দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট দিয়ে ঘরের মাঠে নিজের দীর্ঘ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের অধ্যায়টা শেষ করতে চান সাকিব। এরপর তিনি খেলবেন শুধুই ওয়ানডে। আর সেই ফরম্যাটে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে বাংলাদেশের আর কোনো হোম ম্যাচ নেই। তাই ঘরের মাঠে নিজের চেনা দর্শকদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার এটাই শেষ সুযোগ।
কানপুরে বলে রেখেছিলেন, নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মিরপুরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলেই দেশে এসে শেষ টেস্ট খেলতে চান তিনি। পরবর্তীতে নানারকম অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও কদিন আগেই বাংলাদেশে ফেরার সবুজ সংকেত পেয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সেই সংকেত পেয়ে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দেশে ফেরার সকল বন্দোবস্ত করে রেখেছিলেন তিনি।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আসার পথে দুবাইয়ে যাত্রাবিরতি আছে সাকিবের। কিন্তু গতকাল দুবাইয়ে পৌঁছানোর পর তিনি বাংলাদেশ থেকে বার্তা পান আপাতত ঢাকায় আসার বিমানে না চড়তে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না জানানো পর্যন্ত যেন তিনি দুবাইয়ে অবস্থান করেন। নিরাপত্তার কারণেই সাকিবকে ওই বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
মিরপুরে শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে বিগত কয়েকদিনের পরিস্থিতি সেইসঙ্গে অন্যান্য জটিলতার কারণেই এমন অবস্থায় দুবাইয়ে থামতে বলা হয়েছে তাকে।
গত কয়েক দিন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সাকিবের বিরুদ্ধে কিছু মানুষ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করেছেন, দেয়াললিখন লিখেছেন। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। সাকিবকে যেন দেশের মাটিতে শেষ টেস্ট খেলতে না দেওয়া হয়, সে দাবি নিয়ে আজকেও একটি পক্ষের স্মারকলিপি নিয়ে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে যাওয়ার কথা।
বুধবার রাতে হঠাৎ সাকিবের দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা ছড়িয়ে পড়েছে।
সংবাদমাধ্যম ইউএনবি বলছে, বুধবার সাকিবের কুশপুত্তলিকা পড়ানোর ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা জেগেছে আবার।
ইউএনবি জানিয়েছে, একজন শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মানুষের ক্ষোভ দেখে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সাকিবকে ঢাকায় না ফেরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কলকাতাভিত্তিক পত্রিকা সংবাদ প্রতিদিন বলছে, বাংলাদেশে ফেরার জন্য ইতোমধ্যে দুবাই হাজির হলেও রাতের সাকিবের ঘনিষ্ঠ মহল নাকি জানিয়েছে এরপর আর যাওয়া হচ্ছে না তার। দুবাইয়ে নামার পর নাকি তাঁকে বাংলাদেশ থেকে জানানো হয়েছে, এখন বাংলাদেশে না আসাই ভালো।
এদিকে ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাকিবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ছাত্ররা জানিয়েছে আজ তারা বিসিবি কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে সাবেক অধিনায়ক যেন স্টেডিয়ামে ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে অনুরোধ করবেন। এবং অন্যান্য ছাত্রদের বিসিবি কার্যালয়ে এসে এই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করেছেন ক্রিকেটভক্তরা।
গত মাসে কানপুর টেস্ট শুরুর আগে নিজের অবসরের দিনক্ষণ ঠিক করে দিয়ে সাকিব বলেছিলেন ঘরের মাঠেই ক্যারিয়ার শেষ করতে চান। এবং সে অনুযায়ী আগামী ২১ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া মিরপুর টেস্টই তার শেষ টেস্ট।
তবে একটি শর্তও দিয়েছিলেন সাকিব। দেশে ফিরলে অহেতুক হেনস্তা করা হবে না, সে নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন বোর্ডের কাছে। আদাবরের রিংরোডে আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিহত পোশাকশ্রমিক রুবেলের হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহ প্রায় দেড় শ জনকে আসামি করা হয়েছে। সে মামলার ২৮তম আসামি সাকিব।
এ ছাড়া ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি বলে গত জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র আন্দোলনের সময় এ ব্যাপারে একদম নিশ্চুপ ছিলেন সাকিব। এতে ক্রিকেট সমর্থকদের বেশ বড় একটি অংশ সাকিবের উপর ক্ষুব্ধ।
প্রথমে বোর্ড থেকে তার নিরাপত্তার কোনো দায় না নেওয়া হলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা জানিয়েছেন দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, এমন কিছু যেন না হয় সেটা নিশ্চিত করা হবে। এরপর সাকিব ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে নীরবতার জন্য ক্ষমা চান। এরপর টেস্ট দলে তার অন্তর্ভুক্তিতে মনে হয়েছিল নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চয়তা পেয়েই দেশে ফিরছেন তিনি।
ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিসিবি সূত্র জানিয়েছিল আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা তার।
দুবাইয়ে অবস্থানরত সাকিবের সঙ্গে গভীর রাত পর্যন্ত একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলেননি। যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছে আইসিসির সভায় যোগ দিতে বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থারত বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গেও। কিন্তু তারাও এ নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেননি।