• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যে রাজ্য খরগোশের!


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২, ০৮:৪২ পিএম
যে রাজ্য খরগোশের!

খরগোশ আদুরে প্রাণী। দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি পোষা প্রাণী হিসেবেও আকর্ষনীয়। কোলে তুলে এই লোমশ প্রাণীটির গায়ে হাত বুলাতে কে না পছন্দ করে!

বন্য প্রাণী হলেও খরগোশ এখন বনের থেকে বেশি দেখা যায় মানুষের বাসা-বাড়িতে অথবা পোষা প্রাণী কেনা বেচার দোকানে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বনে জঙ্গলে খরগোশের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো না হলেও, সংখ্যায় এরা একেবারে কম না।

পৃথিবীতে খরগোশের রাজ্যও আছে একটি। যেখানে লোকালয়ে তারা ঘুরে বেড়ায় অবাদে, খায় ঘুরেফিরে। তাদের সেখানে অন্য কোনো প্রাণীর শিকারে পরিণত হতে হয় না। বরং মানুষও তাদের সাথে সখ্য করতে বেড়াতে যায় সেই রাজ্যে।

এই রাজ্যটির অবস্থান জাপানের ওকুনোশিমা দ্বীপে। ছোট্ট এই দ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দা একমাত্র খরগোশ। সেখানে মানুষ কেবল পর্যটক এবং রিসোর্টের কর্মীরা। দ্বীপটিতে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায় প্রায় ১ হাজার খরগোশ। প্রতিনিয়তই খরগোশের সংখ্যা বাড়ছে সেখানে। তবে সংখ্যা বাড়লেও তাদের থাকার জায়গার অভাব হবে না। বিশাল এলাকা উন্মুক্ত শুধু তাদের জন্যই।

ওকুনোশিমা দ্বীপে শুরু থেকেই কিন্তু এতো পরিমাণে খরগোশ ছিল না। বলা হয়ে থাকে প্রথমে সেখানে খরগোশ ছিল পরীক্ষাগারের টেস্ট অবজেক্ট হিসেবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জেনেভা প্রটোকলে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র তৈরী করা হতো এই দ্বীপটিতে। আর সেই অস্ত্র প্রাণীদেহে কাজ করে কিনা তা যাচাই করা হতো খরগোশের দেহে পরীক্ষা চালিয়ে। যুদ্ধে জাপান হেরে যাওয়ার পর সব কারখানা ও পরীক্ষাগার বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বেঁচে থাকা খরগোশগুলোকে দ্বীপে অবমুক্ত করে যায় কর্মীরা।

তবে জাপানি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এলিস ক্রাউস এই তত্ত্বকে বিশ্বাস করেন না। তার মতে পরীক্ষাগারের সব খরগোশকে আমেরিকানরা মেরে ফেলেছিল। তাহলে এতো খরগোশ এখানে আসে কীভাবে?

এই প্রশ্নের আরেকটি জবাব আছে। বলা হয় একবার একটি স্কুলের বাচ্চারা বেড়াতে যায় সেই দ্বীপে। তখন তারা আটটি খরগোশ অবমুক্ত করে সেখানে। আর সেই আটটি খরগোশ বেড়ে আজ ১ হাজার হয়েছে।

খরগোশ দেখার জন্য পর্যটকরা যেতে পারেন সেই দ্বীপে এবং প্রয়োজনে লম্বা ছুটিও কাটিয়ে আসতে পারেন, তবে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া যায় না। সেখানে পর্যটকদের ঘিরে থাকে নাদুস-নুদুস সব খরগোশ। তবে খরগোশ ধরা নিষেধ, বাড়িতেও নিয়ে যাওয়া যায় না তাদের। তাছাড়া নিজের পোষা খরগোশও সেখানে ছাড়া যায় না। দ্বীপের খরগোশদের নিরাপদ রাখার জন্যই এই সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের।

পাশাপাশি খরগোশের খাবার পানির জায়গায় নিয়মিত পানি ঢালার নির্দেশনাও দেওয়া আছে পর্যটকদের জন্য। রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির কারণে দ্বীপটির ভূগর্ভস্থ পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। সেকারণে পানির জন্য পর্যটকদের দ্বারস্থ হতে হয় খরগোশগুলোকে।

এই দ্বীপে ঘুরতে যাওয়া মানুষের জন্য অবশ্যই আনন্দের। তবে খরগোশের জন্য মানুষরা বিপজ্জনক হয়ে ওঠছে। দ্বীপটিতে গাছপালা কম থাকায় খাদ্যের জন্য খরগোশগুলো মানুষের ওপর নির্ভরশীল কিছুটা। তবে পর্যটকরা অনেকসময় তাদের বেশি খাইয়ে ফেলেন বা আজেবাজে খাবার দিয়ে থাকেন। যার ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে খরগোশগুলো। পর্যটক বেশি হয়ে গেলে তারা বেশি খেয়ে ফেলে, আবার পর্যটক কম থাকলে বা আবহাওয়া খারাপ থাকলে না খেয়ে থাকতে হয় তাদের। তবে এখন পর্যন্ত খরগোশরা সেখানে ভালোই আছে।

Link copied!