বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় ছাড়া বিকল্প ছিল না নিউজিল্যান্ডের। এমন বাঁচা মরার ম্যাচে লঙ্কানদের বিপক্ষে ১৬০ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় কিউইরা। কেন উইলিয়ামসনদের এই জয়ে সেমিফাইনালের পথ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের জন্য। অন্যদিকে লঙ্কানরা বড় ব্যবধানে হারের কারণে বাংলাদেশের ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা পাওয়ার সমীকরণ সহজ হয়েছে।
বেঙ্গালুরুতে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং ব্যর্থতায় পড়ে ৪৬.৪ ওভারে ১৭১ রান তুলতেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কার ইনিংস। জবাবে ওপেনিংয়ে দুর্দান্ত শুরুর পর মিডল অর্ডারদের দ্রুত বিদায়ের পর ২৩.২ ওভারে ৫ উইকেটে হারিয়ে ১৭২ রান তুলে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় কিউইরা।
সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত শুরু করেন নিউজিল্যান্ড দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে-রাচিন রবীন্দ্র। দুই জনে উদ্বোধনী জুটিতে তোলেন ৭৪ বলে ৮৬ রান। ৪৫ রান করে কনওয়ে সাজঘরে ফিরলে কিউইদের ওপেনিং জুটি ভাঙে। এরপর রবীন্দ্রও আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪২ রান। তিনে নেমে ভালোই শুরু করেছিলেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন।
কিন্তু থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১৫ বলে করেছেন ১৪ রান। তবে রানের চাকা সচল রাখেন ড্যারিল মিচেল। এই ইনফর্ম ব্যাটার করেছেন ৩১ বলে ৪৩ রান। আর শেষদিকে গ্লেন ফিলিপসের ১০ বলে ১৭ রানের ক্যামিওতে সহজেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ব্লাক ক্যাপসরা।
এর আগে, চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে কিউই পেসার টিম সাউদির বলে ২ রান করে সাজঘরে ফেরেন শ্রীলঙ্কার ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা। ৩ রানে এক উইকেট হারানো লঙ্কানরা শুরু চাপ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন। ওপেনার কুশল পেরেরা ও অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসের ব্যাটে ভর করে। সেই চাপ কাটিয়ে ওঠার আগেই লঙ্কান শিবিরে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় আঘাত। এবার ট্রেন্ট বোল্টের বলে রাচিন রবীন্দ্রর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লঙ্কান অধিনায়ক।
মেন্ডিসের ব্যাট থেকে আসে ৭ বলে ৬ রান। বোল্টের একই ওভারের চতুর্থ বলে সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ফেরেন। সামারাবিক্রমার ব্যাট থেকে আসে ২ বলে ১ রান। ইনিংসের প্রথম ৫ ওভারে শ্রীলঙ্কা ৩৪ রান তুলতেই হারায় ৩ উইকেট। এরপর চতুর্থ উইকেটে লঙ্কানরা কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে। এই উইকেটে চারিত আসালাঙ্কা ও ওপেনার কুশল পেরেরা যোগ করেন ২২ বলে ৩৮ রান। এই জুটি ভাঙে বোল্টের তৃতীয় শিকার হয়ে আসালাঙ্কা এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়ে আউট হলে। এই ব্যাটার ৮ বলে ১ চারে ৮ রান করেন।
আসালাঙ্কার বিদায়ের পর স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ না হতেই ফেরেন পেরেরা। তিনি অবশ্য ফেরার আগে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ১৭তম হাফ সেঞ্চুরি। এদিন পেরেরার ব্যাট থেকে আসে ২৮ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ৫১ রান। লঙ্কানরা প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৭৪ রান তুলতেই হারিয়েছে ৫ উইকেটে। ষষ্ঠ উইকেটে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচে টাইমড আউটে প্যাভিলিয়ানে ফেরা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ২৭ বলে ১৬ রান করে বিদায় নেন। সপ্তম উইকেটে ব্যাটিংয়ে নামেন চামিকা করুনারন্তে। তার সঙ্গে ধানঞ্জয়া ডি সিলভা ১ রান যোগ করে বিদায় নেন। ২৪ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৯ রান করেন এই ব্যাটার।
এরপর ৩৩তম ওভারে ৯ উইকেটে ১২৮ রান হারিয়ে শ্রীলঙ্কার ইনিংস যখন মৃত্যুর পথে তখনই কিউই বোলারদের আসল পরীক্ষা ফেলেন লঙ্কান দুই ব্যাটার। দশম উইকেটে দিলশান মাদুশঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে সর্বোচ্চ ৮৭ বলে ৪৩ রানের জুটি গড়েন মহীশ তিকশানা। মাদুশঙ্কা ৪৮ বলে ১৯ রান করে রাচিনের বলে আউট হলে এই জুটি ভেঙে যায়। সেই সঙ্গে ১৭১ রানে লঙ্কানদের ইনিংসেরও মৃত্যু হয়। ৯১ বলে ৩ চারে ৩৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিকশানা। ব্লাক ক্যাপস পেসার বোল্ট ৩৭ রান খরচে নেন ৩ উইকেট।