৯ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ার, অথচ ডাচদের হয়ে অভিষেক ম্যাচটি ছিল তার পেশাদার ক্যারিয়ারের ৫১তম ম্যাচ। যার মধ্যে ৩৪টি ম্যাচ খেলেছেন শেষ দুই বছরে। দুই মাস আগে যাকে নেদারল্যান্ডস দলের আশেপাশেও দেখা যায়নি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে একবার ডাচ দলে ডাক পেলেও মাঠে নামার সুযোগ পাননি। কার কথা বলছি? বলছি নেদারল্যান্ডস দলের গোলরক্ষক আন্দ্রিস নোপের্টের।
যার জীবন বা পেশাদার ক্যারিয়ার যেটাই বলেন পুরোটাই রোমাঞ্চকর উপন্যাসের মতো। দুই সপ্তাহ আগে নেদারল্যান্ডসের প্রথম একাদশে যার কোনো অস্তিত্ব ছিল না সেই এখন বিশ্বকাপে গোলপোস্ট সামলাচ্ছেন।
৯ বছর আগে ২০১৩ সালে ডাচ ক্লাব হেরেনভেনের জার্সিতে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন নোপের্ট। অথচ প্রথম পেশাদার দলের হয়ে কোনো ম্যাচ খেলারই সুযোগ পাননি তিনি। এক বছর পর বর আরেক ডাচ ক্লাব ব্রেদায় পাড়ি জমান।
সেখানে চার বছর কাটালেন। তবে ব্রেদায় তার কাটানোর বছরের চেয়ে ম্যাচ খেলার সংখ্যা ছিল কম। চার বছরে তিন ম্যাচ!
এরপরা চরম হতাশ নোপের্ট নিজ ক্লাব ছেড়ে যোগ দেন ইতালিয়ান ক্লাব ফোজ্জায়। যারা সিরি ‘বি’ লিগে খেলে। ইতালিতে পৌঁছে যে এরকম ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হতে হবে সেটা বোধহয় কখনো কল্পনাও করেননি।
প্রথমে যে গাড়িতে ফোজ্জা পৌছালেন, সেটা চুরি করলো ফোজ্জিয়ান মাফিয়ারা। এই ধাক্কা সামাল দিয়ে মাঠে খেলায় মনোযোগী হতে চেয়েছিলেন। তবে সেখানেও হলো না।
মাট আট ম্যাচ খেলার পরই রীতিমতো অবনমন ঘটে ক্লাবের। ফলে শেষ পর্যন্ত ইতালিতেও থিতু হতে না পেরে দেশে ফিরে যান নোপের্ট। এরপর নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় স্তরের ক্লাব ডোরড্রেখটে যোগ দেন। কিন্ত্য সেখানেও হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এখানে মাত্র দুই ম্যাচ খেলেই চোটে পরেন, ক্লাবও তাকে ছেড়ে দেয়। এমনকি ২০২০ সালের জুন থেকে শেষ পর্যন্ত বেকার হয়েই বসে ছিলেন তিনি।
এমনকি এক পর্যায়ে পরিবারের চাপে ডাচ পুলিশে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তও প্রায় নিয়ে ফেলেছিলেন। তবে এরপর শুরু হয় নোপের্টের ঘুরে দাড়ানোর গল্প।
যে গল্পে যেন স্বর্গ থেকে দূত হয়ে আসে ডাচ লিগে শীর্ষ দল গোল অ্যাহেড ইগলস। যাদের ওই মুহূর্তেই এখন গোলরক্ষক প্রয়োজন ছিল। ছয় মাসের চুক্তিতে তারা তখন নোপের্টকে দলে ভেড়ায়।
এই ছয় মাসেই ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ ঠিক করে ফেলেন নোপের্ট। গোলপোস্টের নীচে তার দুর্দান্ত পারফর্মেন্স চোখে পড়ে তার প্রথম ক্লাব হেরেনভেনের। দ্রুত সময়ে রমধ্যে ছয় মাসের চুক্তিতে নোপের্টকে দলে ভেড়ায় তারা।
হেরেনভেনের হয়েও পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন নোপের্ট। এবার আসল চোখটা পড়ে তার উপর, যেটা নেদারল্যান্ডস দলের হেড কোচ লুইস ফন গালের। যদিও প্রথম ডাকে তাকে বাইরে বসিয়ে রেখেছিলেন!
তবে দুই সপ্তাহ আগেও ডাচদের একাদশে না থাকা সেই নোপের্টকেই এবার বিশ্বকাপে প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে খেলাচ্ছেন গাল। কোচের আস্থার প্রতিদান এখন পর্যন্ত বেশ ভালোই দিয়েছেন তিনি।
লম্বা হতাশার জীবন পার করে এসে এখন প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন নোপের্ট। তার পরিমাণ এত বেশি যে, স্বয়ং লিওনেল মেসিকেও হুঙ্কার ছুড়তে দিধাবোধ করছেন না। অবলীলায় বলে দিচ্ছেন, মেসিও মানুষ, সেও মিস করতে পারে। মেসিকে আটকাতে তিনি প্রস্তুত হয়েই মাঠে নামবেন।
কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মাঠে নামবে নেদারল্যান্ডস। ফলে মেসির দিকেই যে পুরো ডাচ দলের চোখ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে শেষ রক্ষা তো নোপের্টকেই করতে হবে।
ম্যাচের আগের দিন কাতারের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক মিটার দূরত্বের মধ্যেই অনুশীলন করেছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। ছয় ফুট আট ইঞ্চির নোপের্ট নিশ্চয়ই একটু দূর থেকেও পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চির মেসিকে ভালো করেই দেখে নিয়েছেন। হয়তো দূর থেকেই মেসিকে আটকানোর কৌশলও ঠিক করে ফেলেছেন। এখন লড়াইটা মাঠে গড়ালেই হলো…