• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘সুযোগ থাকলে সাকিবকে আয়ারল্যান্ড দলে চাইতাম’


সৌরভ কুমার দাস
প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৩, ০৪:০৮ পিএম
‘সুযোগ থাকলে সাকিবকে আয়ারল্যান্ড দলে চাইতাম’

১৩৭ টেস্ট খেলা বাংলাদেশের সামনে আয়ারল্যান্ড খেলতে নেমেছে চতুর্থ টেস্ট। ২০১৭ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া দলটি চার বছর পর ফিরেছে সাদা পোশাকে।  এই টেস্ট দিয়েই অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু হচ্ছে আইরিশ ব্যাটার অ্যান্ড্রু ব্যালবার্নি। ছেলের এমন অর্জনের দিনে সুদূর আয়ারল্যান্ড থেকে ছুটে এসেছেন ব্যালবার্নির বাবা ও মা।

হোম অব ক্রিকেটের গ্রান্ডস্ট্যান্ডে বসা ছয় ফুট ছাড়ানো উচ্চতার ভদ্রলোকের নাম অ্যাশলি ব্যালবার্নি। শুধু বাবা না ছেলের এমন বিশেষ দিনে এসেছেন তার মা ক্যান্ডি লাপপিনও। মাঠে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে ছেলে, গ্যালারিতে সেটার সাক্ষী হচ্ছেন বাবা-মা। এই অনুভূতি জানার লোভ সামলানো গেলো না। ছুটে যেতে হলো গ্রান্ডস্ট্যান্ডে, সংবাদ প্রকাশ আলাপও করলো ব্যালবার্নির বাবা-মায়ের সাথে।

ছেলের অধিনায়ক হিসেবে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এমন দিনে গ্যালারিতে উপস্থিত ব্যালবার্নির বাবা অ্যাশলে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শুরুতেই।

তিনি বলেন, “তাকে নিয়ে আমি গর্বিত। যেটা ভালোবাসে সেটাই করছে সে, একই সাথে এটা করতে পেরে সে উচ্ছ্বসিতও। তাকে মাঠে দেখে আমরাও সমান উচ্ছ্বসিত।”

ব্যালবার্নির ছোটবেলায় তার বাবা-মা আয়ারল্যান্ডে বাস শুরু করেন। ছোট থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। ছেলের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তার বাবা।

অ্যাশলে বলেন, “আমরা আয়ারল্যান্ডে মুভ করি তখন তার বয়স যখন ছয় বছর। সেখানে আমরা যে বাড়িতে বাস করা শুরু করি সেটার কাছে মাঠ আছে। ছোটবেলায় তাকে বড় হয়ে কি হতে চাও জিজ্ঞাসা করলে সে বলতো, আমি একজন পেশাদার ক্রিকেটার হতে চাই। এমনকি এখনও একই কথাই বলে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা বলতাম আগে তোমাকে স্কুল শেষ করতে হবে। সো, তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে এটা দেখে আমরা উচ্ছ্বসিত। আর এটা করার জন্য বাংলাদেশের মতো সুন্দর দেশেও সে আসতে পেরেছে।”

তবে অ্যাশলে ও তার স্ত্রী চাইতেন ছেলে স্কুলে যাবে, কলেজে যাবে। তাদের ইচ্ছাই ছিল ব্যালবার্নি পড়াশোনায় মনোযোগ দিবে। তবে ব্যালবার্নি তাদের কথাও শুনেছে নিজের স্বপ্নের দিকেই ছুটেছে, এই কারণে বাবা-মায়ের উচ্ছ্বাসটাও বেশি।

“আমরা চাইতাম সে স্কুল শেষ করে কলেজে যাবে। সে সেটা করেছে, ইংল্যান্ডের এমসিসি কলেজে পড়াশোনা করেছে। সে একই সাথে দুইটাই করেছে, বাবার কথাও শুনেছে ক্রিকেটার হওয়ার দিকেও এগিয়েছে। তবে সে সবসময়ই ক্রিকেটার হতে চাইতো” যোগ করেন অ্যাশলে।

ক্রিকেট আয়ারল্যান্ডে অত জনপ্রিয় খেলা নয়। এমনকি ব্যালবার্নির বাবা-মায়ের মতে সেখানে ক্রিকেট হয়তো দশম খেলা হতে পারে। তবে এশিয়ান দেশ থেকে মানুষ যেয়ে সেখানে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছে বলে জানান তিনি।  

অ্যাশলে বলেন, “এটা (ক্রিকেট) আয়ারল্যান্ডে জনপ্রিয়তার দিকে দশম খেলাও নয় হয়তো। এটা আমাদের দেশে খুবই ছোট খেলা কিন্তু এটার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কারণ, আয়ারল্যান্ডে বিভিন্ন দেশ থেকে লোক আসে, এশিয়ান দেশ থেকেও। যারা ক্রিকেট পাগল দেশে বড় হয়েছে, তারা ক্রিকেট খেলতে চায় সেখানে।”

জনপ্রিয়তা কম হওয়ায় ক্রিকেটারের তালিকাও ছোট বলে জানান অ্যাশলে। এ কারণেই তিন ফরম্যাটে প্রায় একই ক্রিকেটারদের খেলতে হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

অ্যাশলে বলেন, “ক্রিকেট সেখানে উন্নতি করছে তবে এটা এখনও অনেক ছোট খেলা। আমাদের ক্রিকেটারদের সংখ্যাও খুবই কম। তুমি যদি খেয়াল করো প্রায় একই গ্রুপ তিন ফরম্যাট একসাথে খেলছে কারণ আমাদের খুবই কম খেলোয়াড়। আস্তে আস্তে ক্রিকেটার বাড়ছে বাট এখনও পরিমাণ অনেক কম।”

আগে ইংল্যান্ডে ইংলিশ খেলোয়াড় হিসেবে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে পারতেন আইরিশ ক্রিকেটাররা। তবে সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাউন্টিতে আইরিশ খেলোয়াড়দের সুযোগ কমে এসেছে। তবে একই সাথে এটার কারণেই আইরিশ ঘরোয়া ক্রিকেটে পেশাদারিত্ব বেড়েছে বলে মনে করেন ব্যালবার্নির বাবা।

তিনি বলেন, “আইরিশ খেলোয়াড় এখন কাউন্টিতে বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে গণ্য হয়। এর ফলে কাউন্টিতে খেলার সুযোগ কমে এসেছে তাদের। অন্যদিকে দেখলে, এর ফলে আইরিশ ঘরোয়া লিগ এখন আগের চেয়ে বেশি পেশাদার হয়েছে।”

ব্যালবার্নি খেলা দেখতে এখন পর্যন্ত অনেক দেশেই গিয়েছেন অ্যাশলে- ক্যান্ডি লাপপিন দম্পতি। তবে বাংলাদেশে তাদের আগমণ এবারই প্রথম।

“ব্যালবার্নির খেলা দেখতে আমরা অনেক দেশে গিয়েছি। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, জিম্বাবুয়ে, কানাডা, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস। বাংলাদেশে এবারই প্রথম এসেছি এবং সামনে শ্রীলঙ্কাই যাচ্ছি প্রথমবার” যোগ করেন অ্যাশলে।

বাংলাদেশে এসে সবই উপভোগ করছেন অ্যাশলে। তবে এখানকার জ্যামকে দারুণ ভয় পান তিনি। এজন্য নাকি চলার পথে গাড়িতে চোখ বন্ধ করে রাখছেন।

অ্যাশলে বলেন, “বাংলাদেশে এসে খুবই উপভোগ করছি। এখানে অনেক মানুষ। ঢাকার জনসংখ্যা পুরো আয়ারল্যান্ডের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। আমি খুব বেশি জ্যাম দেখিনি কারণ আমার চোখ বন্ধ ছিল। এটা আমার জন্য খুবই ভয়ঙ্কর বিষয়।”

ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে ছেলেকে নতুন কোনো জীবন খুঁজে নেওয়ার তাদিগ অ্যাশলের। তার ধারণা ব্যালবার্নি কোচিংয়ে আসবে না। তিনি বলেন, “আমার মনে হয় না তার কোচ হওয়ার কোনো আগ্রহ আছে। সে যদি কখনো কোচিংয়ে আসে আমি খুবই অবাক হবো। আমার মনে হয় খেলার প্রতি আবেগ আর কোচিংয়ের প্রটি আবেগের পার্থক্য রয়েছে।” 

২০২৩ বিশ্বকাপে খেলার জন্য বাছাই পর্ব খেলতে হতে পারে আয়ারল্যান্ডের। সেটা উৎরাতে পারলে ভারতেও বিশ্বকাপ দেখতে আসবেন তারা। “আশা করি আসবো (বিশ্বকাপে)। তবে তার আগে আমাদের জিম্বাবুয়েতে বাছাই পর্ব খেলতে হবে। সেটা পার করতে হবে আমাদের অথবা তার আগে ইংল্যান্ডকে বাংলাদেশকে ৩-০ ব্যবধানে হারাতে হবে” যোগ করেন অ্যাশলে।

আয়ারল্যান্ডে থাকলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে ঠিকই চোখ থাকে অ্যাশলের। টাইগার পেসার তাসকিনের আহমেদের বড় ভক্ত তিনি। এছাড়া সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসেও নিজের মুগ্ধতার কথা জানান অ্যাশলে।

তিনি বলেন, “অ্যান্ড্রু খেলেছে বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের হয়ে। আমি সত্যিই তাসকিনকে নিয়ে মুগ্ধ।  এছাড়া বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার সাকিবের কথা বলতেই হবে। লিটন দাস অসাধারণ ব্যাটার।

সুযোগ থাকলে চাইতাম সাকিব আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলুক। তার মতো খেলোয়াড় পেতে ভাগ্য লাগে। এছাড়া তামিমকেও চাইতাম হয়তো।”

Link copied!