নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও রনি তালুকদারের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে জয়ের পথে ছিল রংপুর। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন রংপুর অধিনায়ক সোহান। তবে ১৮তম ওভারে প্রথম তিন চার বলের মধ্যে দুজনেই ফিরে গেলে আশার প্রদীপ নিভে যায় রংপুরের। সোহান ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট হলেও জাকির ফেরেন অদ্ভুত রানআউট হয়ে।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) চলতি আসরের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রংপুরকে ১৯ রানে হারিয়েছে ফাইনালে উঠেছে সিলেট। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
প্রথমে ব্যাটিং করে ১৮২ রানের বড় সংগ্রহ পেয়েছিল সিলেট। রনি তালুকদারের ব্যাটে জয়ের পথে থাকলেও ১৮ এবং ১৯ ওভারে চার উইকেট তুলে নিয়ে নাটকীয় জয় তুলে নেয় মাশরাফি বিন মুর্তজার সিলেট স্ট্রাইকার্স।
টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ঝড়ো শুরু পায় সিলেট। দুই ওপেনার শান্ত আর তৌহিদ হৃদয়ের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে সিলেটের স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ৪৪ রান। অন্যপাশে হৃদয় সতর্ক থাকলেও শান্ত একটু বেশিই আগ্রাসী ছিলেন।
ইনিংসের ৯ম ওভারে ফেরার আগে ৩০ বলে পাঁচ চার ও এক ছক্কায় শান্তর ব্যাট থেকে আসে ৪০ রান। তিনি ফিরলে ভাঙে সিলেটের ৬৫ রানের ওপেনিং জুটি। এরপর সবাইকে চমকে তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে নামেন মাশরাফি। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে ঝড়ের ইঙ্গিতও দেন শুরুতেই।
শান্ত ফেরার পর মাত্র ১২ রানের ব্যবধানে ফিরে যান হৃদয়ও। শুরু থেকেই অস্বস্তিতে থাকা হৃদয় ফেরেন ২৫ বলে ২৫ রান করে। চলতি বিপিএলে সিলেটের অন্যতম সেরা ব্যাটার জাকির হাসানও এদিন ব্যর্থ। দলীয় ১০১ রানে ফেরার আগে করেন মাত্র ১৩ রান।
চার নম্বরে নামা রায়ার্ন বার্ল ঝড়ো শুরু করলেও বিদায় নেন মাত্র ১৩ রানে। অন্যপাশে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বার্ল ফেরার পর মাত্র তিন রানের ব্যবধানে ফিরে যান তিনিও। এ ম্যাচে ১৬ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ২৮ রান করেন তিনি
মুশফিকুর রহিমও এদিন ব্যর্থ হওয়ার পর শেষদিকে দলের রান বাড়ানোর দায়িত্ব নেন থিসারা পেরেরা ও জর্জ লিন্ডে। ইনিংসের শেষ ওভারে ১৫ বলে ২১ রানে পেরেরা ফিরলেও ১০ বলে এক চার ও দুই ছক্কায় ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন লিন্ডে। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে ১৮২ রানের সংগ্রহ পায় সিলেট।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় রংপুরে। বিপিএলের চলতি আসরে প্রথম ম্যাচ খেলেত নেমে মাত্র এক রানেই ফিরে যান ইংলিশ ব্যাটার স্যাম বিলিংস।
আগের ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা শামিম হোসেনও আজ আলো ছড়াতে ব্যর্থ। দলীয় ৩৪ রানের ফেরার আগে তার নামের পাশে যোগ হয়েছে মাত্র ১৩ রান। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩৪ রানে দুই উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে রংপুর।
চার নম্বরে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন নিকোলাস পুরান। ইনিংস বড় করতে না পারলেও পুরানের ১৪ বলে এক চার ও চার ছক্কায় ৩০ রানের ক্যামিওতে শুরুর চাপ কাটিয়ে ওঠে রংপুর।
অন্যপ্রান্তে ততক্ষণে খোলস ছেড়ে বের হওয়া শুরু করেছেন রনি তালুকদার। চার নম্বরে নামা অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে বেশ সাবলিলভাবেই রানের গতি বাড়ান তিনি।
ইনিংসের ১০ম ওভারে রনিকে ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল সিলেট। মাশরাফিকে ছক্কা মারার পরের বলেই ক্যাচ দিয়েছিলেন জাকির, কিন্তু মিড উইকেটে সেটা হাতেই জমাতে পারেননি জাকির হোসেন।
নতুন জীবন পেয়ে যেন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন রনি। ৪০ বলে ফিফটি করা রনিকে অন্যপাশ থেকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন সোহান। ইনিংসের ১৫তম ওভারের প্রথম দুই বলে রনি দুই চার মারার পর শেষ দুই বলে চার হাঁকিয়েছেন সোহানও।
শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য রংপুরের প্রয়োজন ছিল ৩৩ রান। এ সময়ে চার বলের মধ্যেই দুই উইকেট হারিয়ে বসে দলটি। ২৪ বলে চারটি চারে ৩৩ রান করে ওভারের প্রথম বলে সোহান ফেরার পর তৃতীয় অদ্ভুতূড়ে রান আউট হন ছন্দে থাকা রনি।
১৮তম ওভার করতে আসার তানজিম হাসান সাকিবের বল রনি ব্যাটে লাগাতে না পারলে চলে যায় উইকেটরক্ষক জাকিরের হাতে। জাকির প্রথম দফায় ধরতে না পারলেও রকেট গতির থ্রোতে ভেঙে দেন স্টাম্প। বল খেলতে দাগের বাইরে যাওয়া রনি ভিতরে আসতে একটু দেরী করেই কাটা পড়েন রান আউটে।
এরপর শেষ দুই ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ৩১ রানের। অর্থাৎ ১৮তম ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে রংপুর নিতে পেরেছে মাত্র চার রান। পরের ওভার করতে আসা উড তিন রান দিয়ে তুলে নেন আরও দুই উইকেট। টানা দুই ওভারে জোড়া উইকেট হারিয়ে হার প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় রংপুরের।
শেষ ওভারে ২৮ রানের সমীকরণ দাঁড়ায় শেষ ওভারে। ওভারের প্রথম দুই বলে শানাকা দুই চার মারলেও টানা তিন বল ডট দেওয়ার পর শেষ বলে উইকেট নিয়ে সিলেটের জয় নিশ্চিত করেন এই ওভার করতে আসা রুবেল হোসেন। সবমিলিয়ে এই ওভার থেকে আট রান আসলে ১৯ রানের ব্যবধানে জয় নিশ্চিত হয় সিলেটের।