• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পেলে কোথাও যাচ্ছেন না, তিনি থাকছেন


ফারজানা ববি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২২, ১১:৫৩ এএম
পেলে কোথাও যাচ্ছেন না, তিনি থাকছেন

"চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে আমার না থাকা জুড়ে" রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ‍‍`র কবিতার এই লাইনটুকু এডসন আরন্তেস দো নাসিমেন্তোর জন্যই মনে হয় লেখা। 

এই নামটা আপনার কাছে পরিচিত লাগছে? ফুটবলপ্রেমী হলেও এ নাম আপনার কানে না-ই আসার কথা। কিন্তু যদি বলা হয় পেলের কথা? এই নাম শুনতে ফুটবলপ্রেমী হওয়ার দরকার নেই, পেলে ছড়িয়ে পড়েছিলেন সর্বত্র। সঙ্গীতপ্রেমী না হলেও কিছু গান যেমন আমাদের কানে এসে পৌঁছে যায়, পেলে হলেন তেমন একজন। যিনি ফুটবলের চেয়েও বেশি কিছু। যে শিল্পীর কথা গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সব মানুষের মনেও পৌঁছে গেছে। শিল্পীই তো তিনি, যার পায়ের শৈল্পিক জাদুতে তিনি বুঁদ করে রেখেছিলেন শুধু সমসাময়িক না, পরবর্তী প্রজন্মও।

১৯৭১ সালে শেষ ব্রাজিলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে মাঠে নেমেছিলেন পেলে। ৫১ বছর কেটে গেছে অথচ যাকে নিয়ে চর্চা থামছে না। কালোত্তীর্ণ শিল্পী না হলে এমন সম্ভব?

ব্রাজিলের ত্রেস কোরাকোয়েসে ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর জন্ম হয় পেলের।  টমাস এডিসনের নামানুসারে তার নাম রাখা হলেও তার নামে আই বাদ দিয়ে হয়ে যায় ‍‍`এডসন‍‍`। বিদ্যালয়ে পড়াকালীন নাম পেলেন ‍‍`পেলে।‍‍` পেলের বাবা ফুটবল খেলতেন। বাবার দেখাদেখি পেলেরও আগ্রহ হয় ফুটবলে। অবশ্য লাতিনরা ছোটবেলা কাটায় ফুটবলের সাথেই। পেলের বাবা ফুটবলার হলেও রোজগার বিশেষ ছিল না। তাই পেলের পড়াশোনাও আগায়নি বেশিদূর। তবে মনে পুষতেন সেই গোল বস্তুটাকেই। একটু বড় হয়েই পেলে খেপ খেলতে শুরু করেন অপেশাদার লিগে। এখানেই নজরে পড়েন ব্রিটোর। তিনি পেলেকে নিয়ে যান ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব সান্তোসে।

তারপর কেবল ইতিহাস। ১৯৫৬ সালে পেশাদার লিগে চুক্তি করার মাত্র ১০ মাস পরেই পেলে সুযোগ পান জাতীয় দলে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পান পেলে। স্বপ্নের যাত্রার শুরুটাও স্বপ্নের মতো হয়। সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপ খেলা, ফ্রান্সের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক, ফাইনালে সুইডেনের বিপক্ষে জোড়া গোল- স্বপ্নের শুরু হতে আর কী চাই?

১৯৬২ সালের বিশ্বকাপে চোটে ছিটকে যান পেলে। তাতে কী? গারিঞ্চার কল্যাণে বিশ্বকাপ সেলেসাওদের হাতেই ওঠে। ১৯৭০ সালে পেলে খেলেন সর্বশেষ বিশ্বকাপ। ফাইনালে ইতালিকে হারিয়ে অনন্য রেকর্ড গড়েন পেলে। তিনিই এখন পর্যন্ত একমাত্র ফুটবলার যার তিনটি বিশ্বকাপ আছে।

পেলের দুর্দান্ত সময়ে তাকে পেতে মুখিয়ে ছিল বড় বড় দলগুলো। কিন্তু ব্রাজিলের আদরের ‍‍`কালোমানিক‍‍` দীর্ঘ ১৮ বছর খেলেছেন নিজের দেশের ক্লাব সান্তোসেই। এরপর যুক্ত হয়েছিলেন নিউইয়র্ক কসমসে। ক্লাবের হয়ে ৬৫৯ ম্যাচে তার গোলসংখ্যা ৬৪৩টি। দেশের হয়ে খেলেছেন ৯২ ম্যাচ, গোল পেয়েছেন ৭৭টি।

বেশ কয়েক বছর জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন এই কিংবদন্তি। কিডনি ও প্রটেস্টের সমস্যা তাকে কাবু করে দিয়েছিল। ভর্তি ছিলেন ব্রাজিলের সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে।
বিশ্বকাপের ভেতরই গুজব ছড়ায় পেলের মৃত্যু নিয়ে। কিংবদন্তি নিজেই জানিয়েছেন তখন, বেঁচে আছেন, সুস্থ আছেন। এবার আর হলো না। ২৯ ডিসেম্বর রাত ১টায় ব্রাজিলিয়ান তারকা ৮২ বছর বয়সে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

নশ্বর দেহ, যাবেই। কিন্তু ব্রাজিলের আদুরে ‍‍`কালোমানিক‍‍` কি কোথাও যাচ্ছেন? না, তিনি থাকছেন, ফুটবলের সাথেই জুড়েছেন তার নাম অনন্তকালের জন্য। 
 

Link copied!