মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নামটা বাংলার ক্রিকেটে পড়ন্ত বেলায় এসে যোগ হওয়া আক্ষেপের একটা নাম। যিনি পর্দার আড়াল থেকে ত্রাণকর্তা হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন বহুবার। বাংলাদেশের এই সাইলেন্ট কিলার বাকি দুই ফরম্যাটে দলে নেই দীর্ঘদিন ধরেই। চলতি বছর একমাত্র ওয়ানডেতেই খেলতে পেরেছেন। তবে গত তিন সিরিজ ধরে সেখান থেকেও বাদ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সর্বশেষ বাদ পড়লেন এশিয়া কাপের দল থেকে। শেষটায় খানিক বিষণ্ণতা নিয়েই থাকতে হচ্ছে মাহমুদউল্লাহকে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটকে রিয়াদ দিয়েছেন নিজের সর্বোচ্চটা উজাড় করে। আইসিসি ট্রফির টুর্নামেন্ট গুলোতে সব সময় আলো ছাড়িয়েছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যার শুরুটা হয়েছিল। তবে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে শফিউলকে নিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২ উইকেটের জয় এনে দেওয়া রিয়াদ নিজের গুরুত্ব জানান দেন সে সময়।
এরপর ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে তো নিজের ঝলক দেখান ব্যাট হাতে একের পর এক। প্রথমে অস্ট্রলিয়ার কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক আর একই আসরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিল্টনেও দ্বিতীয়বারের মতো দেখা পান এই ম্যাজিক ফিগারের। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের ওভালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রিয়াদ আরেকটি সেঞ্চুরি করেন। সবমিলিয়ে আইসিসির বড় টুর্নামেন্টে ৩ সেঞ্চুরি রিয়াদের। ২০১৯ বিশ্বকাপে তার ব্যাট সেভাবে না হসলেও ৬ ম্যাচে রান করেন ২১৯ রান। যার ভেতর ছিল একটি অর্ধশতক।
তবে সেসব সোনালি দিন পেরিয়ে রিয়াদ পৌঁছে গেছেন ক্যারিয়ারের অন্তিম লগ্নে। যেখান থেকে ফেরার সম্ভাবনাও আসলে খুবই কম। কেননা এই মুহূর্তে রিয়াদের বয়স ৩৭, ফিটনেসেও প্রভাব পড়েছে বয়সের। যে কারণে রিয়াদের পরিবর্তে নতুনদের পরখ করে দেখছে বিসিবি। সর্বশেষ কয়েক সিরিজেই সেটাই লক্ষ করা গেছে।
নান্নু বলেন, ‘মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে অনেক লম্বা আলোচনা হয়েছে প্রথম দিকে। তারপর অনেক আলোচনা করার পর টিম ম্যানেজম্যান্ট আমাদেরকে একটা পরিকল্পনা দেয়, সামনে কীভাবে কোন দেশের সঙ্গে খেলবে, কী পরিকল্পনা। ওই চিন্তাভাবনা করেই কিন্তু রিয়াদকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনাকে আমরা মনে করেছি অবশ্যই এটা ভালো। ওদের সঙ্গে যেহেতু হেড কোচের একটা পরিকল্পনা আছে টিম কীভাবে পরিচালনা করা হবে। সব আলোচনা হয়েছে, আমাদের অধিনায়কের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ’
বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়া মাহমুদউল্লাহর বিশ্বকাপে সুযোগ আছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখন এশিয়া কাপ নিয়ে আলোচনা করছি। এশিয়া কাপে টিম ম্যানেজমেন্ট আমাদেরকে একটা পরিকল্পনা দিয়েছে, অতিরিক্ত স্পিনার বা পেসার নিয়ে খেলা এ ধরনের ব্যাপার নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয়। ’
সব মিলিয়ে ম্যানেজমেন্টের ওপরই পুরো ভার দিয়েছেন নান্নু, ‘এই ম্যানেজমেন্টের আন্ডারে মিরাজকেই সাতে কন্ডিডার করা হচ্ছিল কয়েকটা সিরিজে। মিরাজের ওপর আমরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। আট নম্বরে অতিরিক্ত পেসার বা স্পিনার যখন যেটা যে কন্ডিশনে দরকার হবে, ওভাবেই কিন্তু আগায়। টিম ম্যানেজমেন্টের অনেক পরিকল্পনা আছে, যেগুলো এখানে শেয়ার করতে পারি না। ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা নিয়ে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিয়েই দলটা তৈরি করা হয়েছে।’
টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন আগেই। টি-টোয়েন্টি দলে আছের ভাবনার বাহিরে। যা-ও খেলতেন ওয়ানডে এখন মনে হচ্ছে এখারেও নিজের শেষ দেখে ফেলছেন রিয়াদ। যেখানে পাকিস্তান বা অনেক দলে খেলোয়াড়রা ৪০ বছরেও খেলে গেছেন ক্রিকেট সেখানে রিয়াদকে বয়সের কারণে ফেলে দিয়েছে বাতিলের খাতায়। তাহলে কি বলাই যায় বাংলাদেশের হয়ে মাশরাফির পর রিয়াদেরও ক্যারিয়ার শেষ।