বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতিটা ভাল হয়নি বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে হারতে হয়েছে ওয়ানডে সিরিজ। নিজেদের সেরা ফরম্যাটে বাংলাদেশকে অনেকটা হেসে খেলে হারিয়েছে কিউইরা। প্রথম ওয়ানডে বৃষ্টির কারণে পরিত্রক্ত হয়। আর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টাইগাররা হারে ৮৬ রানে। আর সিরিজ বাচানোর লড়াইয়ে শেষ ম্যাচে শান্তর দল হারে ৭ উইকেটে। তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দেওয়া ১৭২ রানের লক্ষ্য ৩৪ ওভার ৪ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে টপকে যায় কিউইরা।
অধিনায়ক অভিষেকটা হার দিয়ে শুরু হল নাজমুল হোসেন শান্তর। লিটনের জায়গায় বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় শান্তর কাঁধে। তবে প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে ব্যর্থ তিনি। তবে, দলকে জেতাতে না পারলেও, ইনজুরির থেকে ফিরে ব্যাট হাতে দারুণ খেলেছেন শান্ত। দলের হয়ে একাই লাড়াই করেন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৭৬ রান। এই ইনিংসের ফলে ভাঙলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ২৫ বছরের রেকর্ড। ১৯৯৮ সালে ভারতের মোহালিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয় আমিনুল ইসলাম বুলবুলের। বাংলাদেশের চতুর্থ অধিনায়ক হিসেবে সে ম্যাচে বুলবুল করেন ৭০ রান।
টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা সেই ব্যর্থতার গল্প দিয়ে। ৮ রানের ভিতর নেই দুই ওপেনার অভিষিক্ত জাকির হোসেন ও তানজিদ হাসান তামিম। তামিম ৫ ও জাকির করেন ১ রান। এই দুজনের উইকেট তুলে নেন ট্রেন্ট বোল্ট ও অ্যাডাম মিলনে।
তাদের বিদায়ের পর অধিনায়ক শান্তর সঙ্গে জুটি বাঁধার জন্য উইকেটে আসেন তাওহীদ হৃদয়। দলকে ৩৫ রানে রেখে এরপর ফিরে যান তাওহিদ হৃদয়। ১৭ বলে ১৮ রান করা হৃদয় মিলনের দ্বিতীয় শিকার হয়েছেন পয়েন্ট সহজ ক্যাচ তুলে।
চতুর্থ উইকেটে টাইগাররা গড়ে তোলে ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি। মুশফিকুর রহিম ও শান্ত গড়েন ৫৩ রানের জুটি। তবে, এরপর ফিরে যান মুশফিক। ফার্গুসনের বাড়তি বাউন্সারের বলটি ঠেকালেও বলটি মাটিতে পড়ে দিক বদলে আবার চলে যায় স্টাম্পের দিকে। পা দিয়ে বল সরাতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন ২৫ বলে ১৮ রান করা মুশফিক।
মুশফিকের বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহ যখন সঙ্গ দিচ্ছিলেন নাজমুলকে বোঝা যায়নি ১৭১ রানেই থামবে বাংলাদেশ। দুজনের পঞ্চম উইকেটে আসে ৪৯ রান। মিলনের তৃতীয় শিকার হয়ে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দেওয়ার আগে ২৭ বলে ২১ রান করেছেন প্রথম রানটি করেই চতুর্থ বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ৫ হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়া মাহমুদউল্লাহ।
রিয়াদের বিদায়ের পর শান্তকে সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হয় লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৭৬ রানে যখন শান্ত আউট হন দলীয় রান তখন ১৬৮। অফ স্পিনার কোল ম্যাকনকিকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লু হয়েছেন তিনে নামা নাজমুল। এরপর তাঁর দল টিকেছে আর মাত্র ৩.১ ওভার, যোগ করেছে মাত্র ৩ রান। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৩৬ রান খরচে ৪ উইকেট নেন অ্যাডাম মিলনে।
১৭২ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে কিউইরা শুরুটা করে দারুণ। উদ্বোধনী জুটিতে তোলে ৪৯ রান। দুই ওপেনার ফিন অ্যালেন ও উইল ইয়াং এই রান তুলতে খেলেন ৯ ওভার ১ বল। এপরিই বাংলাদেশ পেসার শরিফুল ইসলামের জোড়া আঘাত। এই পেসারের বল পুল কেরতে গিয়ে ব্যক্তিগত ২৮ রানে নাসুম আহমেদের হাতে ক্যাচ দয়ে ফিরে যান ফিন অ্যালন। পরের বলেই অভিষিক্ত ফক্সক্রফটকে বোল্ড করে শরিফুল হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি করেন। শেষ পর্যন্ত হয়নি সেটা।
বিপদে পড়া ব্লাকক্যাপসদের টেনে তোলার কাজটা কাঁধে তুলে নেন হেনরি নিকোলস ও উইল ইয়াং। এই দুইজনের দারুণ ব্যাটিংই বাংলাদেশকে ছিটকে ফেলে দেয় ম্যাচ থেকে। তাদের ৮১ রানের জুটি অবশ্য ভাঙেগন নাসুম আহমেদ। ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি তুলে নেওয়া ইয়াং বোল্ড হয়ে ফেরেন ৭০ রানে।
ইয়াং ফিরলেও টম ব্লান্ডেলকে নিয়ে বাকি পথটা পাড়ি দেন নিকোলস। তুলে নেন ফিফটিও। নিকোলস খেলেন ৫০ রানের অপরাজিত ইনিংস। ব্লান্ডেল অপরাজিত থাকেন ১৯ রানে। এই দুজন মিলে ৩৪ বলে করেন ৪১ রানের জুটি। বাংলাদেশের হয়ে শরিফুল দুটি উইকেট নেন ৩২ রান খরচায়।