গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বুলস মাস্টার্সের আয়োজিত একটি প্রীতি টুর্নামেন্টে অংশ নিতে কুইন্সল্যান্ড যাওয়ার পথে গাড়িতেই হার্ট অ্যাটাক হয় অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উইকেটকিপার রড মার্শের। তখনই জানা গিয়েছিল তার শারীরিক অবস্থা খুব সংকটাপন্ন। হার্ট অ্যাটাকের পর কোমায় ছিলেন তিনি।
অতঃপর শুক্রবার (৪ মার্চ) সকালে অ্যাডিলেডের একটি হাসপাতালে মারা যান অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৯৬টি টেস্ট এবং ৯২টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। মার্শ মৃত্যুর সময় স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন।
মার্শের মৃত্যুর খবর তার পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করেছেন। পরিবার জানায়, ‘গত সপ্তাহ থেকে আমাদের পরিবার যে পরিমাণ ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছে সে জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। জীবনের সবচেয়ে কঠিন সপ্তাহে এই সমর্থন আমাদের শক্তি জুগিয়েছে।’
ক্রিকেট তাসমানিয়া এক বিবৃতিতে মার্শের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের আইকন রড। বিশ্ব ক্রিকেটে তার চলে যাওয়ায় বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’
তার দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সতীর্থ ইয়ান চ্যাপেল বলেছেন, ‘মার্শ শুধু তার খেলার সামর্থ্যের জন্য নয়, স্পষ্টবাদীও ছিল সে। আপনি তার চোখে কেমন, তা দ্রুতই বুঝিয়ে দিত। সবাই হয়তো তাকে পছন্দ করত না কিন্তু সম্মান করেছে সবসময়।’
অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান টেস্ট দলের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে রড অনেক বড় মাপের ব্যক্তিত্ব। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটকে প্রায় ৫০ বছরের মতো অসাধারণ সেবা করেছেন।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন জানান, বড় হয়ে ওঠার পথে রডনি মার্শ ছিলেন তাঁর প্রিয় ক্রিকেটারদের একজন, ‘অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের অন্যতম সেরা টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে তাকে মনে রাখবেন সবাই।’
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ওপেনার মার্ক ওয়াহ বলেছেন, রডনি মার্শ একজন ‘নিখাদ কিংবদন্তি। নির্বাচক হিসেবে তার সঙ্গে কয়েক বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তার মতো সৎ, বিনয়ী এবং দয়ালু মানুষ হয় না।’
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৯৭০ সালে অভিষেক হয় রডের। ১৪ বছরের ক্যারিয়ারের শেষ করেন ১৯৮৪ সালে। অবসর নেওয়ার সময় টেস্টে সর্বোচ্চ ৩৫৫ ডিসমিসালের রেকর্ড গড়েছিলেন মার্শ, রেকর্ডটি এখন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক উইকেটকিপার মার্ক বাউচারের দখলে। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পেসার ডেনিস লিলির সঙ্গে দারুণ জুটি গড়ে উইকেটের পেছনে ৯৫টি ক্যাচ নিয়েছিলেন এই ক্রিকেটার। যেটি বোলার এবং উইকেটকিপারের সমন্বয়ে সর্বোচ্চ ডিসমিসালের রেকর্ড হিসেবে এখনও অক্ষত রয়েছে। এছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটেও ১২২টি ডিসমিসাল তার দখলে।
শুধু উইকেটরক্ষকই নন, ব্যাটার হিসাবেও অনবদ্য রেকর্ড রয়েছে মার্শের দখলে। টেস্টে ৩টি শতক ও ১৬টি অর্ধশতকে ২৬.৫১ গড়ে করেছেন ৩ হাজার ৬৩৩ রান। আর এক দিনের ক্রিকেটে ২০.০৮ গড়ে ১ হাজার ২২৫ রান রয়েছে মার্শের। প্রথম অজি উইকেটকিপার হিসেবে তিনিই সর্বপ্রথম সেঞ্চুরি করেছেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও ক্রিকেটের সঙ্গেই ছিলেন মার্শ। কাজ করেছেন কোচ, ধারাভাষ্যকার এবং অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের নির্বাচক হিসেবেও। আজকের বিশ্ব ক্রিকেটে রিকি পন্টিং ও জাস্টিন ল্যাঙ্গারের মতো কিংবদন্তিরা তার পরিচর্যাতেই উঠে এসেছিলেন। ২০০৫ সালে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার হল অব ফেমে নাম অন্তর্ভূক্ত হয় মার্শের। আর ২০০৯ সালে আইসিসিও এই কিংবদন্তিকে হল অব ফেমে জায়গা দেন।