প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে কোনো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল টাইগাররা। বোলিং নৈপুণ্যে ক্যারিবীয়দের ১০২ রানে অলআউট করে দিয়েছে বাংলাদেশ। ২৭ রানের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ (২-০) নিশ্চিত করে দুর্দান্ত জয় পেয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
এর আগে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে ৭ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ।
ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত দুই বা দুইয়ের অধিক ম্যাচের ৪টি দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। এবারের সিরিজসহ মোট ২টিতে জিতেছে টাইগাররা। বাকি দুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ প্রথমবার সিরিজ জিতেছিল ২০১৮ সালে। তিন ম্যাচের ওই সিরিজ টাইগাররা জেতে ২-১ ব্যবধানে। তবে সিরিজটি যৌথভাবে আয়োজন করা হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ যে দুটি ম্যাচ জিতেছিল, সেগুলো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের লডারহিলে। নিজেদের মাঠের ম্যাচটি জিতেছিল ক্যারিবীয়রা।
বুধবার সেন্ট ভিনসেন্টে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শামীম হোসেনের শেষের লড়াইয়ে ৭ উইকেটে ১২৯ রান করে বাংলাদেশ।
ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই লিটন দাসের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বরাবরের মতোই ব্যর্থ হন উইকেটরক্ষক ব্যাটার। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১ বলে ০ রানে আউট হওয়ার পর আজ ফেরেন ১০ বলে ৩ রান করে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিনার আকিল হোসেইনকে ডাইন দ্য উইকেটে মারতে এসে টার্নিং বলটি মিস করেন লিটন। মোটেই ভুল করেননি ক্যারিবীয় উইকেটরক্ষক আন্দ্রে ফ্লেচার। বল গ্লাভসে জমা করে দ্রুত গতিতে স্টাম্প ভেঙে দেন তিনি। এরপর বৃষ্টির কারণে খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে।
পুনরায় খেলা শুরু হলে লিটনের মতো দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও ব্যর্থ হন তানজিদ হাসান তামিম। ৪ বলে ২ রান করে রস্টন চেজের বলে বোল্ড হন ব্যাটিংঅর্ডার পরিবর্তন করে এক ধাপ নিচে তিনে নামা বাঁহাতি ব্যাটার।
তৃতীয় উইকেটে ম্যাচ ধরার চেষ্টা করেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও সৌম্য সরকার। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে না পারায় চাপ তৈরি হয় তাদের ওপর। এক পর্যায়ে ঝুঁকি নিয়ে রান নিয়ে গিয়ে স্ট্রাইকপ্রান্তে আউট হন সৌম্য (১৮ বলে ১১)।
দুবার জীবন পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ (২৫ বলে ২৬)। আলজারি জোসেফকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ অঞ্চলে ক্যাচ হন তিনি।
একটি চার হাঁকিয়েই ক্যারিবীয় স্পিনার গুদাকেশ মোতির বলে বোল্ড হয়ে যান রিশাদ হোসেন (৪ বলে ৫)। ১২তম ওভারের খেলা চলাকালীন আবারও বৃষ্টি হানা দেয়।
বৃষ্টির বাধা ডিঙিয়ে দ্বিতীয়বার খেলা শুরু হলে ১১ বলে ১১ রান করে মোতির বলে বোল্ড হন শেখ মেহেদী। ২০ বলে ২১ রান করে ওবেদ ম্যাকয়ের বলে লং অনে রভম্যান পাওয়েলের হাতে ক্যাচ হন জাকের আলী। তারপরই শামীমের সেই দুর্দান্ত ইনিংস। ১৭ বলে অপরাজিত ৩৫ রান করেন বাঁহাতি ব্যাটার। বহুল প্রয়োজনীয় ইনিংসটি তিনি সাজান ২ চার ও ২ ছক্কায়। ১১ বলে ৯ রানে অপরাজিত ছিলেন তানজিম সাকিব।
১৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটাই আক্রমণাত্মক করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম দুই ওভারেই জয়ের ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করে তারা। তবে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে জোড়া শিকার ধরেন বাংলাদেশ পেসার তাসকিন আহমেদ। ওভারের প্রথম ও পঞ্চম বলে ফেরান ব্রান্ডন কিং (৫ বলে ৮) ও আন্দ্রে ফ্লেচারকে (৪ বলে ০)।
পরের ওভারে মারকুটে জনসন চার্লসকে (১২ বলে ১৫) এলব্ডিব্লিউর ফাঁদে পেলেন শেখ মেহেদী। টানা দুই ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ব্যাট টু ব্যাক বোলিংয়ে এসে নিকোলাস পুরানকেও ফেরান শেখ মেহেদী। ৮ বলে ৫ রান করা ক্যারিবীয় উইকেটরক্ষক ব্যাটারকে সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানান টাইগার স্পিনার।
বিপজ্জনক রভম্যান পাওয়েলকে ফেরান হাসান মাহমুদ। ৭ বলে ৬ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ হন ক্যারিবীয় অধিনায়ক। পরের ওভারেই রোমারিও শেফার্ডকে (৫ বলে ০) স্লিপে তানজিদ হাসান তামিমের তালুবন্দি করেন তানজিম সাকিব।
ক্যারিবীয়দের হয়ে লড়াই করেন রস্টন চেজ। রিশাদ হোসেনের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৩৪ বলে ৩২ রান করেন তিনি। পরের বলেই গুদাকেশ মোতিকে (১ বলে ০) শেখ মেহেদীর হাতের ক্যাচ বানান রিশাদ।
১৮তম ওভারে আলজারি জোসেফকে (২ বলে ০) নিজের ফিরতি ক্যাচ বানান তানজিম সাকিব। পরের ওভারে ক্যারিবীয়দের পক্ষে লড়াই করা আকিল হোসেনকে (৩১ বলে ৩১) ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মিরাজের তালুবন্দি করেন তাসকিন। এতে শেষ হয় ক্যারিবীয়দের ইনিংস।
বাংলাদেশের হয়ে ১৬ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ। ২টি করে উইকেট নেন শেখ মেহেদী, তানজিম হাসান সাকিব ও রিশাদ হোসেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২ উইকেট নেন গুদাকেশ মোতি।