ছয় বল ৯ রান, জয়ের জন্য খুলনার সমীকরণ। প্রথম বলে সিঙ্গেল হওয়ার শেষ ওভার করতে আসা মেহেদী হাসান মিরাজের দ্বিতীয় বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন সোহান। কিন্তু সেই ক্যাচ তো নিতেই পারেননি বরং সেটা থেকে চার রান যোগ হয়েছে খুলনার স্কোরবোর্ডে। এরপরের বলেই মিড উইকেট দিয়ে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে খুলনার জয় নিশ্চিত করেন সোহান।
এর আগে শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য খুলনার প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান। ১৮তম ওভার করা করিম জান্নাতের ওভারে ৯ রান আসলে দুই ওভারে ২৬ রানের সমীকরণ দাঁড়ায় খুলনার। এরপর বরিশালের পেসার ইবাদতের করা ১৮তম ওভারে দুই ছক্কায় ১৭ নিয়ে জয়ের রাস্তা সহজ করে ফেলেন খুলনার দুই ব্যাটার মাহমুদুল হাসান জয় ও হাবিবুর রহমান সোহান।
শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এই ম্যাচে বরিশালের বিপক্ষে খুলনার জয় এসেছে ছয় উইকেটের ব্যবধানে। পুরো টুর্নামেন্টে এটা তাদের তৃতীয় জয়। অন্যদিকে আগেই প্লে অফ নিশ্চিত হওয়ার বরিশাল এ নিয়ে রবিন রাউন্ড লিগে পাঁচটি ম্যাচ হারলো।
টসে একদফা চমকের ব্যাটিংয়ে নেমে আরেক দফা চমকানোর পালা। ফরচুন বরিশালের একাদশে থাকলেও সাকিব আল হাসানের জায়গায় টস করতে এলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সে পর্যন্ত তাও ঠিক ছিল, এরপর যেটা হলো সেটা যেন সব সীমা অতিক্রম করলো। এনামুল হক বিজয়ের সাথে ওপেনিং করতে এলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
তবে পজিশনের পরিবর্তন হলেও রিয়াদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি আজও। দলীয় ১৪ রানে যখন ফিরেছেন তখন তার নামের পাশে মাত্র ৯ রানের ইনিংস। তিন নম্বরে নামা চতুরঙ্গা ডি সিলভাও এদিন ইনিংস বড় করতে পারেননি। এক ছক্কা ও এক চারে ফিরেছেন মাত্র ১৪ রান করে।
চার নম্বরে নেমে ঝড়ো শুরু করেছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু তিনিও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ। ফিরেছেন এক চার ও দুই ছক্কায় ১৪ বলে ২২ রান করে। অন্যপাশে তখন ধীরেসুস্থে খেলছিলেন এনামুল হক বিজয়।
সাকিব ফেরার মাত্র এক রানের ব্যবধানে ফিরে যান তিনিও। ২৯ বলে ২৮ রান করা বিজয় ফিরেছেন দলীয় ৭৭ রানে। এরপর দলীয় ১৪৭ রানে ফেরার আগে ১৫ বলে ১ রান করেন ইব্রাহিম জাদরান।
এই ম্যাচেই প্রথমবার বিপিএল খেলতে নেমেছেন দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস। আর অভিষেক ম্যাচেই ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন মিরপুরে।
ইনিংসের শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হওয়ার আগে প্রিটোরিয়াসের ব্যাট থেকে এসেছে ২৯ বলে দুই চার ও চার ছক্কায় ৪৮ রানের ইনিংস। অন্যপ্রান্তে মাত্র ৯ বলে ১৮ রানের ক্যামিও খেলে ইনিংসের শেষ বিদায় নেন করিম জান্নাত। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৬৯ রানের সংগ্রহ পেয়েছিল বরিশাল।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় খুলনা। ওপেনিংয়ে নেমেও রানের দেখা পাননি সাব্বির রহমান। দলীয় ১৩ রানে তাকে ফিরিয়ে দেন বরিশালের প্রোটিয়া পেসার প্রিটোরিয়াস।
অধিনায়ক শাই হোপকে নিয়ে প্রাথমিক চাপ সামলে রানের গতি বাড়ান আরেক ওপেনার অ্যান্ড্রু ব্যালবার্নি। দলীয় ৪৮ রানে হোপ ফিরলে ভাঙে তাদের ৩৫ রানের জুটি।
এরপর চার নম্বরে নামা মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে নতুন জুটি গড়েন ব্যালবার্নি। দলীয় ৭৬ রানে ফেরার আগে ব্যালবার্নি ব্যাট থেকে আসে ৩৩ বলে এক চার ও দুই ছক্কায় ৩৭ রানের ইনিংস।
সঙ্গী হারালেও অন্যপ্রান্তে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন জয়। পাঁচ নম্বরে নেমে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন ইয়াসির আলি। দুজনের ব্যাটে চড়ে জয়ের রাস্তা তৈরি হচ্ছিল খুলনার।
তবে দলীয় ১৩১ রানে ভুল বোঝাবুঝিতে ইয়াসির রান আউট হয়ে ফিরে গেলে খুলনার জয়ের স্বপ্নও ফিঁকে হতে থাকে। তবে খুলনার জয় হাত থেকে ফসকে যেতে দেননি জয় ও সোহান।
শেষ তিন ওভারে ৩৫ রান তুলে খুলনার দারুণ এক রোমাঞ্চকর জয় এনে দেন তারা। মাত্র ৯ বলে দুই চার ও তিন ছক্কায় ৩০ রানের টর্নেডো ক্যামিও খেলেন সোহান। অন্যদিকে জয়ের ব্যাট থেকে আসে ৪৩ বলে পাঁচ চার ও দুই ছক্কায় ৬৪ রান।