আর্জেন্টিনার জয় নিয়ে তেমন একটা শঙ্কা ছিল না। শক্তি-সামর্থ্য কিংবা ঐতিহ্যে যোজন যোজন পিছিয়ে থাকা কানাডা যে আর্জেন্টিনার সঙ্গে পেরে উঠবে না, এটা অনুমিতই ছিল। তবে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের তবুও ম্যাচটা নিয়ে আগ্রহ ছিল অন্য জায়গায়। একদিকে ফাইনালে ওঠার লড়াই, অন্যদিকে কোপা আমেরিকায় এবারের টুর্নামেন্টে এখনো গোলহীন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টাইন অধিনায়কের পায়ে গোল দেখার জন্য অধীরে আগ্রহে ছিলেন আলবিসেলেস্তে সমর্থকেরা।
স্কোরলাইন বলছে আর্জেন্টিনা ম্যাচ জিতেছে ২-০ গোলের ব্যবধানে। কোপা আমেরিকা এবং বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা খেললেন চ্যাম্পিয়নদের মতোই। তাতে টানা দ্বিতীয়বার এবং শেষ আট কোপায় ৬ষ্ঠবার ফাইনালে চলে গেল আর্জেন্টিনা।
২০১৫ সাল থেকেই কোপা আমেরিকার ফাইনালে নিয়মিত মুখ আর্জেন্টিনা। মাঝে বাদ গিয়েছিল শুধু ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকা। যেবারে সেমিফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল আলবিসেলেস্তেদের। এরপর ২০২১ সালে শিরোপাটাই জয় করে তারা। এবার তাদের সামনে সুযোগ টানা দুইবার কোপা আমেরিকা জয়ের। যে জয় পেলে ফুটবলের বিরল এক রেকর্ডে নাম উঠবে আর্জেন্টিনার।
কানাডা ম্যাচে মেসি গোল পেয়েছেনও।
কর্নার থেকে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে এনসোকে বল দিয়ে বসেন কানাডা ডিফেন্ডার। বল পেয়ে বক্সের সীমানা থেকে ডান পায়ে শট নেন চেলসি তারকা। সে শটটাই গোল হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু গোললাইন অতিক্রম করার আগে মেসির পায়ে স্পর্শ লাগে। ফলে গোলদাতা বনে যান মেসি। আর্জেন্টাইন অধিনায়কের এই গোল ও প্রথমার্ধে হুলিয়ান আলভারেসের করা গোলে ২-০ ব্যবধানের স্বস্তির জয়ে ফাইনালে উঠেছে লিওনেল স্কালোনির দল।
আজকের ম্যাচে যে একাধিক পরিবর্তন আসবে, সেটার আভাস আগেই দিয়েছিলেন স্কালোনি। আনহেল দি মারিয়াকে একাদশে ফিরিয়ে দুই স্ট্রাইকার নিয়ে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা। এমনকি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা লওতারো মার্তিনেসকে বেঞ্চে বসিয়ে আলভারেসকে শুরুর একাদশে খেলান আর্জেন্টাইন কোচ। স্কালোনির কৌশল যে ভুল ছিল না, সেটা আলভারেস প্রমাণ করেছেন দারুণ এক গোল করে।
আজ কানায় কানায় পূর্ণ নিউজার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামের প্রায় সকল দর্শকই এসেছিলেন আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে। কানাডার সমর্থক যে মাঠে ছিলেন না, এমন নয়। তবে তাদের সংখ্যাটা হয়তো হিসেব করা যাবে। ঘরের মাঠের আবহ নিয়েও ম্যাচের শুরুটা ভালো ছিল না আর্জেন্টিনার। বরং ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিট আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মনে ভয়ই ধরিয়ে দিয়েছিল কানাডা।
তবে দ্রুতই নিজেদের গুছিয়ে নেয় আর্জেন্টিনা। বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা প্রথম সুযোগটা পায় ম্যাচের ১২তম মিনিটে। ডি মারিয়ার পাস থেকে বক্সের বাইরে বল পেয়েছিলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া আর্জেন্টাইন অধিনায়কের মাটি কামড়ানো জোরালো শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়।
অবশ্য একটু পরে দুবার আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করেছিল কানাডা। কিন্তু আর্জেন্টিনার জমাট রক্ষণ অতিক্রম করতে পারেননি জোনাথন ডেভিড-ইসমাইল কোনরা। জেসি মার্শের শিষ্যরা কিছুটা শারীরিক ফুটবল খেলার চেষ্টা করলেও মাঠা ঠান্ডা রেখে নিজেদের খেলা চালিয়ে যেতে থাকে আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের ২৩তম মিনিটে প্রথম গোলের দেখা পায় স্কালোনির দল। ডি পলের ডিফেন্সচেরা পাস থেকে বল পেয়ে দারুণ দক্ষতায় নিয়ন্ত্রণে নেন আলভারেস। এরপর বক্সে ঢুকে শট নেন ২৪ বছর বয়সী সিটি তারকা। সেটি কানাডা গোলকিপারের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে আশ্রয় নেয় জালে।
একটু পরে আবারও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৩৪তম মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে চিপ করেছিলেন দি মারিয়া। কিন্তু সেটি পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। দু মিনিট পর সতীর্থদের সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে আক্রমণে উঠে তাগলিয়াফিকোর উদ্দেশ্যে পাস দিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার সহজ সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারেননি।
ম্যাচের ৪৪তম মিনিটে আবারও মেসির শট পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আরেকবার গোলবঞ্চিত হন মেসি। এ যাত্রায় সাবেক বার্সা তারকার চিপ যায় পোস্টের ওপর দিয়ে। অবশ্য বিরতির ঠিক আগমুহূর্তে সুযোগ পেয়েছিল কানাডাও। জটলা থেকে নেওয়া ডেভিসের শট রুখে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে রক্ষা করেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস।
দ্বিতীয়ার্ধেও একই গতিতে খেলতে থাকে আার্জেন্টিনা। এর ফলও পেয়ে যায় দ্রুতই। ম্যাচের ৫১ মিনিটে মেসির সেই গোল।
দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে যেন ঘুম ভাঙে কানাডার। ম্যাচে ফিরতে মরিয়া কানাডা ধীরে ধীরে আক্রমণ বাড়াতে থাকে। তবে আর্জেন্টিনার জমাট রক্ষণ ও গোলপোস্টে এমিলিয়ানো মার্তিনেসের কল্যাণে গোল পায়নি মার্শের দল। ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের একদম শেষ দিকে তানি ওলুওয়াইস প্রায় ব্যবধান কমিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু এ যাত্রায় দারুণ দক্ষতায় আর্জেন্টিনার গোলপোস্ট অক্ষত রাখেন মার্তিনেস। এতে ২-০ গোলের নিয়েই মাঠ ছাড়েন মেসিরা।
আগামীকাল টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে লড়বে উরুগুয়ে-কলম্বিয়া। সে ম্যাচের জয়ী দলের সঙ্গে আগামী সোমবারের ফাইনালে শিরোপার লড়াইয়ে নামবে আর্জেন্টিনা।