ম্যাচের সাত মিনিটেই শঙ্কা জেগেছিল এবারও বোধহয় ফুটবলকে ঘরে নিতে পারছে না ইংল্যান্ড। ১১ মিনিট পর সমতা ফেরালেও আর গোল করতে পারছিল না কোনো দল। অতিরিক্ত সময়ের ক্ষণ গুনছিল সবাই, এমন সময় ওলি ওয়াটকিনসের চমক। আরেক বদলি কোল পালমারের পাস থেকে গোল করলেন অ্যাস্টন ভিলা স্ট্রাইকার। তাতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানের জয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ২০২০ সালের রানার্সআপ ইংল্যান্ড।
বুধবার (১০ জুলাই) রাতে জার্মানিতে আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড ১৯৮৮ সালের শিরোপাজয়ী নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে দেয়।
সাত মিনিটে ডেকলান রাইসের ভুল এ বক্সের বাঁ প্রান্তে বল পেয়ে যান জাভি সিমন্স। পিএসজি ফরোয়ার্ড এক টানে বক্সের ওপর এসে জোড়ালো এক শট নিলেন, ইংলিশ গোলকিপার জর্ডান পিকফোর্ডের বাড়ানো হাতের আলতো স্পর্শ সেটাকে থামাতে পারল না।
১১ মিনিট পর ভিএআরের সাহায্যে দেওয়া পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরান হ্যারি কেইন। যদিও জয়টা এনে দিয়েছেন পুরো টুর্নামেন্টে মাত্র ৩০ মিনিট মাঠে নামা ওয়াটকিনস। ম্যাচ শেষে তাই সতীর্থের প্রশংসায় মেতেছেন কেইন, ‘ইতিহাস লেখা হয়েছে-দারুণ অর্জন। আমরা প্রস্তুত থাকা নিয়ে অথা বলি-আপনি হয়তো পাঁচ মিনিট খেলার সুযোগ পাবেন, এক মিনিটও হতে পারে, কিন্তু আপনি সে সময়েই পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন, টুর্নামেন্ট জিততে পারেন। আর ওলি ধৈর্য দেখিয়েছে এবং যা করেছে, দুর্দান্ত।’
ওদিকে এমন কিছু যে হতে পারবে, সেটা নাকি মনে হচ্ছিল ওয়াটকিনসের, “পুরো সপ্তাহ এই মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলাম। কসম কেটে বলছি, আমি কোল পালমারকে বলেছিলাম আজ ও-ই আমাকে পাস দেবে এবং আমি গোল করব।”
ইংল্যান্ড অবশ্য জেতার মতোই খেলেছে কাল। পুরো টুর্নামেন্ট ঘুম পাড়ানি ফুটবল উপহার দেওয়া ইংলিশরা কাল ছিল প্রাণবন্ত, সে তুলনায় নেদারল্যান্ডস ছিল ম্রিয়মাণ। ১৮ মিনিটের মধ্যে দুই গোল হয়ে যাওয়ার পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ইংল্যান্ড। ফিল ফোডেন তো গোল করেই ফেলেছিলেন প্রায়। কোবি মাইনুর পাসে গোলের ছয় গজের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলেন।
প্রথমে বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন মনে হলেও ঠিকই গোলকিপারকে ফাঁকি দিয়ে বল পাঠিয়েছিলেন। বল লাইন পার করে যাবে, এমন সময় তা আটকে দেন ডামফ্রাইজ। বল যেন শ্রোডিনগারের বিড়াল- লাইনের এপাশেও বল, ওপাশেও বল!
একটু পর কর্নার থেকে ডামফ্রাইজের নেয়া হেড ক্রসবারে লেগে ফিরে। জবাবে ফোডেন যে শট নিলেন সেটা লেগে ফিরেছে পোস্টে। ফোডেন, বুকায়ো সাকা ও জুড বেলিংহাম ত্রাস ছড়াচ্ছিলেন বক্সের আশপাশে। আর মাঝমাঠ একাই দাপটে দখল করে রেখেছিলেন মাইনু।
গত তিন ম্যাচে ক্রস দিয়ে খেলার চেষ্টা করা ইংল্যান্ডের এমন পরিবর্তনের সামনে পাত্তাই পাচ্ছিল না নেদারল্যান্ডস। ৩৮ মিনিটে মেমফিস ডিপাইয়ের চোট নিয়ে মাঠ ছাড়া দলটিকে আরও কাবু করে তোলে।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য ইংল্যান্ড তাদের সেই আগ্রাসন কিছুটা হারিয়ে ফেলে, তবে এতেও ডাচদের খেলায় কোনো হেলদোল দেখা যায়নি। খেলার গতি বাড়াতে গ্যারেথ সাউথগেট কেইন ও ফোডেনকে তুলে নিলে বদলে যায় খেলার দৃশ্যপট।
পালমার ও ওয়াটকিনসকে নামান সাউথগেট, ‘অতিরিক্ত সময়ে না নিয়ে আমরা স্বাভাবিক সময়েই ঝুঁকি নিতে চেয়েছিলাম।’ টুর্নামেন্টে প্রতি ম্যাচেই বদলি নেমে দলের সেরা খেলোয়াড় বনে যাওয়া পালমার কালও ছিলেন দুর্দান্ত। এবং তাঁর রক্ষণকে দুই ভাগ করে দেওয়া এক পাসই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিল।
রোববার স্পেনের বিপক্ষে আসরের ফাইনালে খেলবে ইংল্যান্ড। তিন বারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন ২-১ গোলে ফ্রান্সকে পরাজিত করে প্রথম সেমিফাইনালে।