বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে হারিয়ে টানা তৃতীয় জয় তুলে নিল নিউজিল্যান্ড। কেন উইলিয়ামসনের হাফ সেঞ্চুরির সুবাদে বড় জয়ই পায় ব্ল্যাকক্যাপসরা। টাইগারদের দেওয়া ২৪৬ রানের লক্ষ্য কিউইরা টপকে যায় ৪২ ওভার ৫ বলে ২ উইকেট হারিয়ে।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। তবে সূচনাতেই ধাক্কা খায় টাইগাররা। দলীয় স্কোরবোর্ডে কোনও রান না উঠতে ফিরে যান লিটন দাস। পরে তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়ে ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
কিন্তু দলগত ৪০ রানে তামিম ফিরতেই বিপাকে পড়ে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। দ্রুত বিদায় নেন মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তও। এতে ৫৬ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
পরে সাকিব ও মুশফিক দলের হাল ধরেন। একপর্যায়ে দারুণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। এতে টাইগারদের রানের চাকাও বন বন করে ঘুরতে থাকে।
কিন্তু হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলেন সাকিব। ব্যক্তিগত ৪০ রান করে লকি ফার্গুসনে শিকার হন তিনি। তাতে মুশফিকের সঙ্গে ৯৬ রানের জুটি ভাঙে তার। সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মুশফিকও। ম্যাট হেনরির বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের ফেরেন তিনি। ইতোমধ্যে ক্যারিয়ারে ৪৮তম ফিফটি পাওয়া মুশফিক বিদায় নেন ৬৬ রান করে।
ব্যাটিং অর্ডারে রদবদলের শিকার তাওহীদ হৃদয়ও সাতে নেমে ভালো করতে পারেননি। ২৫ বলে ১৩ রান করে এই ব্যাটার বোল্ডের স্লোয়ারে আগে ড্রাইভ করে সহজ ক্যাচ দেন স্যান্টনারের হাতে। শেষদিকে ঝড় তোলার প্রত্যাশা নিয়েই আটে নামানো হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। কিন্তু দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকা এই অভিজ্ঞ ব্যাটার ঠিকমতো ব্যাটে-বলে করতে পারছিলেন না।
তবে শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহর ৪৯ বলে অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংসেই বলার মতো সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। ১৯ বলে ১৭ রান করে ভূমিকা রাখেন তাসকিন আহমেদও। ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৪৫ রান।
বল হাতে ৩ উইকেট নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের পেসার লোকি ফার্গুসন। ২টি করে উইকেট গেছে বোল্ট এবং ম্যাট হেনরির ঝুলিতে।
বিশ্বকাপ মিশনে প্রথম দুই ম্যাচে ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসকে পাত্তা না দেয়া নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররা এদিন রান তাড়ায় নেমে কিছুটা বেকায়দায় পড়েছিল। তিন টাইগার পেসারের গতি আর সুইংয়ে মানিয়ে নেয়া বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের জন্য।
প্রথম দুই ওভার দেখেশুনে খেলার পর তৃতীয় ওভারে হাত খুলে খেলার চেষ্টা করেন রাচিন রবীন্দ্র। মুস্তাফিজুর রহমানের করা ওভারের প্রথম ও তৃতীয় বলে দুটি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। কিন্তু তার দাপট বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
ওভারের চতুর্থ বলেই তাকে সাজঘরে ফেরান টাইগার পেসার। অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে খোঁচা দিয়ে ফেরেন ব্যক্তিগত ৯ রানে। এরপর টাইগার পেসাররা ভুগিয়েছে কনওয়েকে ও উইলিয়ামসন জুটিকেও। তবে বেশ কয়টি দারুণ ডেলিভারিতেও তাদের পর্যুদস্ত করা যায়নি। দেখেশুনে খেলে তারা আঁকড়ে ধরেছেন ক্রিজ।
তাদের জুটিতে যখন লড়াই থেকে প্রায় ছিটকে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ, তখন ত্রাণকর্তা হয়ে আসলেন অধিনায়ক সাকিব। ২১তম ওভারের প্রথম বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন কনওয়েকে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি এ ব্যাটার। ৫৯ বলে ৩ চারের মারে ৪৫ রানে থামে তার ইনিংস।
ক্রিজে থাকা উইলিয়ামসনকে সঙ্গ দিতে তৃতীয় উইকেটে ব্যাট করতে আসেন ড্যারিল মিচেল। এই দুজন মিলে গড়েন ১০৮ রানের জুটি। দুজনিই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। তবে, এই জুটি থাকে নট আউট। কারণ কিউই অধিনায়কে আউট করতে পারেনি টাইগার বোলাররা। শান্তর থ্রোতে হাতে ব্যাথা নিয়ে রিটায়ার্ট হন তিনি। ওঠে যাবার আগে করেন ১০৭ বলে ৭৮ রানের ইনিংস। ফলে ফেরার ম্যাচে সেঞ্চুরি পাওয়া হল না তার। চোটের ওই অস্বস্তি বাদ দিলে প্রত্যাবর্তনটা দারুণ হয়েছে কেনের।
এরপর গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে বাকি পথটা পাড়ি দেন মিচেল। দুই জন মিলে গড়েন ৪৮ রানের জুটি। মিচেল ৮৯ ও ফিলিপস ১৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশের হয়ে সাকিব ও মুস্তাফিজ একটি করে উইকেট নেন।