• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাংলাদেশে ফুটবল নিয়ে যা চলছে তা রীতিমতো উন্মাদনা


আসিফ মাহমুদ
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২২, ০৮:৩২ পিএম
বাংলাদেশে ফুটবল নিয়ে যা চলছে তা রীতিমতো উন্মাদনা

খেলা নিয়ে পাগলামি, তর্ক-বিতর্ক পৃথিবীর সব দেশেই মোটামুটি আছে। তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এই দ্বন্দ্ব সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও লক্ষ্য করা যায়। খেলাপ্রেমীদের এই দ্বন্দ্ব নতুন আমেজ নিয়ে আসে বিভিন্ন আসরে। তবে ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশে ফুটবল নিয়ে যা চলছে তা রীতিমতো উন্মাদনা, শুধু পাগলামি না!

বাংলাদেশে জনপ্রিয় দুটো খেলা হলো ক্রিকেট আর ফুটবল। দুটোর কোনোটিই আমাদের জাতীয় খেলা না। তবুও খেলাদুটো নিয়ে ভক্তদের মধ্যে আগ্রহ তুমুল, উচ্ছ্বাস বাঁধ ভাঙা। বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের অবস্থান তুলনামূলক ভালো। এ প্রেক্ষাপটে ক্রিকেট নিয়ে পাগলামি একটু হলেও যৌক্তিক। কিন্তু যেখানে ফুটবলে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯২তম, সেখানে কেন এতো উচ্ছ্বাস? আবার সেটা যদি বাংলাদেশ ফুটবল নিয়ে হতো, তাহলেও মানা যেতো। কিন্তু আমাদের উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা তো ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে ঘিরে।

ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে জার্সি ও টেলিভিশন বিক্রি বেড়ে গেছে বহুগুণ। চায়ের কাপে ঝড় ওঠছে ফুটবল নিয়ে। রাঙ্গামাটিতে দুটি ব্রিজ রং করা হয়েছে আর্জেন্টিনার পতাকার আদলে, আরেকটি ব্রাজিলের পতাকার আদলে। বিশাল বিশাল পতাকা বানাচ্ছেন কেউ কেউ। যানবাহন, ঠেলাগাড়ি, বাড়ির বারান্দা, টিনের চাল সবজায়গায় আছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার চিহ্ন। এই একমাস কথা হবে কেবল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে। অন্যান্য দল নিয়েও কথা হবে, তবে এই দলদুটোর পাল্লাই সবচেয়ে ভারী। তর্ক জমে বেশ।

অনেকে তো ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সাপোর্টার বাদে অন্যদের কোনো জাতেরই মনে করেন না। এই যেমন ওয়াহিদ সাহেব বলেন, “আমার স্ত্রী আর আমি ব্রাজিল সাপোর্টার। আমার স্ত্রীর পরিবার সব আর্জেন্টিনা। মাঝখান থেকে কোত্থেকে এসে আমার ১০ বছর বয়সের ছেলে বেলজিয়াম সাপোর্ট করে। আমার ছোট এক চাচাতো ভাই করে জার্মানি। বুঝলাম না কিছু, এই বেলজিয়াম-জার্মানি সাপোর্ট করে কোনো মজা আছে?”

হাজার হাজার মাইল দূরের দেশগুলো নিয়ে আমরা তর্ক করে মুখে ফেনা তুলে ফেলি, চোখের পানি ফেলি, একে অন্যের চুল ছিঁড়ি, মাথায় ইট ভাঙি, আরও কতো কিছুই না করি! কিন্তু ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা উন্মাদনা থামে না। কী করে দেশের ১৭ কোটি মানুষ বিদেশী দুটো দেশ নিয়ে দুই পক্ষ হয়ে গেল? কীভাবে কোনোদিন ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনায় না গিয়েও, দেশদুটোর কোনো মানুষের সাথে না মিশেও, তাদের ফুটবলকে ভালোবেসে ফেলল?

খেলার দুনিয়ায় আমাদের দেশে প্রচলিত একটি কথা আছে। বলা হয়, ‘আমরা ভালোবেসেছি ফুটবলকে, আর বিয়ে করেছি ক্রিকেটকে’। তাই ক্রিকেটে যত ভালোই আমরা করি না কেন, আমাদের মন পড়ে থাকে ফুটবলে। আমাদের ফুটবল দলগুলো ভালো করতে পারছে না বলে মাঠে দর্শক থাকে না। অথচ পাড়ায় বা এলাকায় ফুটবল খেলা আয়োজন হলে, দর্শক সামলাতে হিমশিম খায় আয়োজকরা। বাড়ির চালে, গাছের ডালে যেখান থেকেই একটু খেলা দেখা যায়, সেখানেই চড়ে বসে কৌতুহলী দর্শক।

নিজ দেশে ফুটবল চর্চার অভাবেই হোক, কিংবা পরদেশের প্রতি টান, যে কারণেই হোক না কেন, বাংলাদেশে ৪০ বছর ধরে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দ্বৈরথ বর্তমান। ১৯৮০ সালের পর যখন রঙিন টেলিভিশন আসতে শুরু করল আমাদের দেশে, তখন থেকেই সদ্য স্বাধীন দেশে জনপ্রিয়তা পায় বিশ্বকাপ ফুটবল। মানুষের মন কাড়ে প্রিয় ফুটবলারদের রঙিন জাতীয় পতাকা। বাংলাদেশি ভক্ত পায় ম্যারাডোনা আর পেলে। সেই থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেড়েই চলছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। আর তাদের উৎসাহ দিতে বাংলাদেশি ভক্তদের টানে ঢাকায় চলে আসে মেসির দল।

সত্যিই খেলা অদ্ভুত, বাংলাদেশে আরও অদ্ভুত ফুটবল!

 

সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট

Link copied!