উনাই সিমনকে পরাস্ত করা আশরাফ হাকিমির ওই শটের পর জিব্রাল্টার প্রণালির দুই পাড়ে দেখা দিয়েছে ভিন্নরূপ। এক পাড়ের মরক্কোজুড়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার আনন্দ। অন্য পাশের স্পেনে শুধুই হতাশা। টাইব্রেকারে জয় নিশ্চিত করা আশরাফ হাকিমির শটের রিপ্লে ভিডিও স্প্যানিশদের কাছে বারবার বাঁধবে গলার কাঁটার মতো। স্পেনের জল-হাওয়ায় বড় হওয়া আশরাফ হাকিমিই শেষ পর্যন্ত হলেন স্প্যানিশদের বিদায়ের নায়ক।
২০১৮ সালে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ছিলেন অভিবাসীরা। আফ্রিকা থেকে যাওয়া অভিবাসীদের ভেলায় চড়ে ফ্রান্স দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ব শিরোপা ঘরে তুলেছিল। মরক্কোর গল্পটাও ওই অভিবাসী নির্ভর। তারা অবশ্য অভিবাসীদের কাজে লাগিয়েছে ভিন্নভাবে। ইউরোপজুড়ে থাকা মরক্কোর অভিবাসী ফুটবলারদের দেশে ফিরিয়ে বাগিয়ে নিচ্ছে সাফল্য।
চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে দল গোছাতেই হিমশিম খেয়েছিল মরক্কো। অথচ চার বছর পর ওই মরক্কোই প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে ফুটবল বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ওঠার দৌড়ে। পুরো কৃতিত্বই অবশ্য অভিবাসী ফুটবলারদের। না, তাদের দেশে অভিবাসী হওয়া ফুটবলাররা না, অন্যদেশে থাকা মরক্কোর অভিবাসী ফুটবলারদের ফেরানোয় এসেছে এই সাফল্য।
নিজেদের ফুটবলার সংকট কাটাতে ইউরোপে নজর দিয়েছিল মরক্কো। ফিফার নিয়মে সেটা হয়ে উঠেছিল কঠিন। বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদন করে দুই বছর অপেক্ষার পর অভিবাসী ফুটবলার দলে ভেড়ানোর আইন সংশোধন করিয়ে নেয় মরক্কো। এরপরেই ইউরোপে থাকা মরক্কোর বংশোদ্ভুত ফুটবলারদের দলে ভেড়ায়। তৈরি মরক্কো ফুটবলের জোয়ার।
এই স্রোতের বহু আগেই অবশ্য মরক্কোতে ফেরেন আশরাফ হাকিমি। বাবা-মা অভিবাসী হওয়ায় হাকিমির জন্ম ও বেড়ে ওঠা স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে। হাকিমির ফুটবলে হাতেখড়ি রিয়াল মাদ্রিদের যুব একাডেমিতে। এমনকি সেখানেই শুরু হয়েছিল পেশাদার ফুটবলার হিসেবে তার যাত্রা। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড হয়ে হাকিমির বর্তমান ঠিকানা প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়েতে(পিএসজি)।
স্পেনের হয়ে বয়সভিত্তিক ফুটবল ও জাতীয় দলের খেলার সুযোগ থাকলেও ছোটবেলাতেই বাবা-মায়ের দেশ মরক্কোকে বেছে নিয়েছিলেন আশরাফ হাকিমি। উন্নত জীবনের আশায় হাকিমির বাবা-মা স্পেনের মাটিতে পা রেখেছিলেন অভিবাসী হিসেবে। স্পেনে করতেন দিনমজুরের কাজ।
জিব্রাল্টার প্রণালির পার করা হাকিমির বাবা-মা চেয়েছিলেন সন্তানদের উন্নত জীবন। ফুটবলার হয়ে সেই চাওয়া পূরণ করলেও ভোলেননি মাতৃভূমিকে। তাই তো জিব্রাল্টার প্রণালির এপাড়ের স্পেন ছেড়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলতে ওপাড়ের দেশ মরক্কোকেই বেছে নিয়েছেন।
মরক্কোকে বেছে নেওয়ায় স্প্যানিশদের হয়তো কোনো আপত্তি ছিল না। বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের যুব প্রকল্পগুলো প্রতিবছর যেভাবে নতুন নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করে তাতে হাকিমির বিদায়ে হয়তো বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে স্পেনের জল-হাওয়ায় বড় হয়ে বিশ্বমঞ্চে তাদের বিপক্ষেই জ্বলে ওঠাটা নিশ্চয়ই মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে স্প্যানিশদের। তারা হয়তো এতোক্ষণে আশরাফ হাকিমিকে ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে ফেলেছে।