পরিসংখ্যান মতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজবাড়িটির নাম ভাওয়াল রাজবাড়ি। ঢাকার খুব কাছে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে এই রাজবাড়িটির অবস্থান। হাতে অল্প সময় থাকলেই ঘুরে আসতে পারেন রাজবাড়িটি থেকে। ৫ একর জায়গায় ওপর দাঁড়িয়ে থাকা রাজবাড়িটি প্রাচীন নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম।
ভাওয়াল রাজবাড়ি নির্মাণকাজের শুরু লোক নারায়ণ রায়ের হাত ধরে হলেও শেষ করেন রাজা কালী নারায়ণ রায়। ‘বাংলার রেল ভ্রমণ’ বইতে (এল.এন. মিশ্র প্রকাশিত ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে ক্যালকাটা ১৯৩৫) পাওয়া যায়, ১৮৯০ সালে নির্মিত হয়েছে রাজবাড়িটি। এই বিশাল আকারের ও অক্ষত রাজবাড়িটি উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত এর দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার এবং ত্রিতল বিশিষ্ট পরিকল্পনায় আকারে নির্মিত। দক্ষিণ দিকে বর্গাকার মূল প্রবেশ দ্বার। এর ৪ কোণে ৪টি গোলাকার স্তম্ভ স্থাপন করে উপরে ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবেশ দ্বারের পরে একটি প্রশস্ত বারান্দা রয়েছে এর পর হলঘর।
এই বাড়ির সিঁড়ি বানানো হয়েছে ঐতিহ্যবাহী শাল কাঠ দিয়ে। রয়েছে আবাসনের জন্য নির্মিত বারান্দাযুক্ত কক্ষ। বারান্দা গুলিতে দেখা যায় করিন্থিয়াস স্ত্তম্ভের উপর অর্ধ বৃত্তাকার খিলান। এই ভবনের আকর্ষণীয় বিষয় হল উপরে ফাকাঁ লম্বাটে নকশা, স্তম্ভে ফুল, লতা ও লম্বা টানা নকশা ছিল। রাজবাড়িটির উত্তর প্রাঙ্গণের ছিল নাটমন্দির। জানা যায়, রাজবাড়ীর প্রায় সব উৎসবের কাজে ব্যবহৃত হত এই নাটমন্দির। বিশাল এই রাজবাড়ির সীমানায় পশ্চিমাংশের দুতলা ভবনের নাম রাজবিলাস। এই ভবনটি মূলত জমিদারদের মনোরঞ্জনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এ ভবনের নিচের তলায় ‘হাওয়া মহল’ নামে রাজার বিশ্রামাগার ছিল। দক্ষিণ পাশে উন্মুক্ত কক্ষ ছিল, নাম ‘পদ্মনাভি’। ভবনের দুতলার মধ্যবর্তী একটি কক্ষ ‘রানীমহল’ নামে পরিচিত। সবমিলিয়ে এই রাজবাড়ীতে ৩৬০টি কক্ষ আছে।
জয়দেবপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ীটি নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা আছে। ভাওয়াল পরগনার রাজা ভাওয়ালের মেজো রাজকুমার রমেন্দ্রনারাণ দার্জিলিংয়ে থাকাকালীন মারা গেছেন বলে গুজব ছড়ায়। কিন্তু তার প্রায় ১২ বছর পর সাধু পরিচয়ে এক ব্যক্তি ঢাকায় আসেন এবং কিছুদিন পর তিনি নিজেকে ভাওয়ালের মেজো রাজকুমার রমেন্দ্রনারাণ বলে দাবী করেন। তারপর শুরু হয় মামলা। মালমাটি শুরু হয়েছিল ১৯৩০ সালে এবং শেষ হয়েছিল ১৯৪৬ সালে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিয়ে উত্তম কুমার অভিনীত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘সন্নাসী রাজা’ নির্মিত হয়।
যেভাবে যাবেন
দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে প্রথমে গাজীপুর চৌরাস্তায় আসতে হবে। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ডান দিকে মোড় নিয়ে শিবপুড় মোড় হয়ে ভাওয়াল রাজবাড়ি সড়ক ধরে পূর্ব দিকে এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন ভাওয়াল রাজবাড়ি।