২৩তম আয়োজক দেশ হিসেবে ২২তম ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে মধ্যেপ্রাচ্যের দেশ কাতার। শুধু আয়োজক নয়, দল হিসেবেও এটাই তাদের প্রথম বিশ্বকাপ। তবে অভিষেক বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটা সুখকর হলো না দেশটির।
প্রথম স্বাগতিক দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হারের স্বাদ পেয়েছে কাতার। এর আগে ২১ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ১৬টাতে জয় পেয়েছে স্বাগতিকরা, বাকি ছয় ম্যাচ শেষ হয়েছে অমীমাংসিত ভাবে। কাতারের বিপক্ষে ইকুয়েডর জিতেছে ২-০ গোলের ব্যবধানে। এই নিয়ে টানা সাত ম্যাচ অক্ষত থাকলো ইকুয়েডরের গোলপোস্ট।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ইকুয়েডর ৪৪ নম্বরে, আর কাতারের অবস্থান তার চেয়ে ৬ ধাপ পেছনে। মাঠের খেলায় প্রভাব দেখা গেল তার, ইকুয়েডরের কাছে পাত্তাই পেলো না কাতার। স্বপ্নের মতো বিশ্বকাপ শুরু করলেন দলটির অধিনায়ক ভ্যালেন্সিয়া। জোড়া গোল করে দলকে শুভসূচনা এনে দিয়েছেন।
বিশ্বকাপ ইকুয়েডরের হয়ে সর্বশেষ পাঁচ গোলের সবকটিই এসেছে ভ্যালেন্সিয়ার কাছ থেকে। এর আগে ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপেও ইকুয়েডরের তিনটি গোলই এসেছিল তার পা থেকে।
দলের সর্বশেষ টানা গোলে ভ্যালেন্সিয়ার চেয়ে চেয়ে বেশি আছে মাত্র তিনজনের। দলের সর্বশেষ টানা ছয় গোল করেছিলেন ইউসেবিও (পর্তুগাল, ১৯৬৬), পাওলো রসি (ইতালি, ১৯৮৬), ওলেগ সালেঙ্কো (রাশিয়া ১৯৯৪)। তবে এদের প্রত্যেকেই এক বিশ্বকাপেই সবগুলো গোল করেছিলেন আর ভ্যালেন্সিয়া করলেন দুই বিশ্বকাপ মিলিয়ে।
রোববার (২০ নভেম্বর) ২২তম ফুটবল বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ইকুয়েডরের মুখোমুখি হয়েছিল স্বাগতিক কাতার। কিক অফের পর প্রথম আক্রমণেই ফ্রি কিক থেকে জটলার মধ্যে দিয়ে দারুণ গোল করে ইকুয়েরডকে এগিয়ে দিয়েছিলেন ভ্যালেন্সিয়া।তবে ভিএআরের রিপ্লেতে অফসাইড ধরা পড়লে সেই গোল বাতিল করে দেন রেফারি।
তবে গোল পেতে খুব বেশি দেরি করতে হয়নি ইকুয়েডরের। ম্যাচের ১৫তম ইকুয়েডর অধিনায়ক ভ্যালেন্সিয়া মিনিটে দারুণ দক্ষতায় বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়লে কাতার গোলরক্ষক ফাউল করেন।
রেফারির চোখ এড়ানি সেটা, সাথে সাথে পেনাল্টির বাঁশি বাজান। একই সাথে হলুদ কার্ড দেখতে হয় কাতার গোলরক্ষককে। পেনাল্টি থেকে দারুণ শটে বা পাশ দিয়ে লক্ষ্যভেদ করে ইকুয়েডরকে এগিয়ে দেন ভ্যালেন্সিয়া। এবারই প্রথমবারের মতো কোনো বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের প্রথম গোল পেনাল্টি থেকে হলো।
গোল পেয়ে যেন ক্ষুধার্ত বাঘ হয়ে ওঠে হলুদ জার্সি পরিহিত ইকুয়েডর। একের পর এক আক্রমণে কাতারের রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখেন তারা। এর মধ্যেই বেশ কয়েকটি সুযোগও পেয়েছিল তারা, যদিও কাজে লাগাতে পারেনি।
ইকুয়েডরের লাগাতার আক্রমণের বিপরীতে বেশ কয়েকবার পাল্টা আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে কাতার। তবে ইকুয়েডরের শক্ত রক্ষণের সামনে বারবারই মুখ থুবড়ে পড়েছে স্বাগতিকদের আক্রমণ।
ম্যাচের ৩১তম মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় ইকুয়েডর। বাঁ পাশ থেকে সতীর্থ প্রিসিয়াডোর নিখুঁত ক্রসে দুর্দান্ত হেডে ম্যাচে নিজের জোড়া গোল করেন ভ্যালেন্সিয়া, ২-০ গোলে এগিয়ে যায় ইকুয়েডর।
বিরতি থেকে ফিরে ম্যাচে ফেরার জন্য শুরু থেকেই আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল কাতার। তবে ইকুয়েডরের শক্ত রক্ষণে চিড় ধরাতে পারেনি তারা।
উল্টো ম্যাচের ৫৪তম মিনিটে গোলের ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল ইকুয়েডর। তবে ডান পাশে ইস্ত্রাদা বাঁ পাশ থেকে আসা ক্রসে পা না লাগাতে পারলে সুযোগ হাতছাড়া হয় তাদের।
দুই মিনিটের ব্যবধানে আরও একটি সুযোগ হাতছাড়া হয় ইকুয়েডরের। বক্সের ওপর থেকে ইবারার নেওয়া দারুণ শট রুখে দেন কাতার গোলরক্ষক অ্যাল শেব।
ম্যাচের শেষ দিকে বেশ কয়েকটি কার্যকরী আক্রমণ করেছিল কাতার। তাতে ম্যাচের ফেরার সুযোগ তৈরি হলেও কাজে লাগাতে পারেনি একটাও। শেষদিকে দুই দলই বেশ কিছু ফাউলে করলে একাধিক হলুদ কার্ড দেখাতে হয়েছে রেফারিকে।
এরপর আর কোনো দলই গোলের দেখা পায়নি। ফলে প্রথমার্ধের জোড়া গোলেই নির্ধারিত হয়ে যায় ম্যাচের ফল। আর স্বাগতিকদের উড়িয়ে আসরে শুভসূচনা করলো ইকুয়েডর।
২৫ নভেম্বর আসরের দ্বিতীয় ম্যাচে সেনেগালের বিপক্ষে মাঠে নামবে কাতার। শেষ ষোলোর আশা বাঁচিয়ে রাখতে ওই ম্যাচে জয়ের কোনো বিকল্প নেই স্বাগতিকদের সামনে। অন্যদিকে একই দিনে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে ইকুয়েডর।