• ঢাকা
  • বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪, ১৪ কার্তিক ১৪৩১, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৬
ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ

ইংল্যান্ডকে কাঁদিয়ে জয়ের আনন্দে কাঁদল স্পেনও


তারিক আল বান্না
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৪, ০৬:২৫ এএম
ইংল্যান্ডকে কাঁদিয়ে জয়ের আনন্দে কাঁদল স্পেনও
স্পেনের দুই গোলদাতা উইলিয়ামস ও ওয়ারসাবাল। ছবি: উয়েফা

কাঁদছেন বুকায়ো সাকা, কাইল ওয়াকাররা। ওদিকে কাঁদছেন দানি কারভাহাল-মোরাতারা। লা লিগার দেশ এই স্পেন দলের কারো জাতীয় দলে জয়ের স্বাদ পাওয়া হয়নি এর আগে। কারভাহালরা তাই তা ভেসেছেন আনন্দে। 

ওদিকে ইংল্যান্ড কাঁদছে আরও একবার কাছে গিয়েও সব হারানোর বেদনায়। তিন বছরে দুবার ইউরোর ফাইনালে হেরা যাওয়ার হতাশায়।  

এর আগেও দুই দলের খেলায়ও ছিল অদ্ভূত মিল। এ যেন ছিল দুই অর্ধের খেলা। প্রথমার্ধে ঘুম পাড়ানো ম্যাচ খেলেছে দুই দলই। আর দ্বিতীয়ার্ধে খেলেছে টানটান উত্তেজনা জাগানো ফুটবল। আর তাতে এগিয়ে ছিল স্পেনই। পুরো টুর্নামেন্টে টানা ছয় ম্যাচ জেতা স্পেন ফাইনালেও ৯০ মিনিটে শেষ করল ম্যাচ।

১২ বছর পর ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইউরো জিতেছে স্পেন। এ নিয়ে চতুর্থ ইউরো স্পেনের। ওদিকে আরও একবার বিশ্ব মঞ্চ থেকে শূন্য হাতে ফিরল ইংল্যান্ড।

এর আগে ১৯৬৪, ২০০৮ ও ২০১২ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় স্পেন। আর এই ফলাফলে দীর্ঘ ৫৮ বছরেও বড় ফুটবল আসরের শিরোপা লাভের খরা কাটলো না ইংলিশদের। ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওার পর এখন পর্যন্ত কোনো বিগ ইভেন্টের শিরোপা জিততে পারেনি ইংল্যান্ড দল।

ম্যাচপূর্ব আলোচনায় অনেক কথাই হয়েছে। এই স্পেন অনেক বেশি ডিরেক্ট, ওদিকে ইংল্যান্ড বল দখলে রাখতে বেশি মনোযোগী। কিন্তু টুর্নামেন্টের ফাইনালের মঞ্চে গিয়ে দুই দল নিজেদের চিরায়ত ঢংয়ে ফিরে গেছে। স্পেন বল দখল করে রেখেছে। ওদিকে ইংল্যান্ড চেষ্টা করেছে লং বল খেলতে।

প্রথমার্ধের এক পর্যায়ে স্পেনের বল দখলের হার ছিল ৭০ ভাগ। ওদিকে ৩০ ভাগ সময় বল পায়ে রেখেই আক্রমণের চেষ্টা চালাচ্ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু স্পেনের হয়তো এখনো বল দখলে রেখে পাসিং ফুটবল খেলার মতো খেলোয়াড় আছে দলে। কিন্তু এই ইংল্যান্ড দলে যে আচমকা প্রতিআক্রমণে ওঠার মতো খেলোয়াড় নেই।

ফলে প্রথমার্ধটা হয়েছে পুরোপুরি ঘুম ধরানো। বলের দখল রেখেও বলার মতো কোনো সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি স্পেন। ওদিকে ইংল্যান্ডের তো আরো করুণ দশা। তবে প্রথমার্ধের শেষ দুটি সুযোগ আচমকা এসে পড়েছিল ইংল্যান্ডের সামনে। যোগ করা সময়ে ডেকলান রাইসের ফ্রি কিক স্প্যানিশ রক্ষণের কাছ থেকে দূরের পোস্টে থাকা ফিল ফোডেনের কাছে এসে পড়ে।

একটু অপ্রস্তুত থাকা ফোডেন শট নিয়েছিলেন, কিন্তু উনাই সিমন বরাবর চলে যায় বল। এর আগে বেলিংহাম বক্সের মধ্যে চমৎকার অবস্থানে থাকা হ্যারি কেইনকে পাস দিয়েছিলেন, কিন্তু এত সময় নিয়েছিলেন ইংলিশ অধিনায়ক যে বলে পা লাগাতে লাগাতে তিনজন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার চলে আসেন।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই চমক, দলের মূল মিডফিল্ডার রদ্রিকে তুলে জুবিমেন্দিকে নামান কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে। প্রথমার্ধের শেষ দিকে কেইনের শট ঠেকাতে স্লাইড করতে গিয়ে চোট পান রদ্রি। এই পরিবর্তনের ফলে নয়, নতুনভাবে খেলা শুরু করতে গিয়ে এবারের ইউরোর স্পেন ফিরে এসেছিল কিছুক্ষণের জন্য অর্থাৎ দুই উইং দিয়ে দ্রুত গতির আক্রমণে ফিরেছিল তারা। ৪৬ মিনিটে নিজেদের বক্স থেকে বল যায় লামিন ইয়ামালের কাছে।

বক্সের ভেতরে ইয়ামাল বলটা কাকে দেবেন তা বুঝতে পারছিল না ইংল্যান্ডের রক্ষণ। দানি অলমোর অফ দ্য বল রানে ওয়াকার তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, আর ইয়ামালের পাস দূরের পোস্তে থাকা নিকো উইলিয়ামসকে খুঁজে নিল। উইলিয়ামসের শট ঠেকাতে পারেননি পিকফোর্ড। ৪৭ মিনিটে এগিয়ে যায় স্পেন।

পরের মিনিটেই ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারত। কিন্তু উইলিয়ামসের পাস থেকে বলটা দারুণ দক্ষতায় নিয়ন্ত্রণে নিলেও শটে ভুল করেন অলমো। ৫ মিনিট পর পিকফোর্ডকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি মোরাতা, ফিরতি বল আবার ডিফেন্ডারের ভুলে নানা পা হয়ে এসে পড়ে উইলিয়ামসের কাছে। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়।

এরপরই অধিনায়ক হ্যারি কেইনকে মাঠ থেকে তুলে নেন ইংলিশ কোচ সাউথগেট। এরপর বেলিংহাম দূরপাল্লার এক শটে একটু ভয় জাগিয়েছিলেন। জবাবে ইয়ামালের নেওয়া শট একটুর জন্য গোল হয়নি। এরপর স্পেনও তাদের স্ট্রাইকার অধিনায়ক মোরাতাকে মাঠ থেকে তুলে নেয়। জবাবে ইংল্যান্ড মাইনুকে তুলে নামায় কোল পালমারকে।

৭০ মিনিটে মাঠে নেমেই আক্রমণের ধার বাড়ান পালমার। প্রথমে একটা থ্রু বল দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ৩ মিনিট পর আর তাই পাস দেওয়ার চেষ্টা করেননি। বুকায়ো সাকা ডান প্রান্ত দিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন। তাঁর পাস বেলিং হাম বক্সের মধ্যে পেলেও শট নেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই বলটা পেছনে পাঠিয়ে দেন বক্সের বাইরে থাকা পালমারের কাছে।

গতিতে ছুটে আসছিলেন, সে গতি নষ্ট হতে না দিয়ে ওই অবস্থাতেই শট নিলেন চেলসি ফরোয়ার্ড। ২০ গজ দূর থেকে নেওয়া শট দূরের পোস্ট ঘেঁষে যাওয়ায় সিমনের পক্ষে তা ঠেকানো সম্ভব ছিল না। গোলের পর আবার স্পেনকে ম্যাচের নাগাল দিয়ে দেয় ইংল্যান্ড। একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে স্পেন।

৮২ মিনিটে ইয়ামাল দারুণ অবস্থানে বল পেয়েও পিকফোর্ডের শরীর বরাবর শট নিলে এগিয়ে যেতে ব্যর্থ হয় স্পেন। তবে গোলের জন্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি স্পেনকে। বক্সের সামনে বল পেয়ে বলটা বাঁ উইংয়ে কুকুরেয়াকে দেন মিকেল ওয়ারসাবাল। কুকুরেয়ার পাসে শুধু পা লাগিয়ে বল জালে পাঠিয়ে দেন সোসিয়েদাদ ফরোয়ার্ড। ম্যাচের তখন ৮৬ মিনিট।

৮৯ মিনিটে সমতা ফেরানোর দুর্দান্ত সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি ওয়াটকিনস। কর্নার থেকে দুবটি হেড করেছিল ইংল্যান্ড, কিন্তু দুবারই লাইন থেকে বল ফেরানো হয়। রাইসের হেড প্রথমে ফেরান সিমন। গুয়েহির হেড একদম লাইন থেকে ফেরান অলমো।

যোগ করা চার মিনিটেও আর ম্যাচে ফেরা হয়নি ইংল্যান্ডের।

Link copied!