বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতির চেয়ারে বসেছিলেন সেই ২০১২ সালের অক্টোবরে। এরপর আর সেই চেয়ার ছাড়েননি। চেয়ারও তাকে ছাড়া আর কাউকে বসতে দেয়নি। টানা এক যুগ ধরে সেই বিসিবির সভাপতির বসে ইচ্ছেমতো সবই করেছেন নাজমুল হাসান পাপন।
বোর্ডের অন্য সব চেয়ারে পছন্দের লোক বসিয়ে রীতিমত রাম রাজত্ব শুরু করেছিলেন। যে রাজত্ব একেবারে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর পাপনেরও পতন হয়ে গেছে। অবসান ঘটেছে এক যুগের পাতন রাজত্বের। এবার বিসিবির হাল ধরতে আসছেন নতুন সভাপতি।
সরকার পতনের পর থেকেই রয়েছেন পলাতক পাপন। যেকোনো সময় পদত্যাগের খবর আসতে পারে। অনেকেই বলছেন, পাপনের সেই ‘ঐতিহাসিক’ পদত্যাগের পরই বিসিবিতে আগমন ঘটবে নতুন সভাপতির। তবে নতুন সভাপতি কে হচ্ছেন তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। এর মধ্যে কয়েকজনের নামও শোনা যাচ্ছে।
বিসিবির সম্ভাব্য সভাপতি হিসেবে আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। এরই মধ্যে ক্রীড়া উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে।
ফারুক আহমেদ ছাড়াও জাতীয় দলের সাবেক দুই অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও খালেদ মাসুদ ফাইলট আছেন আলোচনায়। পাশাপাশি ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক নাজমূল আবেদীন এবং বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) সাবেক প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হকের নাম শোনা যাচ্ছে।
তবে অন্যদের চেয়ে সম্ভাবনায় এগিয়ে থাকা ফারুক আহমেদ জানালেন, উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। ক্রিকেট বোর্ড পুনর্গঠনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাকে একটা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তিনি তাতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। আরও দুই ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের সঙ্গে উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে যোগাযোগের কথা নিশ্চিত করেন তিনি।
যেভাবে পদ পাবেন ফারুক আহমেদ
প্রধান নির্বাচক হিসেবে দায়িত্বে থাকার সময় ফারুক আহমেদের অনেক সাফল্য রয়েছে। তবে বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ করে নাজমুল হাসানের বোর্ডের চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় ক্রীড়াঙ্গনের তার ভাবমূর্তি ইতিবাচক। আইসিসির নিষেধাজ্ঞার ভয় থাকায় সরকার সরাসরি কাউকে সভাপতি পদে বসাতে পারবে না। নাজমুল হাসান পদত্যাগ করলে বিসিবির গঠনতন্ত্র অক্ষুণ্ন রেখে সেখানে নতুন সভাপতি আসবেন। সেই হিসেবে ফারুককে আগে বিসিবির পরিচালক হতে হবে। তারপর পরিচালকেরা ভোট দিয়ে নিজেদের মধ্য থেকে নতুন সভাপতি নির্বাচন করবেন। কিন্তু সেই প্রক্রিয়াও জটিল এবং সময়সাপেক্ষ।
তবে ফারুক আহমেদকে বোর্ডে আনার আরও একটি সহজ পথ রয়েছে। তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মনোনীত প্রতিনিধি। সেখান থেকে তাকে বোর্ড পরিচালক করা সহজ হবে। এনএসসি মনোনীত কাউন্সিলর হিসেবে বিসিবি পরিচালক পদে রাখা হয় জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলমকে। এরই মধ্যে জালাল ইউনুস পদত্যাগ করেছেন। ফলে ফারুক আহমেদের বিসিবিপ্রধানের দায়িত্ব পাওয়া একরকম নিশ্চিত হয়ে গেছে।
বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুসারে, ফারুক আহমেদ আগে বোর্ড পরিচালক হবেন। এরপর তিনি সহ-সভাপতি পদে মনোনয়ন পাবেন। পরবর্তীতে পরিচালকদের ভোটে সহ-সভাপতি থেকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হবে।
গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে এবং আইসিসির নিয়মের বাইরে কিছু করলে দেশের ক্রিকেটের ওপর নেমে আসতে পারে নিষেধাজ্ঞা। যেকারণে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, আইসিসির নিয়ম মেনেই যা করার করা হবে। তিনি বলেছেন, সংস্কার করব পদ্ধতির, ব্যক্তির নয়। সিস্টেমটা যারা দুর্নীতিগ্রস্ত করেছে, তাদের পরিবর্তন আসবে।