প্রথমবারের মতো পেশাদার ক্রিকেট খেলতে নেমেছিলেন সদ্যই বয়সভিত্তিক দলের গণ্ডি পেরোনো আব্দুল্লাহ আল মামুন। প্রথম আসরেই বাজিমাত। অলরাউন্ড পারফর্মেন্সে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টে হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়। এই টুর্নামেন্টে সবসময় সোজা বলে খেলতে চাওয়ার পরিকল্পনা কাজে লাগতেই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন রংপুরের এই তরুণ।
সদ্য সমাপ্ত জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ২৪তম আসরে শিরোপা জিতেছে রংপুর বিভাগ। দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে ব্যাট-বলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। ব্যাট হাতে ৪৬.৫৭ গড়ে ৩২৬ রানের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ১১ উইকেট।
সেরা পারফর্মার হওয়া মামুন প্রথমবারের মতো খেলতে নেমেছিলেন স্বীকৃত কোনো টুর্নামেন্ট। তাতে সেরা হওয়ায় ভরসা রাখছেন সৃষ্টিকর্তার উপর। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “আলহামদুল্লিলাহ ভালো লাগছে। টুর্নামেন্টে সুযোগ পাইছি, এর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। এটার (টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার) অনুভূতি অন্য রকম ছিল। বলে বোঝানো যাবে না। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। ভাবতে পারি নাই, ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হবো। চেষ্টা করেছি ভালো করার, আল্লাহ রহমত। আল্লাহ দিছে।”
সাফল্যের রহস্যও সংবাদ প্রকাশকে জানিয়েছেন এই তরুণ। প্রথম ম্যাচে সাইড বেঞ্চে বসে দেখে বলের গতি প্রকৃতি বুঝেছেন। বলে গতি প্রকৃতি বুঝেই তৈরি করেছিলেন নিজের পরিকল্পনা। তাতে অটুট থেকেই হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়।
তিনি বলেন, “প্রথম ম্যাচ আমি মিরপুরে দেখছি। ওই ম্যাচে খেলি নাই। আমরা দেড় দিনে ম্যাচ হেরে যাই। তখন আমি একটা জিনিস দেখছি, ব্যাটাররা হাফ ভলি বল ড্রাইভ করতে গেলে সিলি পয়েন্ট বা গালিতে ক্যাচ হয়ে যায়। বল একটু সুইং করতেছিল। আমি মনে মনে ভাবতেছিলাম, ভাইদের সাথে কথা বলতেছিলাম, বলটা একটু মুভ করে বেশি। এই জিনিসটা নিয়ে ভাবলাম, জোরে ড্রাইভ করাটা কঠিন। আমি পরিকল্পনা করেছিলাম, কখনও যদি সুযোগ পাই তাহলে জোরে ড্রাইভ করবো না। জাস্ট মিডলিং করার চেষ্টা করবো। বল সোজা খেলার চেষ্টা করবো। এই পরিকল্পনাতেই সফল হয়েছি।”
সিলেটের বিপক্ষে তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে এবারের এনসিএলের প্রথম দ্বিশতক তুলে নেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। ওই আত্মবিশ্বাসই টুর্নামেন্টের পরের ম্যাচগুলোতে কাজে লেগেছে বলেও জানান রংপুরের এই তরুণ।
“দ্বিশতকের পর একজন ব্যাটারের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। আপনি যখন বড় রান করবেন, তখন বিশ্বাস জন্মে আমি পারবো। ওই বিশ্বাসটা ছিল, দ্বিশতকের পর ওই আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে।”
ব্যাট হাতে ঝলক দেখানোর পর বোলিংয়েও নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন। ব্যাটার হওয়ায় বোলিং করতে সুবিধা হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। এছাড়াও অধিনায়কের ভূমিকাও ছিল বলে মত তার।
সংবাদ প্রকাশকে মামুন বলেন, “বোলিংটার ক্ষেত্রে, অনূর্ধ্ব ১৯ দলেও বোলিং করেছিলাম। আমি ব্যাটার তাই আমি ব্যাটাদের দূর্বল জায়গা কিছুটা হলেও বুঝি। ওরা সামনের বল খেলতে পারে কি-না বা অন্য কি দূর্বলতা আছে। আমি ওই চিন্তা ভাবনা করে খেলেছি। আকবর (আকবর আলি) ভাই পরিকল্পয়ান দিয়েছে। ওই পরিকল্পনায় সফল হয়েছি।”
রংপুরের ছেলে হওয়ায় আগে থেকেই পরিচয় ছিল যুব বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক আকবর আলীর সাথে। সেই পরিচয়ের সূত্রে অধিনায়কের কাছ থেকে দারুণ সমর্থন পেয়েছেন। সেটাও তার নজর কাড়া পারফর্মেন্সে প্রভাব ফেলেছে বলেও জানান আব্দুল্লাহ আল মামুন।
বলেন, “উনি (আকবর আলি) আমাকে অনেক সমর্থন দিয়েছে। এখানে অনেক সিনিয়র খেলোয়াড় আছে। আর আকবর ভাই আমার সাথে আগে থেকেই পরিচিত। আমি অনেক আগে থেকেই টুর্নামেন্ট খেলছি একসাথে। উনি অধিনায়ক থাকাতে আমার কাজটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। অনেক সমর্থন দিয়েছে। বলছে, তুই আত্মবিশ্বাসী, তুই পারবি।”