প্রথম ব্যাটিংয়ে নেমে ফিন অ্যালেনের ঝড়ের পর ডেভন কনওয়ের অপরাজিত দুর্দান্ত ফিফটিতে দুইশো রানের বড় সংগ্রহ। এরপর বোলিংয়ে টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্টদের আগুন ঝড়া বোলিংয়ে পাত্তাই পেলো না অস্ট্রেলিয়া।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জেতা তো দূরের লড়াইও করতে পারলো না স্বাগতিকরা। ১৭ বল বাকি থাকতেই ১১১ রানে অলআউট হয় অজিরা। পাঁচ বছর পর ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টিতে অলআউট হলো অস্ট্রেলিয়া।
আর এতে করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে অজিদের ৮৯ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে উড়ন্ত সূচনা পেলো নিউজিল্যান্ড। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রানের ব্যবধানে এটাই সবচেয়ে বড় জয় কিউইদের।
সিডনি ক্রিকেট মাঠে শনিবার (২২ অক্টোবর) টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরু থেকেই ব্যাট হাতে টর্নেডো শুরু করেন দুই কিউই ওপেনার ফিন অ্যালেন ও ডেভন কনওয়ে। অজি পেসার মিচেল স্টার্কের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের ১৪ রানের পর জশ হ্যাজলেউডের করা দ্বিতীয় ওভারে ওভার থেকে আসে আরও ১৫ রান।
তৃতীয় ওভার করতে প্যাট কামিন্সের ওভার থেকে ফিন ও কনওয়ে তোলেন আরও ১৮ রান। তিন ওভারে ৪৭ রান তুলে উড়ন্ত সূচনা পায় নিউজিল্যান্ড।
ব্যাট হাতে অজি বোলারদের উপর সবচেয়ে বেশি অত্যাচার চালিয়েছেন ফিন অ্যালেন। ইনিংসের পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ৫৬ রানে দুর্দান্ত ইয়র্কারে তাকে বোল্ড করে অজি শিবিরে স্বস্তি আনেন হ্যাজলেউড। যাওয়ার আগে ১৬ বলে ৪২ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলেন অ্যালেন।
ফিন ফেরার পরই যেন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে ঝড় থেমে আসে। পাওয়ার প্লের শেষ তিন ওভারে স্কোরবোর্ডে জমা হয় মাত্র ১৮ রান! তবে প্রথম তিন ওভারের ঝড়ে পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে এক উইকেট হারিয়ে ৬৫ রান তোলে নিউজিল্যান্ড।
এরপর আস্তে আস্তে রান তোলার গতি কমে আসে। অধিনায়ক উইলিয়ামসনের ২৩ বলে ২৩ রানের শ্লথ গতির ইনিংস শেষ হয় ১৩তম ওভারে। অজি স্পিনার অ্যাডাম জাম্পার বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন তিনি।
ওপেনিংয়ে নেমে এক প্রান্তে যেমন উইকেট ধরে রেখেছেন তেমনি প্রয়োজন অনুযায়ী বাউন্ডারিও হাঁকিয়েছেন ডেভন কনওয়ে। চার নম্বরে নেমে এদিন ব্যাট হাতে কিছুই করতে পারেননি গ্লেন ফিলিপস।
তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস গড়েছেন কনওয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অল্পের জন্য প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি হাতছাড়া হয়েছে তার। ৫৮ বলে ৯২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন কনওয়ে। যেখানে ছিল সাত চার ও দুই ছক্কা।
এর সাথে শেষদিকে জিমি নিশামের ১৩ বলে ২৬ রানের ক্যামিওতে অস্ট্রেলিয়াকে ২০১ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ডেভিড ওয়ার্নারকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই অজি ওপেনারের উইকেট তুলে নেনে কিউই পেসার টিম সাউদি। এই উইকেট নিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে উইকেট শিকারিরি তালিকায় সাকিবকে ছাড়িয়ে শীর্ষে উঠেছেন তিনি।
ম্যাচের আগে অজি অধিনায়ক অ্যারণ ফিঞ্চের কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট ভীতি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে ক্রিকেট মহলে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বোল্টের মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলে ছয় ও তৃতীয় বলে চার হাঁকিয়ে সেই ভয় যেন কাটিয়ে উঠতে চাইলেন ফিঞ্চ। ওই ওভার থেকে আসে ১২ রান।
তবে বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি তিনি। মিচেল স্যান্টনারের করা পরের ওভারের শেষ বলে আউট হয়ে ফেরেন তিনি। পরের ওভারে মিচেল মার্শও ফিরে গেলে শুরুতেই চাপে পড়ে অজিরা। চার নম্বরে নেমে দ্রুতই বিদায় নেন মার্কাস স্টয়নিস।
এরপর টিম ডেভিডকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তবে সাড়া জাগিয়ে অজি দলে ডাক পাওয়া ডেভিডের বিশ্বকাপ অভিষেকটা ভালো হলো না। আট বলে ১১ রানের ইনিংসে তাকে ফিরিয়ে দেন মিচেল স্যান্টনার।
সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত ফিনিশ করা ম্যাথু ওয়েডকেও এদিন উইকেটে থিতু হতে দেননি কিউই বোলাররা। মাত্র দুই রান করে কিউই পেসার লকি ফার্গুসনের বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
একপ্রান্তে ব্যাটারদের আসা যাওয়ার মিছিল লেগে থাকলেও অন্য প্রান্তে লড়াই চালিয়েছন ম্যাক্সওয়েল। তবে দলীয় ৮৯ রানে কিউই স্পিনা ইশ সোধীর বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে গেলে আশার শেষ প্রদ্রীপটাও নিভে যায় অজিদের। ২০ বলে ২৮ রানের ইনিংস আসে ম্যাক্সওয়েলের ব্যাট থেকে।
ম্যাক্সওয়েল বিদায় নেওয়ার পর অজি পেসার প্যাট কামিন্স লড়াইয়ের চেষ্টা করলেও সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। সাউদির করা ১৮তম ওভার শেষ ব্যাটার হিসেবে কামিন্স আউট হলে ৮১ রানের জয় নিশ্চিত হয় নিউজিল্যান্ডের।