খাগড়াছড়ির সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে নয়নাভিরাম নানান দৃশ্য। প্রকৃতি এখানে তৈরি করেছে নজরকাড়া হাজারো চিত্র। চারপাশে বিছিয়ে রাখা শুভ্র মেঘের চাদরের নিচে রয়েছে সবুজ বনরাজিতে ঘেরা ঢেউ খেলানো অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়। এর মধ্য দিয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা সড়ক। পাহাড়ের বুক চিরে আপন মনে বয়ে চলেছে নাম না জানা নদ-নদী ও ঝরনাধারা।
খাগড়াছড়ির সর্বোচ্চ চূড়া আলুটিলা, যার উচ্চতা সমতল থেকে প্রায় ১ হাজার ফুট ওপরে। আলুটিলার পার্বত্য চূড়া পর্যটনকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে ৬ কিলোমিটার দূরের খাগড়াছড়ি শহরের দৃশ্য সত্যিই উপভোগ করার মতো। আলুটিলায় রয়েছে রহস্যময় এক সুড়ঙ্গ। প্রায় সাড়ে তিন শ ফুট নিচে পাহাড়ের তলদেশে এ সুড়ঙ্গের দীর্ঘ প্রায় ৩০ ফুট। প্রতিদিন পর্যটকরা এই রহস্যময় সুড়ঙ্গ দেখতে আসেন। অন্ধকার সুড়ঙ্গে মশাল জ্বালিয়ে প্রবেশ করতে হয়।
খাগড়াছড়ির হৃদয় মেম্বার পাড়ায় রয়েছে প্রাকৃতিক ঝরনা ‘রিছাই ঝরনা’। এ ঝরনা দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষের ভিড় জমে। মহালছড়ির মাইচছড়িতে পাহড়ের প্রায় ১৩০০ ফুট চূড়ায় রয়েছে দেবতা পুকুর (ত্রিপুরা ভাষায় যা মাতাই পুখরী) নামে পরিচিত। চারদিকে মালভূমি দ্বারা পাহাড়বেষ্টিত হওয়ায় দেবতা পুকুরকে সমতল ভূমিতে মনে হয়। এ পুকুরের পানি কখনো কমে না। খাগড়াছড়ি জেলার সীমান্ত শহর রামগড়। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বাংলাদেশ-ভারত সীমারেখায় ফেনী নদী। বাংলাদেশ রাইফেলস অর্থাৎ বিডিআরের ‘জন্মস্থান’ এখানে। রয়েছে কৃত্রিম লেক ও ঝুলন্ত সেতু। মানিকছড়িতে রয়েছে মার্মা চিফের প্রায় তিনশ বছরের প্রাচীন রাজবাড়ি ও জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্ক।
ঢাকা থেকে সরাসরি গাড়িতে করে খাগড়াছড়ি আসা যায়। প্রতিদিন খাগড়াছড়ির উদ্দেশে ঢাকার কমলাপুর ও ফকিরাপুল থেকে দিনে ও রাতে বহু বিলাসবহুল গাড়ি ছেড়ে যায়। খাগড়াছড়িতে রয়েছে পর্যটকদের থাকার জন্য পর্যটন মোটেল, জেলা প্রশাসনের সার্কিট হাউস ও উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও বন বিভাগের রেস্টহাউস ছাড়াও উন্নত মানের বেশ কিছু বেসরকারি আবাসিক হোটেল।
জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, খাগড়াছড়িতে দেখার মতো যেমন আকর্ষণীয় স্পট রয়েছে, তেমনি পর্যটকদের থাকার জন্য সুব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, “খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলোর উন্নয়নে জেলা পরিষদ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে খাগড়াছড়ি হবে দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র।”
আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র
সৌন্দর্যের ঐশ্বর্যময় অহংকার খাগড়াছড়ি শহরের প্রবেশপথ আলুটিলা। জেলা সদর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এ আলুটিলা। প্রায় হাজার ফুট উঁচু এ ভূনন্দন বিন্দুটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম ব্যতিক্রমধর্মী পর্যটন স্পট। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক, পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রে দর্শনার্থীদের বসার জন্য পাকা বেঞ্চ, বিশ্রামের জন্য পাকা ছাউনি, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার করা হয়েছে। এ টিলার মাথায় দাঁড়ালে শহরের ভবন, বৃক্ষশোভিত পাহাড়, চেঙ্গী নদীর প্রবাহ ও আকাশের আল্পনা মনকে অপার্থিব মুগ্ধতায় ভরে তোলে। চোখে পড়ে আঁকাবাঁকা ঢেউ তোলা সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে কালো পিচঢালা রাস্তা। পাহাড়ি জুমিয়াদের ছোট ছোট মাচার তৈরি জুমঘর। আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্য বৌদ্ধবিহার আর সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি চমৎকার ডাকবাংলোও রয়েছে এখানে।
আলুটিলার সুড়ঙ্গ বা রহস্যময় গুহা
গা ছমছম করা অনুভূতি নিয়ে পাহাড়ি সুড়ঙ্গপথ বেয়ে পাতালে নেমে যাওয়া কল্পনার হলেও আলুটিলার সুড়ঙ্গ কল্পনার কিছু নয়। পাহাড়ের পাদদেশ বেয়ে গুহার মুখ পর্যন্ত যেতে দর্শনার্থীদের একসময় খুব কষ্ট হলেও এখন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে সেখানে পাকা সিঁড়ি করে দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমেই সেই স্বপ্নিল গুহামুখ। আলুটিলা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮২ ফুট। জমকালো অন্ধকার এ গুহায় আগুনের মশাল নিয়া ঢুকতে হয় কিছুটা সাহস নিয়েই। গুহায় আলো-আঁধারির মাখামাখিতে এক অপরূপ দৃশ্যের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। রহস্যের উৎস প্রাকৃতিক এ সুড়ঙ্গের ভেতরটা দেখলে অবিশ্বাস্য বিস্ময়ে মন হতবাক হয়ে যায়। মনে হয় যেন নিখুঁতভাবে ছেনি দিয়ে পাহাড় কেটে কয়েক হাজার দক্ষ কারিগর এ গুহাটি তৈরি করেছে।
দেবতা পুকুর
জেলা সদর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি সড়কের কোল ঘেঁষে অবস্থিত মাইচছড়ি এলাকার নুনছড়ি মৌজার আলুটিলা পর্বতশ্রেণি থেকে সৃষ্ট ছোট্ট নদী নুনছড়ি। নুনছড়ি নদীর ক্ষীণ স্রোতের মাঝে রয়েছে প্রকাণ্ড পাথর। স্বচ্ছ জলস্রোতে স্থির পাথর মোহিত করে, প্রকৃতির অপূর্ব সাজে মুগ্ধতায় শিহরিত হয় মন। সমুদ্র সমতল থেকে ৭০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় দেবতার পুকুর রূপকথার দেবতার আশীর্বাদের মতো সলিল সঞ্চার। পাঁচ একর আয়তনের এ পুকুরটির স্বচ্ছ জলরাশির মনভোলা প্রশান্তি মুহূর্তের মধ্যে পর্যটকদের হৃদয় মন উদাস করে দেয়। পুকুরের চতুর্দিকে ঘন বন, যেন সৌন্দর্যের দেবতা বর নিয়ে দাঁড়িয়ে। কথিত আছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের জল তৃষ্ণা নিবারণের জন্য স্বয়ং জল-দেবতা এ পুকুর খনন করেন। পুকুরের পানিকে স্থানীয় লোকজন দেবতার আশীর্বাদ বলে মনে করে। প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নর-নারী পুণ্য লাভের আশায় পুকুর পরিদর্শনে আসে।
ভগবান টিলা
জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলা থেকে সোজা উত্তরে ভারত সীমান্তে অবস্থিত ভগবান টিলা। জেলা সদর থেকে এর কৌণিক দূরত্ব আনুমানিক ৮৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। ঘন সবুজের ভেতর আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে যতই এগিয়ে যাওয়া যায়, পাহাড়ের অপরূপ নৈসর্গ সবাইকে বিমোহিত করে। এ যেন বিধাতার নিজ হাতে গড়া পর্বত রূপসী। সমুদ্রতল থেকে প্রায় ১৬০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এ টিলা সম্পর্কে কথিত আছে, এত উঁচু টিলায় দাঁড়িয়ে ডাক দিলে স্বয়ং স্রষ্টাও ডাক শুনতে পাবেন। প্রাচীন লোকজন এ টিলাকে ‘ভগবান টিলা’ নামকরণ করেছিলেন। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিজিবির একটি আউট পোস্টও আছে এখানে। সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের দাঁড়ালে মনে হয়, আপন অস্তিত্ব শূন্যের নিঃসীমতায় হারিয়ে গেছে। ঘন সবুজ বাঁশের ঝোপ, নাম না জানা পাখির ডাক, পাহাড়ের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝরনার কলকল শব্দ—সবকিছু মিলিয়ে হারিয়ে যাওয়ার এক অনন্য লীলাভূমি।
দুই টিলা ও তিন টিলা
প্রকৃতির এক অপূর্ব বিস্ময় এই দুই টিলা ও তিন টিলা। জেলা সদর থেকে মাত্র ৪২ কিলোমিটার দূরে খাগড়াছড়ি-দিঘীনালা-মারিশ্যা রাস্তার কোল ঘেঁষে এই টিলায় দাঁড়ালে ভূগোল বিধৃত গোলাকৃতি পৃথিবীর এক চমৎকার নমুনা উপভোগ করা যায়। পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে যেদিকে চোখ যায়, মনে হয় যেন পৃথিবীর সমস্ত সবুজের সমারোহ এখানেই সমষ্টি বেঁধেছে। এই টিলার অচেনা দৃশ্য যেন ক্যানভাসের ওপর কোনো বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর তুলির আঁচড়।
আলুটিলার রিচাং ঝরনা (মারমা ভাষা)
জেলা সদর থেকে আলুটিলা পেরিয়ে সামান্য পশ্চিমে মূল রাস্তা থেকে উত্তরে ঝরনাস্থলের দূরত্ব সর্বসাকল্যে প্রায় ১১ কিলোমিটার ঝরনার সমগ্র যাত্রাপথটাই দারুণ রোমাঞ্চকর। এটি রিচাং ঝরনা নামে পরিচিত। দূরের উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়, বুনো ঝোপ, নামহীন রঙিন বুনো ফুল—এসব নয়নাভিরাম সৌন্দর্য যে কাউকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যায়। ঝরনার কাছে গেলে এক পবিত্র স্নিগ্ধতায় দেহ-মন ভরে ওঠে। হাজার ফুট উঁচু থেকে নেমে আসা স্ফটিক-স্বচ্ছ জলরাশি নির্ঝরের স্বপ্নের মতো অবিরাম প্রবহমান।
বিজিবির জন্মস্থান রামগড়
খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাচীন সীমান্ত শহর রামগড়। এ রামগড় শহরেই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অগ্রযাত্রা শুরু হয়। সে জন্য রামগড়কে বিজিবির জন্মভূমি বলা হয়। স্মৃতিবিজড়িত এ সীমান্ত শহর এবং স্মৃতিস্তম্ভ, বাংলাদেশ ও ভারত বিভক্তকারী ফেনী নদীর দৃশ্যাবলি খুবই মনোমুগ্ধকর। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে উপজেলা পরিষদের সামনে নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন স্পট। রাঙামাটির আদলে নির্মিত ঝুলন্ত সেতু, বোটানিক্যাল গার্ডেন, কৃত্রিম লেক, দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ শহীদ মিনার সবকিছু মিলিয়ে হঠাৎ করে রামগড়কে ইউরোপের কোনো একটি সিটির মতো মনে হয়।
সীমান্তবর্তী রামগড় চা-বাগান
খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় সীমান্তের গা ঘেঁষে খাগড়াছড়ি-ফেনী সড়কের দুই ধারে গড়ে উঠেছে বিশাল চা-বাগান, যা খাগড়াছড়ির পর্যটনশিল্পকে করেছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাগড়াছড়ি জেলায় আসা ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের স্বাগত জানাতে সদা প্রস্তুত। বিশাল এলাকাজুড়ে এই চা-বাগানে এলে পর্যটকরা বুঝতেই পারবে না তারা সিলেটে না খাগড়াছড়িতে আছে।
মানিকছড়ির রাজবাড়ি
খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান মানিকছড়ি মং সার্কেল চিফের (মংরাজা) রাজবাড়ী এবং রাজত্বকালীন স্থাপত্য। রাজার সিংহাসন, মূল্যবান অস্ত্রশস্ত্রসহ প্রত্নতাত্ত্বিক অনেক স্মৃতিবিজড়িত রাজবাড়ি। রাজবাড়ি এবং তৎকালীন রাজার স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন অবদান ছিল উল্লেখ করার মতো। মং রাজার উত্তরাধিকার সূত্র নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ ও জটিলতার কারণে রাজবাড়িটি আজ চরম অবহেলিত।
পর্যটন মোটেল, খাগড়াছড়ি
নির্মাণশৈলীর এক অপূর্ব নিদর্শন খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেল। সাম্প্রতিককালে নির্মিত এ মোটেলটি শহরের প্রবেশমুখেই,পাশে বয়ে গেছে চেঙ্গীর শান্ত স্রোত কোনো এক পূর্ণিমার রাতে চাঁদের নরম আলোয় নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাইলে খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের বিকল্প নেই। সাড়ে ৬ একর জমির ওপরে নির্মিত এ মোটেলে মোট কক্ষসংখ্যা ২৫টি। এর মধ্যে ১৫টি নন-এসি কক্ষ, ৯টি এসি কক্ষ ও ১টি ভিআইপি স্যুট। ১০০ আসনবিশিষ্ট কনফারেন্স কক্ষ ছাড়াও এখানে আছে ৫০ আসনের চমৎকার রেস্টুরেন্ট।
পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র
খাগড়াছড়ি শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার পূর্বেই কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। সবুজের অফুরন্ত সমারোহ আর স্বপ্নিল আবেশে যদি নিজেকে ভুলতে চাইলে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রই আদর্শ স্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি এ কেন্দ্রটি। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী আসে শুধু সবুজের স্নিগ্ধতা মন্থনের আশায়।
শতবর্ষী বটগাছ
মাটিরাঙ্গা উপজেলার খেদাছড়ার কাছাকাছি এলাকায় এ প্রাচীন বটবৃক্ষ শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয়, এ যেন দর্শনীয় আশ্চর্যের কোনো উপাদান। পাঁচ একরের অধিক জমির ওপরে এ গাছটি হাজারো পর্যটকের কাছে দারুণ আকর্ষণীয়। মূল বটগাছটি থেকে নেমে আসা প্রতিটি ঝুরিমূল কালের পরিক্রমায় এ একটি নতুন বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, ঝুড়ি মূল থেকে সৃষ্ট প্রতিটি বটগাছ তার মূল গাছের সঙ্গে সন্তানের মতো জড়িয়ে আছে। কথিত আছে, এ বটবৃক্ষের নিচে বসে শীতল বাতাস গায়ে লাগালে মানুষও শতবর্ষী হয়।
ঠান্ডা ছড়া
খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণার উল্টা দিকে খাগড়াছড়ি আদর্শ বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে পাঁচ মিনিট হেঁটে গেলে একটি পাহাড়ি ছোট নদী। হাঁটুপানির এই নদী ধরে পূর্ব দিকে আরও পাঁচ মিনিট হাঁটলে হাতের ডান দিকে পাহাড় থেকে আসা ছোট ছড়াটিকে দেখতে অনেকটা ড্রেনের মতো মনে হয়। দুই দিকে পাহাড় মাঝখানে ছিকন ছড়া, ওপরে নানা জাতের গাঢ় ছাউনি সব মিলিয়ে একটি সুড়ঙ্গপথের মতো। ধীরগতিতে পা টিপে টিপে ছড়ার ভেতর ঢুকতে হবে। ছড়ার শেষ মাথায় পৌঁছাতে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা লাগবে। পুরো ছড়াটি দেখতে হলে সকালেই স্পটটিতে পৌঁছাতে হবে এবং সঙ্গে দুপুরের খাবার সঙ্গে নিতে হবে। ছড়াটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো গরমের দিনে এর পানি ঠান্ডা থাকে। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে ঠান্ডা ছড়া।
দীঘিনালা শিবছড়ি পাহাড়
সৌন্দর্যের আরেক নাম শিবছড়ি পাহাড়। এটি দীঘিনালা থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে দেওয়ানপাড়া নামক এলাকায় অবস্থিত। ছড়া, নালা, গভীর অরণ্য পেরিয়ে বোয়ালখালী নদীর পাশ ঘেঁষে সুউচ্চ পাহাড়ি ঝরনা ও সৌন্দর্যমণ্ডিত বিভিন্ন পাথরের স্তূপ পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। তা ছাড়া শিবছড়ি পাহাড়ের ৩ কিলোমিটার দূরে সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে ১১ হাত লম্বা ৩৯ হাত চওড়া দুটি স্বল্প আকৃতির কৃষ্ণের শীলা আসন।
হাতির মাথা আকৃতির পাহাড়
প্রকৃতির আরও এক রহস্য হাতির মাথা আকৃতির পাহাড়। খাগড়াছড়ির পেরাছড়া গ্রামে অবস্থিত পাহাড়টিকে দেখতে হাতির মাথার মতো মনে হয়। কয়েকটি ছোট ছোট পাহাড় পার হয়ে ৩০-৩৫ ফুট উচ্চতার এই পাহাড়টিকে দেখতে হয় লোহার সিঁড়ি বেয়ে। এই সিড়িতে ওঠা মানে হাতির শুঁড়ের ওপরে ওঠা আর সামনে চলা মানে শুঁড় বেয়ে হাতির মাথায় অর্থাৎ পাহাড়ের মাথায় ওঠা। পাহাড়ে ওঠার পর দেখা যায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য।
পানছড়ি অরণ্য কুঠির
জেলার পানছড়ি উপজেলায় নির্মিত হয়েছে এই শান্তি অরণ্য কুঠির। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধমূর্তি, যা দেখার জন্য ভিড় করছে শত শত পর্যটক।
দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে খাগড়াছড়ি পৌর এলাকায় নির্মিত খাগড়াছড়ি গেট, ভাস্কর্য, ম্যুরালসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থাপনা সবার দৃষ্টি কেড়েছে। এ দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলো খাগড়াছড়ি শহরের সৌন্দর্য অনেকাংশে বৃদ্ধি করেছে।
আরও অনেক কিছু
এসব স্থান ছাড়াও মহালছড়ি হ্রদ, দিঘীনালা বড়াদম দিঘি, জেলা সদরের ধর্মপুর আর্য বনবিহার, খাগড়াছড়ি শাহি জামে মসজিদ, দীঘিনালার বনবিহার ইত্যাদি চমৎকার দর্শনীয় স্থান। জেলার একমাত্র স্টেডিয়ামটি দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান বললে মোটেই অত্যুক্তি হবে না। কেননা, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তি চুক্তির পরেই বহুল আলোচিত শান্তিবাহিনীর অস্ত্রসমর্পণ অনুষ্ঠান হয়েছিল ঐতিহাসিক খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামেই।