকটি শব্দ, যেমন মিষ্টি পান, চিংড়ি, লবণ ও মুক্তা চাষ। চলতি পথেই দেখতে পাবেন পানের বরজ ও লবণের মাঠ। মহেশখালিতে আদিনাথ নামে একটি মন্দির আছে। লোকমুখে প্রচলিত আছে এই আদিনাথ মন্দির নির্মান হবার সঙ্গে মহেশখালি নামের সম্পর্ক আছে। সেই আদিনাথ মন্দির এখন সাগরবেষ্টিত মহেশখালী দ্বীপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৫ দশমিক ৩ মিটার বা ২৮০ ফুট উঁচুতে মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত মন্দিরটিতে উঠতে হয় ৬৯টি সিঁড়ি বেয়ে। এই উচ্চতা থেকে চারপাশে দ্বীপের প্রায় পুরোটাসহ চোখে পড়ে ম্যানগ্রোভ বন, পানের বরজ ও ফেনীল বঙ্গোপসাগর।
প্রতি বছর ফাল্গুনে এখানে চলে শিব চতুর্দশী মেলা। এ সময় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে ভিড় জমান হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এছাড়া এখানে রয়েছে বৌদ্ধ বিহার, জলাবন ও নানা প্রজাতির পশুপাখি। মন্দিরে দেখা মেলে বিরল প্রজাতির এক পারিজাত ফুলগাছের, যেটিকে মনে করা হয় সকল মনস্কামনা পূরণাকারী।
শুটিং ব্রিজ নামের নান্দনিক একটি ব্রিজও রয়েছে এখানে। এই ব্রিজ দিয়ে গোলপাতা, সুন্দরী বন, পানের বরজ ও লবণের মাঠ দেখতে দেখতে চলে যাওয়া যায় ওপারের ঝাউবাগান ও চরপাড়া সৈকতে। মহেশখালীর আরও একটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে এর ডকইয়ার্ডের অদূরে গরকঘাটায় অবস্থিত রাখাইনপাড়ার বৌদ্ধবিহারটি। এর সীমানার ভেতর রয়েছে তামায় গড়া একই রকম দেখতে দুইটি প্যাগোডা, কয়েকটি ভবন এবং বিশালাকৃতির বেশ কিছু বৌদ্ধমূর্তি।
এ ছাড়া দ্বীপের ভেতরে দেখার মতো আরও আছে লিডারশীপ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ক্যাম্পাস, উপজেলা পরিষদ দীঘি, গোরকঘাটা জমিদারবাড়ী, চিংড়ি ঘের, লবণ মাঠ, শুঁটকি মহাল এবং মুদির ছড়ার ম্যানগ্রোভ বন।
কখন যাবেন
সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুর্যোগপ্রবণ থাকায় এসময় এখানে না যাওয়ায় ভালো। এখানে ভ্রমণের সেরা সময় হচ্ছে শীতের শুরু এবং বসন্তের সময়টা। ঠান্ডা রোদ আর শিশির ভেজা বালুকাবেলার সঙ্গে পূর্ণিমা রাত ও ফানুস উৎসব ভ্রমণের আনন্দকে পূর্ণতা দিবে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা বা দেশের অন্যান্য জায়গা থেকে যেতে চাইলে প্রথমে কক্সবাজার আসতে হবে। ঢাকার যাত্রাবাড়ি, মালিবাগ, কলাবাগান, ফকিরাপুল, মহাখালী অথবা গাবতলী থেকে পাওয়া যাবে কক্সবাজারের বাস। মানভেদে এগুলোর সিট ভাড়া নিতে পারে মাথাপিছু ৯০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা।
কক্সবাজার শহরে পৌঁছে এবার সরাসরি চলে যেতে হবে মহেশখালী যাবার জেটি বা ৬ নম্বর ঘাটে। এখান থেকে স্থানীয় ট্রলার বা স্পিডবোটে জনপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা ভাড়ায় মহেশখালী পৌঁছে দেয়। বড় গ্রুপ হলে পুরো স্পিডবোট রিজার্ভ নেওয়া যেতে পারে। স্পিডবোটে সময় লাগতে পারে ২০ মিনিট, আর সেলুনৌকা বা ট্রলারে সময় নেবে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট।
মহেশখালী আসার পর এবার সবকিছু ঘুরে দেখতে রিকশা, অটো কিংবা ইজিবাইক ভাড়া করা যায়। পাহাড়ি দ্বীপটি একদিনেই ঘুরে দেখা সম্ভব, তাই দরদাম করে স্থানীয় যে কোনো পরিবহন ভাড়া করে নেওয়া যেতে পারে।
সতর্কতা
যে কোনো নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় প্রশাসনের প্রয়োজনীয় যোগাযোগ নম্বরগুলো সঙ্গে রাখতে হবে।
দেশের সবচেয়ে দুর্যোগ-প্রবণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে থাকায় মহেশখালী দ্বীপ ভ্রমণের সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এই অঞ্চল ভ্রমণের জন্য আগে থেকে আবহাওয়ার খবর জেনে যাওয়া ভালে।
দর্শনীয় স্থানগুলোতে নির্জন জায়গাগুলো এড়িয়ে সাধারণ গ্রামবাসী বা অন্যান্য পর্যটকদের ভিড়ের মধ্যে থাকাটা শ্রেয়।