প্রথম বলে ছক্কা মেরে শুরু করেছিলেন আইপিএল। মাত্র ১৪ পেরোনো এক কিশোর আইপিএল খেলছেন। তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই রেকর্ড বইয়ে তোলপাড় বৈভব সূর্যবংশীর। ৩৫ বলের সেঞ্চুরিতে ভেঙেছেন একের পর এক রেকর্ড।
গত সপ্তাহে আইপিএল অভিষেক হয়েছে বৈভবের। লক্ষ্মৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে মাঠে নেমে আইপিএল ক্যারিয়ারে প্রথম বলেই ছক্কা মারেন ভৈভব। সে ম্যাচে ভৈভব ঝড় থামে ২০ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৪ রানের ইনিংসে। বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে পরের ম্যাচে মোটে ১৬ রান করে আউট হলেও সেদিন দুটি ছক্কা মেরেছিলেন ভৈভব।
আগের দুই ম্যাচে ইনিংস বড় করতে না পারলেও তৃতীয় ম্যাচে এসে বিহারের বাঁহাতি এ ওপেনার যা করেছেন, তাতে রেকর্ড বই তছনছ হয়ে গেছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে মাত্র ৩৫ বলে ৭ চার ও ১১ ছক্কায় সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ভৈভব। তাতে একটার পর একটা রেকর্ড এসে লুটোপুটি খেয়েছে ১৪ বছর ৩২ দিন বয়সী এ কিশোরের পায়ের কাছে।
স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভৈভবই এখন সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। এত দিন এ রেকর্ডটি ছিল আরেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান বিজয় জোলের। এর আগে ২০১৮ সালে সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ১০৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন জোল। সেদিন মহারাষ্ট্রের এ ব্যাটসম্যানের বয়স ছিল ১৮ বছর ১১৮ দিন।
শুধু স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিই নয়, পেশাদার ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ বিবেচনায় নিলে ভৈভাবই এখন সবচেয়ে কম বয়সে তিন অঙ্ক ছোঁয়া ব্যাটসম্যান। এ ক্ষেত্রে আগের রেকর্ডটা ছিল জহুর এলাহির। ১৯৮৬ সালের পাকিস্তানের ঘরোয়া ‘লিস্ট এ’ টুর্নামেন্টে মাত্র ১৫ বছর ২০৯ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করেছিলেন এলাহি। প্রায় চার দশক টিকে থাকা রেকর্ডটা গতকাল নিজের করে নিলেন ভৈভাব।
সোমবার মাত্র ৩৫ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন ভৈভাব। আইপিএল ইতিহাসে এর চেয়ে কম বলে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড আছে মাত্র একটি। ২০১৩ সালে পুনের বিপক্ষে ১৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পথে মাত্র ৩০ বলে সেঞ্চুরি করেন ক্রিস গেইল। ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তির রেকর্ড ভাঙতে না পারলেও ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক ঠিকই বনে গেছেন ভৈভাব।
শুধু সেঞ্চুরি নয়, ফিফটিতেও একটা জায়গায় সব ভারতীয়কে ছাপিয়ে গেছেন ১৪ বছর বয়সী এ বিস্ময় বালক। গতকাল ৫০ ছুঁতে ভৈভাবের লেগেছিল ১৭ বল। জাতীয় দলে অভিষেকের আগে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের প্রথম আইপিএল ফিফটি বিবেচনায় নিলে, এটাই সবচেয়ে কম বলে ফিফটির রেকর্ড। এর আগে ২০২১ সালে চেন্নাইয়ের বিপক্ষে ১৯ বলে ৫০ করেছিলেন ইয়াসাসভি জয়সোয়াল। মজার বিষয়, গতকাল জয়সোয়ালের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নেমে, জয়সোয়ালকে অন্য প্রান্তে দর্শক বানিয়ে তাঁর রেকর্ডটা নিজের করে নিয়েছেন ভৈভাব।
গতকাল ৩৮ বলে ১০১ রানের ইনিংস খেলার পথে ১১ ছক্কা মারেন ভৈভব। আইপিএলে এক ইনিংসে ভারতীয় কোনো ব্যাটসম্যানের এটাই যৌথভাবে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। ২০১০ সালে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে রাজস্থানের বিপক্ষে ১১ ছক্কা মেরেছিলেন মুরালি বিজয়ও।
আইপিএল পথচলায় মোটে তৃতীয় ম্যাচেই সেঞ্চুরির দেখা পেলেন ভৈভব। ম্যাচের দিক থেকেও ভারতীয়দের মধ্যে এটি দ্রুততম। এর আগে যৌথভাবে রেকর্ডটি ছিল মানিস পান্ডে (২০০৯), পল ভালথালি (২০১১) ও প্রিয়াংশ আরিয়ার (২০২৫)। তিনজনেরই প্রথম আইপিএল সেঞ্চুরি পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে চতুর্থ ম্যাচ পর্যন্ত।
ভৈভব সোমবার ১১ ছক্কার পাশাপাশি চার মেরেছেন আরও ৭টি। অর্থাৎ ১০১ রানের ইনিংসে ৯৪ রানই এসেছে বাউন্ডারি থেকে। শতাংশের হিসেবে যা ৯৩.০৬%। আইপিএলে সেঞ্চুরির ইনিংসে বাউন্ডারি থেকে সবচেয়ে বেশি হারে রান তোলার রেকর্ডও এটি। এর আগে যা ছিল জয়সোয়ালের দখলে। ২০২৩ সালে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ১২৪ রানের ইনিংস খেলার পথে ১১২ রানই বাউন্ডারি থেকে (৯০.৩২%) নিয়েছিলেন জয়সোয়াল।
সোমবার জয়সোয়ালকে সঙ্গী করেও কয়েকটি রেকর্ডে নাম তুলেছেন ভৈভব। দুজনে মিলে পাওয়ার প্লে-তে ৮৭ রান তুলেছেন, যা রাজস্থানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দুজনের উদ্বোধনী জুটিতে ১৬৬ রান পেয়েছে রাজস্থান, যেকোনো উইকেটে এটাই রাজস্থানের সর্বোচ্চ রানের জুটি।
এমন সব রেকর্ড যে ম্যাচে হবে, সে ম্যাচটা যে রাজস্থান অনায়াসে জিতে যাবে, সেটা সহজেই অনুমেয়। সে কারণেই গুজরাটের ২০৯ রানও সোমাবর মামুলি মনে হয়েছে। সে রান ইনিংসের ২৫ বল আর ৮ উইকেট হাতে রেখেই টপকে গেছে রাজস্থান। আইপিএলে ২০০ এর অধিক সফল রান তাড়ায় সবচেয়ে বেশি বল হাতে রেখে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড এখন এটাই।