ঢাকা শহরের ঘিঞ্জি পরিবেশ থেকে বের হয়ে অনেকেই প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে চান। সেজন্য চোখ যায় হয়ত দূর দুরান্তের সবুজের দেশে। কিন্তু সময়ের অভাবে আর যাওয়া হয় না। তবে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে দূর দুরান্তে না চেয়ে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার মীরপুরে। মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর চারপাশে দেশি-বিদেশী গাছগাছালির মিলনমেলা যেখানে, বলছি গবেষণা ও প্রদর্শনের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের কথা। এটি বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। দর্শনার্থীদের কাছে এটি বোটানিক্যাল গার্ডেন কিংবা বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম নামেও পরিচিত।
অবস্থান
বাংলাদেশের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ঢাকার মীরপুর-১ এ জাতীয় চিড়িয়াখানার পাশে অবস্থিত।
উদ্যানের ইতিহাস
১৯৬১ সালে ঢাকার মিরপুরে ২০৮ একর আয়তনের জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান। ১৯৭৩ সালে এই উদ্ভিদ উদ্যানে আন্তর্জাতিক উদ্যান নামে গবেষণা ও দর্শনের জন্য একটি বিভাগ চালু করা হয়। যেখানে মালেশিয়ার ওয়েল পাম, অস্ট্রেলিয়ার সিলভার ওক, জাপানের কর্পুর, থাইল্যান্ডের রামবুতামসহ বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। ১৯৮০ সালে উদ্যানের প্রায় ৩.৫ একর জায়গাজুড়ে তৈরি করা হয় দুটি পৃথক গোলাপ ফুলের বাগান। এসব বাগানে মিনিয়েচার ফ্লোরইয়ান্ডা, ডাবল ডিলাইট, পুলিয়েন্থাসহ প্রায় ২০০ প্রজাতির গোলাপ গাছ লাগানো হয়।। ১৯৮০-৮১ সালে দেবদারু ও ইউক্যালিপটাস বাগান তৈরি করা হয়।
বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রকৃতি প্রেমী ও দর্শনাথীদের জন্য রয়েছে নানা আয়োজন। ফুল গাছ, ফল গাছ, ওষুধি, দুইটি গোলাপ বাগানসহ রয়েছে ১১টি লেক-জলাশয়। ১১৭টি গোত্রভুক্ত ও ৫০ হাজার প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, দেশি-বিদেশী গাছপালার সমন্বয়ে গঠিত এই উদ্যান। আরো আছে বিলুপ্তপ্রায় নানা প্রজাতির গাছ। যেগুলো উদ্যানে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তারই মধ্যে রয়েছে ২৫৫ প্রজাতির ২৮,২০০টি বৃক্ষ, ৩৮৫ প্রজাতির ১০,৪০০টি বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ, ৩১০ প্রজাতির ৮,৪০০টি গুল্ম, ৬৬৫ প্রজাতির বিদেশী উদ্ভিদ ও ২২ প্রজাতির একটি বিশাল বাঁশবাগান।
এছাড়াও দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে ২টি ওয়াচ টাওয়ার, ৮টি গণশৌচাগার, ৩টি স্ন্যাক্স কর্নার, এবং ১টি গ্রন্থাগার। রয়েছে প্রজাপতির প্রজনন কেন্দ্ররূপে পরিচিত গোলাকৃতির পদ্মপুকুর। উদ্যানে পরিশ্রান্ত দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে ক্যামেলিয়া ও পদ্ম নীড় নামে বিশ্রামাগার।
যাবেন যেভাবে
বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাওয়ার জন্য একাধিক পথ রয়েছে। যেকোনও ভাবে মীরপুর -১ এ চলে যাবেন। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা রিকশায় চড়ে চলে যান বোটানিক্যাল গার্ডেনে।
ঢাকার সদরঘাট থেকে মিরপুর ইউনাইটেড সার্ভিস, তাঞ্জিল পরিবহনসহ বেশ কিছু পরিবহন মিরপুর ১/বোটানিক্যাল গার্ডেনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ২৫-৩০ টাকা।
ঢাকার গাবতলী থেকে ১০-১৫ টাকার বিনিময়ে লেগুনা কিংবা টমটমে চড়েও যাওয়া যাবে।
আবার উত্তরা থেকেও বাসে করে মীরপুর-১ এ যাওয়া যায়।
দর্শনের সময়সূচি ও ফি
মার্চ-নভেম্বর মাস সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এবং ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি মাস সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪:৩০ পর্যন্ত উদ্ভিদ উদ্যান খোলা থাকে।
১২ বছরের বেশি বয়সীদের জনপ্রতি প্রবেশ ফি ৩০ টাকা। ১২ বছরের নিচে প্রতিজনের প্রবেশ ফি ১৫ টাকা এবং ০-৫ বছর বয়সী শিশুরা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারবে।
এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে আগত ১০০ জন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য দলগত ফি ১ হাজার টাকা, ১০১ থেকে ২০০ জনের দল হলে ফি ১ হাজার ৫০০ টাকা। বিদেশী পর্যটকদের জন্য জনপ্রতি প্রবেশ ফি ৫০০ টাকা বা সমপরিমাণ ডলার।