• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
এনসিএল

পেসারদের ডিউক বলেও স্পিনার নাবিলের দাপট


পার্থ প্রতীম রায়
প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২২, ১২:২২ এএম
পেসারদের ডিউক বলেও স্পিনার নাবিলের দাপট

ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ডিউক বলে বরাবরই খাবি খায় বাংলাদেশের ব্যাটাররা। সেই আক্ষেপ দূর করতেই জাতীয় ক্রিকেট লিগে (এনসিএল) এবার ব্যবহৃত হয়েছে ডিউক বল। পেসারদের জন্য সুবিধাজনক ভাবা এই ডিউক বলেও উইকেট শিকারীর তালিকায় সবার উপরে এক স্পিনার। তিনি আর কেউ নন, ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ নাবিল সামাদ।

এনসিএলের ২৪তম আসরে সিলেট বিভাগের হয়ে খেলছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। টুর্নামেন্টে চার ম্যাচ খেলে নিজের ঝুলিতে নিয়েছেন ২৫ উইকেট। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ঢাকা বিভাগের পেসার সুমন খানের চেয়ে ৬ উইকেটে এগিয়ে আছেন। পেসার সুমন খান চার ম্যাচে শিকার করেছেন ১৯ উইকেট।

চলমান আসরে তিনবার পাঁচ উইকেট শিকার করা নাবিল সামাদ সংবাদ প্রকাশকে জানিয়েছেন, ডিউক বলে খেলার অভিজ্ঞতা। তার মতে, বলের সিম খাড়া হওয়ায় স্পিনার কিংবা পেসার যেই হোক কি-না সবার জন্যই ডিউক বলে বোলিং করা সুবিধাজনক।

সংবাদ প্রকাশকে নাবিল সামাদ বলেন, “বলটা ভালোই, ডিউক বলটা শক্ত তাই তাড়াতাড়ি আকৃতি পরিবর্তন হয় না। আর বেশিরভাগ বলেই সিমটা বেশ খাড়া থাকে। কিছু কিছু বল আছে, সিম এতো উঠানো না। বেশিরভাগ বলেই সিম খাড়া আছে। এটাতে স্পিনার বা পেসার, সবার জন্যই সুবিধার আছে।”

বলের একপাশ উজ্জ্বল করে বোলিং করলে তা সবসময়ই স্পিনারদের পক্ষে কাজ করে। এসজি কিংবা কোকাবুরা বলে সেই সুবিধা খুব বেশি সময় পাওয়া যায় না। এর ব্যতিক্রম এই ডিউক বল। সেই সুবিধা অবশ্য কিঞ্চিৎ কম পেয়েছেন নাবিল সামাদ। কারণটাও অবশ্য জানিয়েছেন এই অভিজ্ঞ স্পিনার।

তিনি বলেন, “বলটা অনেক সময় ধরে উজ্জ্বল করা যায়। যদিও আমরা যেসব উইকেটে খেলেছি, ফ্ল্যাট উইকেট ছিল তাই ওখানে ওইরকম উজ্জ্বল হয়নি। উইকেটে যদি একটু ঘাস থাকে, তাহলে অনেক সময় উজ্জ্বল করা যাবে। মূলত, বল শক্ত আর সিম খাড়া হওয়ায় স্পিনার বা পেসার বলেন সবাই ভালো করতেছে।”

পেসারদের জন্য সুবিধাজনক হওয়া ডিউক বলেও সাফল্য কিভাবে পেলেন নাবিল সামাদ? এই রকম প্রশ্নের জবাবে নাবিল সামাদ সাফল্যের জন্য উইকেটে পাওয়া সহায়তাকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম,বিকেএসপি আর সিলেটের ফ্ল্যাট উইকেটে খেলাটাই তার সাফল্যের মূলমন্ত্র বলে জানিয়েছেন নাবিল সামাদ। তিনি বলেন, “এটা মূলত নির্ভর করে কোথায় খেলতেছেন। আমরা খেলছি চট্টগ্রাম, বিকেএসপি আর সিলেটে। এখানে পেসারদের জন্য ওই রকম কিছু নাই। আমাদের পেসাররা খুব বেশি বল করেছে তা বলা যাবে না। কোনো কিছু যদি না হয়, তাহলে পেসাররা বোলিং করবে না। এটাই স্বাভাবিক। আমাদেরই (স্পিনার) বেশিরভাগ সময় বল করা লাগছে।  তাই দেখা গেছে, আমাদের এই জোনগুলোতে স্পিনাররাই উইকেট পাইছে বেশি।”

শীর্ষ উইকেট শিকারীর তালিকায় দুই নম্বরে থাকা সুমন খান পেয়েছেন ১৯ উইকেট। নাবিল সামাদের ঘাড়ে নিশ্বাস না ফেললেও দারুণ বোলিং স্পেলে পার করতে পারেন তাকে। তার সাফল্যের মূল রহস্য যে পেস সহায়ক উইকেট তাও খোলাসা করেছেন।

তিনি বলেন, “সুমন (খান) মিরপুর ও বগুড়ায় বেশি খেলেছে। এই জন্যই ও একটু সুবিধা পেয়েছে। আমাদেরও যদি মিরপুর-বগুড়ায় খেলা থাকতো তাহলে পেসাররাই বেশি উইকেট নিতো।”

এনসিএলের চতুর্থ রাউন্ডে চট্টগ্রামে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের শততম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন নাবিল সামাদ। ক্যারিয়ারের শততম প্রথম শ্রেণির ম্যাচে দল ড্র করলেও দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৫ ও ৩ উইকেট শিকার করেছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত এই মুখ।

নিজের ইচ্ছাপূরণ হওয়ায় তাই খুশি নাবিল। ম্যাচে নামার আগেই পাঁচ উইকেট পাওয়ার ইচ্ছা ছিল জানিয়ে বলেন, “ সত্যি কথা বলতে, যখন বোলিং করতে নামি আমার ইচ্ছা ছিল এই ইনিংস বা ম্যাচে যদি পাঁচ উইকেট পাই তাহলে খুব খুশি হবো। ইচ্ছা ছিল, আল্লাহ ইচ্ছাটা পূরণ করেছে।”

প্রথম ইনিংসে ইচ্ছা পূরণ হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়ে দলকে জেতাতে না পারায় মনের কোণে একটু হলেও আক্ষেপ জমেছে তার মধ্যে। তিনি বলেন, “দ্বিতীয় ইনিংসে তিনটা পাইছি, ওইখানে পাঁচটা পাইলে হয়তো আমরা ম্যাচটা জিততেও পারতাম। হয় নাই আরকি, ম্যাচটা ড্র হয়ে গেল। জিতলে আমরা অনেকটা এগিয়ে যেতাম।”

ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত এই পারফর্মার একটিবারের জন্যও খেলতে পারেননি বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সিতে। সেই নিয়ে মনের কোণে সুক্ষ্ম আক্ষেপ থাকলেও বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন। তার মতে, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তার বয়সী কেউ জাতীয় দলে সুযোগ পাননি, তাই বাস্তবতা মেনে নিয়ে ভবিষ্যতে ভালো খেলার স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে যেতে চান।

দীর্ঘদিন ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত মুখ নাবিল যুব বিশ্বকাপ খেলেছিলেন সেই ২০০৬ সালে। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের যুব দল সতীর্থ নাবিলের জন্য এখনও খোলেনি জাতীয় দলের দরজা। বয়সের কোটা ৩৪ পার করা এই স্পিনার অবশ্য এখন আর জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখেন না।

কারণটাও খোলাসা করেছেন সংবাদ প্রকাশের কাছে। তিনি বলেন, “আসলে বাংলাদেশ দলে তো খেলার স্বপ্ন সবারই থাকে। আক্ষেপ বলা যায় না, আসলে একটু তো থাকেই। এটা যদি আপনার কপালে না থাকে তাহলে তো জোর করে খেলতে পারবেন না। এখন যেটা হচ্ছে, যত দিন খেলি যেন ভালো খেলি সেটাই চাওয়া। বাস্তবতা মানতে হবে। এই বয়সে জাতীয় দলে ঢোকাটা বাংলাদেশের নজিরে নাই আরকি। ওই দিক থেকে বাস্তবতাটাও চিন্তা করি। যতদিন খেলি, ভালো খেলার চেষ্টা করি।”

খেলা বিভাগের আরো খবর

Link copied!