শেষ ওভারে জয়ের জন্য রংপুরের প্রয়োজন ছিল আট রানের। প্রথম বলে শানাকা সিঙ্গেল নেওয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে টানা বাউন্ডারি মেরে রংপুরের জয় প্রায় নিশ্চিত করেন শেখ মেহেদী।
বরিশালের দেওয়া ১৭১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারালেও শামিম পাটোয়ারির ঝড়ো ব্যাটিংয়ে জয়ের পথেই ছিল রংপুর রাইডার্স। কিন্তু দলকে জয়ের পথে রেখে শামিম ফেরার পর ম্যাচ কিছুটা হলেও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল দলটির জন্য। তবে শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনার ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে রংপুরই।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) হোম অফ ক্রিকেটে চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) এলিমিনেটরে বরিশালকে রংপুর হারিয়েছে চার উইকেটের ব্যবধানে। এই জয়ে ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে রংপুর। অন্যদিকে আসর থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে সাকিব আল হাসানের বরিশালের।
টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে দলীয় ৪৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় বরিশাল। অস্বস্তি নিয়ে ব্যাটিং করা আন্দ্রে ফ্লেচার ফিরে যান ১৬ বলে ১২ রান করে। তবে অন্যপ্রান্তে মেহেদী হাসান মিরাজের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে বরিশালের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৪৬ রান।
আগের ম্যাচে ওপেনিংয়ের পর আজ তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে নামেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শুরু থেকেই আগ্রাসী রিয়াদ ঝড়ের আভাস দিলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। দলীয় ১১৫ রানে ফেরার আগে রিয়াদের নামের পাশে যোগ হয়েছে ২১ বলে চারটি চার ও এক ছক্কায় ৩৪ রানের ইনিংস।
ততক্ষণে অবশ্য ফিফটি তুলে নিয়েছেন আরেক ওপেনার মিরাজ। ১২তম ওভারের প্রথম বলেই রংপুরের স্পিনার শেখ মেহেদীকে চার মেরে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন মিরাজ।
দলীয় ১২৬ রানে রংপুরের শ্রীলঙ্কান পেসার দাশুন শানাকার শিকার হয়ে ফেরেন মিরাজ। ফেরার আগে ৪৮ বলে ৯ চার ও এক ছক্কায় তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।
এরপর আসতে আসতে রানের গতি কমে আসে বরিশালের। করিম জান্নাত ও ভানুকা রাজাপাকশে দ্রুত তুলতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন। এরপর ১৮তম ওভারে এক ছক্কা ও এক চার মেরে রানের গতি কিছুটা বাড়ান করিম।
ডোয়াইন ব্রাভোর করা ১৯তম ওভারে তো রীতিমতো বোকা বনে গিয়েছেন করিম। কিছুতেই যেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না ব্রাভোর বল। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে ১৭০ রানের সংগ্রহ পেয়েছিল বরিশাল।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় রংপুর। বল হাতে ওভারের পঞ্চম বলে রংপুরের ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমকে ফিরিয়ে দেন বরিশাল অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
তবে শুরুর সেই চাপ মোটেও বড় হতে দেননি আরেক ওপেনার রনি তালুকদার ও তিন নম্বরে নামা শামিম হোসেন। দুজনের ব্যাটে বরং বেশ দ্রুত গতিতে রান উঠেছে রংপুরের স্কোরবোর্ডে। ছয় ওভারের পাওয়ার প্লেতে দুজনে মিলে যোগ করেন ৫৫ রান, যেটার পুরোটাই এসেছে শেষ পাঁচ ওভারে।
ইনিংসের অষ্টম ওভারে দলীয় ৬১ রানে রনি ফিরলে দ্বিতীয় উইকেট হারায় রংপুর। বরিশালের পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে সানজামুল ইসলামের ক্যাচ হয়ে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৭ বলে সমান দুই চার ও ছক্কায় ২৯ রানের ঝড়ো ইনিংস।
চার নম্বরে আগ্রাসী শুরু করলেও দ্রুত ফিরতে হয় রংপুর অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানকে। দলীয় ৯৬ রানে তাকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে দিরিয়ে দেন সাকিব। যদিও প্রথম ফিল্ড আম্পায়ার আউট দেননি তখন রিভিউ নিলে আউট ঘোষিত হন সোহান।
অন্যপাশে উইকেট গেলেও ব্যাট হাতে আগ্রাসী ব্যাটিং চালিয়ে গিয়েছেন শামিম। ৩৬ বলে ফিফটি স্পর্শ করা শামিমের ব্যাটে জয়ের পথ তৈরি হয়েছিল রংপুরের।
দলীয় ১২২ রানে ফিরে যান নিকোলাস পুরান। এরপরও লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন শামিম। কিন্তু দলীয় ১৪০ রানে শামিমও ফিরে গেলে ম্যাচের রোমাঞ্চের সম্ভাবনা উঁকি দেয়। ব্যক্তিগ ৫১ বলে সমান চারটি করে চার ও ছক্কায় ৭১ রান করা রনিকে ফেরান কামরুল ইসলাম রাব্বি।
শামিম ফেরার পর শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য রংপুরের প্রয়োজন ছিল ২৯ রান। কামরুল ইসলাম রাব্বির করা ১৮তম ওভারে শানাকা এক ছক্কা হাঁকিয়ে কাজ সহজও করে ফেলেছিলেন। তবে একই ওভারের শেষ বলে ডোয়াইন ব্রাভো ফিরে গেলে আবারও রাস্তা কঠিন হয়ে যায় রংপুরের।
শেষ দুই ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ১৫ রানের। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে চার মেরে রাস্তা সহজ করেন রংপুরের ব্যাটার শেখ মেহেদী। ওই ওভার থেকে সাত রান আসার পর শেষ ওভারর জয়ের জন্য রংপুরের প্রয়োজন ছিল আট রানের। প্রথম বলে শানাকা সিঙ্গেল নেওয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে টানা বাউন্ডারি মেরে রংপুরের জয় প্রায় নিশ্চিত করেন শেখ মেহেদী।