• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেষ হাসি অর্থনৈতিক দুর্দশাগ্রস্থ ওই শ্রীলঙ্কারই!


পার্থ প্রতীম রায়
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২, ১২:৩০ এএম
শেষ হাসি অর্থনৈতিক দুর্দশাগ্রস্থ ওই শ্রীলঙ্কারই!

দেশজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যায় স্বাগতিক হয়েও পরবাসী শ্রীলঙ্কা। শুরুর ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হেরে এশিয়া কাপ মিশন শুরু। টুর্নামেন্টের শুরুতে আন্ডারডগ থাকা শ্রীলঙ্কা শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিতবে এই ভাবনা কারো মধ্যেই ছিল না। বরং বিভিন্ন ভবিষ্যতবাণীতে এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই তাদেরকে ছেটে ফেলা হয়েছিল। সব ভবিষ্যতবাণী কিংবা আগাম বার্তাকে ভুল প্রমাণিত এশিয়া সেরার মুকুট শ্রীলঙ্কার।

এশিয়া কাপের আগে পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কা, দুই দলের অধিনায়কের কণ্ঠেই ছিল দেশজুড়ে চলমান সমস্যার মধ্যে দেশবাসীকে খানিকের সময়ের জন্য আনন্দে ভাসাতে চাওয়ার ইচ্ছা। শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের বিপরীতে পাকিস্তানজুড়ে চলছে ভয়াবহ বন্যা।

দুই দেশের সামনেই ছিল এশিয়া কাপ জিতে দেশবাসীকে আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দেওয়ার সুযোগ। পাকিস্তান পারেনি, তাই লক্ষাধিক লঙ্কানকে আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছে দাসুন শানাকার দল।

রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মাঠে নামার আগে নানাভাবে প্রমাণ করা হয়েছিল টস জিতে ফিল্ডিং নিলেই শিরোপা নিশ্চিত। অবশ্য টুর্নামেন্টের পরিসংখ্যানই সাক্ষ্য দিয়েছিল ওই যুক্তির পিছনে। তবে ফাইনালে পরিসংখ্যান কিংবা যুক্তি কোনোটাই খাটেনি। দুটোকেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করে শিরোপা জিতেছে শ্রীলঙ্কা।

শ্রীলঙ্কার শিরোপা জয় যতটা কাকতাল ভাবেন না কেন, এটা মোটেও কাকতালীয় কোনো বিষয় নয়। কোনো ভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে টিম ইফোর্টের পুরোটাই ছিল লঙ্কানদের মধ্যে। প্রথম ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে লজ্জাজনক হারের পর প্রত্যেক ম্যাচেই লঙ্কানদের দেখা গেছে উজ্জ্বীবিত। ব্যাটিং-বোলিং কিংবা ফিল্ডিং, প্রত্যেক বিভাগেই তারা রেখেছিল নিজেদের সেরা পারফর্মেন্সের ছাপ।

ফাইনালের মঞ্চে শ্রীলঙ্কা শুরুটা ছিল বিশ্রী রকমের বাজে। এই শুরুর পর শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়াবে তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবাটা দুষ্কর ছিল। টুর্নামেন্টজুড়ে সবাইকে ভুল প্রমাণ করা শ্রীলঙ্কা ফাইনালেও তৈরি করেছে আলাদা রকমের রোমাঞ্চ।

শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে রাজাপাকসেরা ডোবালেও ক্রিকেট মাঠে ত্রাণকর্তা হয়েছেন এক রাজাপাকসেই। তবে তিনি মাহিন্দা কিংবা গোতবায়া নন, তিনি হলে ভানুকা রাজাপাকসে। তার ৪৫ বলে ৭১ রানের ইনিংসেই ১৭০ রানের সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা।

রাজাপাকসের এনে দেওয়া বড় সংগ্রহ পরও শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ওভারেই ডোবাতে বসেছিলেন দিলশান মাদুশানে। কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা না থাকা পেস বোলিং ইউনিট নিয়ে মরুর দেশে আসা শ্রীলঙ্কার এক পেসারই করেছেন বাজিমাত। প্রমোদ মাদুশানের বোলিংয়ে রীতিমতো চোখে সরিষেফুল দেখেছেন পাকিস্তানি ব্যাটাররা। প্রমোদের সাথে যুক্ত হওয়া ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার স্পিন বিষ যেন ভেঙে দিয়েছে বাবর আজম বাহিনীর শিরোপা জয়ের স্বপ্ন।

শেষ পর্যন্ত টস ভাগ্যকে নিজের সঙ্গী করেও এশিয়া কাপ জিততে না পারার আক্ষেপ নিয়েই দেশে ফেরার বিমান ধরতে হচ্ছে পাকিস্তানকে। আর দেশের মানুষের জন্য বড় উপহার নিয়েই দেশে ফেরার বিমানে উঠে বসবে শ্রীলঙ্কা।

Link copied!