বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ২০২৪ সালটা ছিল বেশ সাফল্যের। ক্রিকেট, ফুটবল, হকির বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্টে বাংলাদেশ অনেকগুলো সফলতা অর্জন করেছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এইসব সাফল্যের বেশির ভাগই এসেছে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে। অর্থাৎ প্রথম ছয় মাসের চেয়ে পরের ছয় মাসে তুলনামূলক বেশি জয়ের মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। বলা যায়, আগস্ট বিপ্লবের পরই ক্রীড়াঙ্গনে একের পর এক সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ।
নেপালের কাঠমান্ডুর আনফা কমপ্লেক্সে ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলের ফাইনালে নেপাল স্বাগতিক দলকে ৪-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো এই প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতলো লাল-সবুজ জার্সিধারীরা৷ প্রতিযোগিতার ষষ্ঠ আসরে এসে শিরোপা জয়ের অপেক্ষার পালা শেষ হলো বাংলাদেশের। টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে আগের তিন আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারতের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে বাংলাদেশ জয়ী হয় ৪-৩ গোলে৷।
নেপালে ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবলের ফাইনালে ভারতকে ট্রাইব্রেকারে ৩-২ গোলে পরাজিত করে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দল নেপালকে ২-০, ভারতকে ৩-১ এবং ভুটানকে ৬-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠে। ফাইনালে ফের ভারতকে পরাজিত করে শ্রেষ্ঠত্ব দেখায় বাংলাদেশের কিশোরীরা।
আগস্টের ৩০ তারিখ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়লাভ করে স্বাগতিকদের বিপক্ষে। টেস্টে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২৬২ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ১৮৫ রান করে। আর পাকিস্তান দুই ইনিংসে ২৭৪ ও ১৭২ রান করে। বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে পাকিস্তানকে হারিয়ে সিরিজ জেতে এবং প্রতিপক্ষকে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে।
দুই বছর আগে দশরথ রঙ্গশালাতেই নেপালকে কাঁদিয়ে প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। গত ৩১ অক্টোবর সেই স্বাগতিকদেরই ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখে লাল–সবুজের মেয়েরা। দেশের ফুটবলে যা নতুন এক ইতিহাস।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন এবং স্ট্রাইকার ঋতুপর্ণা চাকমা ইউরোপীয় ক্লাব ব্রেরা তিভেরিজা’র কাছ থেকে খেলার প্রস্তাব পেয়েছেন। ক্লাবটি উত্তর ম্যাসেডোনিয়ান নারীদের লিগের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। ২ নভেম্বর এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশের প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে বিদেশি ক্লাবগুলোতে আগেও খেলেছেন সাবিনা। ২০১৮ সালে প্রথমবার ভারতীয় ক্লাব সেথু এফসির হয়ে খেলেন সাবিনা। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগের কর্নাটকের ক্লাব কিকস্টার্ট এফসির হয়ে খেলেন।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে আয়ারল্যান্ডকে। স্বাগতিক বাংলাদেশ ২৭ নভেম্বর প্রথম ম্যাচে ১৫৪ রানে, ৩০ নভেম্বর দ্বিতীয় ম্যাচে ৫ উইকেটে এবং ২ ডিসেম্বর তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ৭ উইকেটে সফরকারীদের পরাজিত করে।
ওমানের মাসকাটে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ যুব হকি দল। অনূর্ধ্ব-২১ যুব এশিয়া কাপ হকিতে ৩ ডিসেম্বর থাইল্যান্ডকে ৭-২ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দল যুব বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে, যা বাংলাদেশের হকির ইতিহাসে এই প্রথম। যে কোনো লেভেলে বিশ্বকাপ হকিতে এই প্রথম বার বাংলাদেশ মূলপর্বে উঠলো।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয় ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে ৫৯ রানে হারিয়ে। ৮ ডিসেম্বরের ফাইনালে বাংলাদেশের ১৯৮ রানের জবাবে ভারত মাত্র ১৩৯ রানে অলআউট হয়। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো শক্তিশালী দলগুলো থাকতেও বাংলাদেশের এই শিরোপা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য।
দুই বারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তাদেরকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ করে সফরকারী বাংলাদেশ দল। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ (১৪৭/৬) মাত্র ৭ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে (১৪০) পরাজিত করে। ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ (১২৯/৭) দ্বিতীয় ম্যাচে ২৭ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে (১০২) হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে। এরপর ২০ ডিসেম্বর তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ (১৮৯/৭) দারুণ খেলে ৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে (১০৯) হোয়াইটওয়াশ করে।
অনূর্ধ্ব-১৯ নারী এশিয়া কাপে রানার্সআপ হয়েছে বাংলাদেশ। ফাইনালে বাংলাদেশকে ৪১ রানে হারিয়েছে ভারত। কুয়ালালামপুরে ২২ ডিসেম্বরের ফাইনালে ভারতের ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১১৭ রানের জবাবে ১৮.৩ ওভারে ৭৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। শিরোপা জিততে না পারলেও শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মতো দলকে ডিঙিয়ে ফাইনালে উঠে কৃতিত্ব দেখায় বাংলাদেশ।