• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শ্রীমঙ্গলের ‘চা-কন্যা ভাস্কর্য’


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২২, ০৪:৪৩ পিএম
শ্রীমঙ্গলের ‘চা-কন্যা ভাস্কর্য’

চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গল। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় পানীয় চা। আর চা উৎপাদনে বাংলাদেশের মধ্যে শ্রীমঙ্গল জনপ্রিয়। দুটি পাতা একটি কুঁড়ির বিস্ময়কর চমক চা। বিশ্বের বুকে এই চমক আবিষ্কারের পর থেকেই চায়ের স্বাদে মেতে থাকছে চা-প্রেমীরা।

বাঙালির ঘরে ঘরেই এখন চায়ের সঙ্গে সখ্যতা। বন্ধুদের আড্ডায়, অতিথি আপ্যায়নে কিংবা অবসাদ কাটাতে চায়ের বিকল্প নেই। চায়ের কাপে প্রতিটি চুমুকেই তৃপ্ততা মেলে।

চায়ের স্থান শ্রীমঙ্গল। যেখানে ঢুকতেই চোখে পড়বে চা-কন্যার ভাস্কর্য। যেখানে লেখা রয়েছে ‘চায়ের দেশে স্বাগতম’। এখানেই শুরু প্রকৃতির সৌন্দর্য। শ্রী আর মঙ্গলে নিহিত শ্রীমঙ্গলে রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ সাজ। সবুজ শ্যামলের সমারোহে ভরপুর।

শ্রীমঙ্গলের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে চায়ের বাগান। পুরো অঞ্চলজুড়েই রয়েছে শুধু চা-বাগান। শ্রীমঙ্গলকে তাই দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশও বলা হয়।

দেশের অধিকাংশ চা-বাগান শ্রীমঙ্গলের চারদিকেই অবস্থিত। সেই সঙ্গে রয়েছে লেবু ও আনারসের বাগানও। পথের ধারেই ছোট-বড় আনারস বিক্রি হচ্ছে। চায়ের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে লেবু ও আনারসের কদরও কিন্তু কম নয়।

বৃহত্তর সিলেটের প্রায় মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ছোট্ট এই শহরটি, যার চারপাশ পাহাড় ও চা-বাগানে বেষ্টিত রয়েছে। সড়ক বা রেলপথে ঢাকা থেকে যাওয়া যাবে শ্রীমঙ্গলে। পাহাড় ও চা-বাগানের বুক চিরে আঁকাবাঁকা পথ ধরেই গন্তব্যে পৌঁছাবে প্রকৃতিপ্রেমীরা।

শ্রীমঙ্গলে পৌঁছে যাওয়ার বার্তা মিলবে চা-কন্যার ভাস্কর্য দেখেই। সাদা রঙের ভাস্কর্যটি ফুটে উঠেছে বিশাল জায়গাজুড়ে। ভাস্কর্যের চারপাশেই চা-বাগানে ঘেরা।

শ্রীমঙ্গলের প্রবেশদ্বারে নির্মাণ করা হয়েছে অপরূপ সাজে সজ্জিত এক ‘চা-কন্যার ভাস্কর্য’। স্থানীয়রা জানান, পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত শ্রীমঙ্গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আকর্ষণীয় করে তুলতেই এই ‘চা-কন্যার ভাস্কর্য’ নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে চা-শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।

দেশের সব চা-শ্রমিকের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা সবই যেন মিলেমিশে রয়েছে ‘চা-কন্যা ভাস্কর্যটি’তে। মনমুগ্ধকর এই ভাস্কর্যটির সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি পর্যটক সেখানে ভিড় করেন। ক্যামেরাবন্দী করেন নিজেদের সেই মুহূর্তকে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিভৃত অরণ্যভূমি শ্রীমঙ্গল এখন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। বিভিন্ন রিসোর্ট বা হোটেলে থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারেন পর্যটকরা। শীতের কুয়াশা হোক কিংবা বর্ষার বৃষ্টির শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য সব সময়ই সুন্দর। সেই অঞ্চল সম্পর্কে, অঞ্চলের চা-শ্রমিকদের জীবন সম্পর্কে পর্যটকদের আগ্রহও বেড়ে চলেছে।

কোথায় এই ‘চা-কন্যার ভাস্কর্য’

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে হবিগঞ্জ জেলার শেষ সীমান্তে এবং মৌলভীবাজার জেলার প্রবেশদ্বারের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার আমতলী চা-বাগানসংলগ্ন মুছাই বাজার। এখানেই শ্রীমঙ্গলের প্রবেশপথ। সেই রাস্তার বাঁ পাশে অবস্থিত ‘চা-কন্যার ভাস্কর্য’।

চা-কন্যার ভাস্কর্যের নেপথ্যে

২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাস। শুরু হয় ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকেই শেষ হয়। চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির প্রকৌশলী সঞ্জিত রায়ের হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় নির্মিত হয় চমৎকার এই শিল্পকর্মটি। প্রায় ২৪ ফুট উঁচু এই ভাস্কর্যটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এক নারী চা-শ্রমিককে। যার কোমল হাতে চা পাতা তোলার মনোমুগ্ধকর প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।

ভাস্কর্যটির অপরূপ সৌন্দর্য আর কারুকাজে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে শ্রীমঙ্গলের পরিবেশ ও প্রতিচিত্রের রূপ। সেই সঙ্গে কারুশিল্পকারের হাতের নৈপুণ্যতারও প্রমাণ মিলেছে এই ভাস্কর্যে। চা-বাগান এবং চাশিল্পের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত নারী চা-শ্রমিকরা। এই বিষয়কে শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে এই ভাস্কর্যে। প্রকৃতিপ্রেমীরাও মনোরোম এই দৃশ্য উপভোগ করেন প্রতিদিন।

Link copied!