সাম্প্রতিক সময়ে পিঠের চোটে ভুগছেন তামিম ইকবাল খান। চোটের কারণে লন্ডনে গিয়ে ডাক্তারও দেখিয়ে এসেছেন তিনি। এই চোটই তামিমকে এশিয়া কাপের বাইরে রাখছে। বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের সঙ্গে তামিম ইকবালের বৈঠক শেষেই এশিয়া কাপে তামিমের না থাকার বিষয়টি জানা যায়।
এবারের এশিয়া কাপ শুরু আগামী ৩০ অগাস্ট। বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ৩১ অগাস্ট। ততদিনে তামিম কতটা ফিট হয়ে উঠতে পারবেন, সেই সংশয় আছে। ফিট হয়ে উঠলেও প্রস্তুতির ঘাটতি থাকবে নিশ্চিতভাবেই। তামিমের যে পুনবার্সন পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে, তাতে ২১ অগাস্টের আগে সবটুকু তীব্রতায় অনুশীলন শুরুই করতে পারবেন না। তাই কোনো ঝুঁকি না নিতে এবং শেষ সময়ের জন্য টানাপোড়েন না রাখতেই এশিয়া কাপে না খেলার এই সিদ্ধান্ত।
এরপর ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস জানান তামিমের চোটের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বলেন,“তামিম পিঠের সমস্যায় অনেক দিন ধরেই ভুগছিল। এক বছরের ওপরে হবে চিকিৎসার জন্য বাইরে গিয়েছে, অনেক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছে, কথা বলেছে। সম্প্রতি লন্ডনে চিকিৎসা নিয়েছে। সেখানে ধরা পড়েছে যে তার ডিস্ক (পিঠের নিচের অংশে) এল ফোর ও এল ফাইভে সমস্যা আছে। ওখান থেকে ব্যথাটা আসে। ওকে সেখানে দুই দফায় ইনজেকশন দেওয়া হয়।”
সামনের সময়টায় তামিমের পুনর্বাসন পরিকল্পনার বিস্তারিত জানিয়ে জালাল ইউনুস বলেন, সব দিক বিবেচনা করে সম্মিলিতভাবেই অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের এশিয়া কাপে না খেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন,“ওর পরের যে চিকিৎসা, সেটা হলো ইনজেকশন দেওয়ার দিন থেকে দুই সপ্তাহ বিশ্রামে থাকতে হবে। প্রথম সপ্তাহ পুরোপুরি বিশ্রাম, যেটি কালকে (শুক্রবার) পর্যন্ত। পরের সপ্তাহ ১১ তারিখ পর্যন্ত, এই সময় তাকে ছোটখাটো রিহ্যাব করতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে তার ইন্টেনসিটি ফেরাতে হবে। এখানেও দুই সপ্তাহ লেগে যাবে। ২১ তারিখের আগে ইন্টেনসিটি বাড়ানো যাবে না। এর পরে বাড়াতে হবে। কিন্তু এশিয়া কাপের জন্য আমাদের দল চলে যাবে ২৬ তারিখে। এজন্য তামিমের পক্ষে এশিয়া কাপে ফেরা সম্ভব হচ্ছে না।”
এ সময় তিনি আরও যোগ করেন,“এর মধ্যে আমরা ড. দেবাশিষ (বিসিবির প্রধান চিকিৎসক), বায়োজিদ (বিসিবির ফিজিও), তামিম ও মাননীয় বোর্ড সভাপতি, আমরা সবাই কথা বলেছি। তারাও পরামর্শ দিয়েছে, এশিয়া কাপে ওকে ফেরানোটা সম্ভব হবে না। সেজন্য এশিয়া কাপে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না, এটা এখনই বলে দিলাম। আমরা আশা করছি, নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে সে ফিট হয়ে উঠবে। এরপর বিশ্বকাপ। আমাদের ফিজিওরা এবং মেডিকেল টিম কাজ করবে, তাকে নিউজিল্যান্ড সিরিজ ও বিশ্বকাপে খেলার জন্য সবরকম সহায়তা করবে।”
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বললেন, কোনোরকমের ঝুঁকি না রাখতেই তামিমকে এশিয়া কাপের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, “আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় ব্যাপার যে, কত তাড়াতাড়ি তামিম ফেরত আসে। এশিয়া কাপটা ওকে বললে হয়তো ও খেলে ফেলবে। আমি জানি যে, ওকে যদি বলি যে খেলতে হবে এশিয়া কাপ, ও খেলে দেবে। কিন্তু এশিয়া কাপ খেলতে গিয়ে যদি ওর অবস্থা খারাপ হয়, তাহলে তো চিরস্থায়ী ক্ষতির দিকে চলে যাবে। আমরা সেটা চাই না। বরং একটা এশিয়া কাপ মিস করবে, তারপরও সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক। আমাদের নিউ জিল্যান্ড সিরিজ আছে, বিশ্বকাপ আছে। সেখানে সে খেলবে, এটাই আমাদের জন্য বড় ব্যাপার।”
এশিয়া কাপের পরপরই দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল। মূলত বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবেই এই সিরিজের পরিকল্পনা হয়ে আছে বেশ আগে থেকে। সূচি এখনও চূড়ান্ত না হলেও সিরিজ নিশ্চিতই। তামিম নিজেও আশাবাদী, এই সিরিজ দিয়ে ফিরতে পারবেন মাঠে।
তামিম বলেন,“যে ইনজেকশনটা আমি নিয়েছি, এটা হিট অ্যান্ড মিসের ব্যাপার। বাড়তি কোনো সমস্যা যেন না হয়, এজন্যই এই পরিকল্পনাটা নেওয়া, যেন নিউ জিল্যান্ড সিরিজে আমি সম্ভাব্য সেরা শেপে ফিরতে পারি। এ কারণেই বাড়তি সময়টুকু নেওয়া। যেটা পাপন ভাই বললেন, যদি আমরা জোরাজুরি করতাম, তাহলে হয়তো এশিয়া কাপ ধরতে পারতাম। তবে জোরাজুরি করতে চাচ্ছি না কেউ, মেডিকেল টিমও চাচ্ছে না। আমি খুবই আশাবাদী নিউ জিল্যান্ড সিরিজ থেকে খেলতে পারব।”