ক্রিকেটের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ খেলা কোনটি? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া আবার অনেকে ভারত-পাকিস্তানের কথা বলবেন। তবে বেশিরভাগ মানুষই হয়ত ভারত-পাকিস্তানের দিকে ইশারা করবে। এই দুই দলের খেলা মানেই মাঠ ও মাঠের বাইরে বাড়তি উত্তেজনা।
রোববার (৯ জুন) বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় যুক্তরাষ্ট্রের নাসাউ কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে। এই উইকেটে ব্যাটিং করাটা ব্যাটারদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তান দুই দলই বিশ্বকাপে ইতোমধ্যে একটি করে ম্যাচ খেলেছে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দাপুটে জয়ে আসর শুরু করেছে রোহিত শর্মার দল। আর যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত হারে দুঃস্বপ্নের মতো আসর শুরু হয়েছে বাবর আজমের দলের। একেতো প্রতিপক্ষ ভারত, এরপর উপর প্রথম ম্যাচের হার! যে হারে সুপার এইটে ওঠার পথ কঠিন হয়ে গেছে পাকিস্তানের জন্য। ফলে ভারত যেখানে উৎফুল্ল থেকে মাঠে নামবে, পাকিস্তানের সঙ্গে থাকবে আকাশ সমান চাপ।
এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে ১২বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। ৯ জয় নিয়ে এগিয়ে ভারতীয়রা।
আর বিশ্বকাপে ৭ বারের লড়াইয়ে ৬ জয় ভারতের। ২০২১ সালে ভারতের বিপক্ষে একমাত্র জয়টি পায় পাকিস্তান। সর্বশেষ ম্যাচে গত আসরে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জয় পায় ভারত। বিরাট কোহলির অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ে শেষ ৩ ওভারে ৪৮ রান নিয়ে জয় কুড়ায় তারা।
ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের জন্য সবসময়ই বাড়তি চিন্তা থাকে বিরাট কোহলিকে নিয়ে। সর্বশেষ আসরেও একা হাতে ভারতকে ম্যাচ জেতান তিনি। খেলেন ৫৩ বলে ৮২ রানের ইনিংস। যেটা কিনা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসেই অন্যতম সেরা ইনিংস। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ টি-টোয়েন্টিতে কোহলির ব্যাট থেকে এসেছে ৮১.৩৩ গড়ে ৪৮৮ রান। দলটির বিপক্ষে ৫টি ফিফটি আছে তার, শেষ ৫ ইনিংসেই ৪টি। আর কোনো ভারতীয় ব্যাটার পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ২০০ রানও করতে পারেননি। আর বিশ্বকাপে ৫ ইনিংসে কোহলি ৩০৮ রান করেছেন আর সেটাও ৩০৮ গড়ে! কারণ কোহলিকে মাত্র একবারই আউট করতে পেরেছে পাকিস্তান। যদিও এবারের আসরের শুরুটা ভালো হয়নি কোহলির, করেছেন মাত্র ১ রান। রোহিত শর্মা, সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়ারাও পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন। দেড় বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা ঋষভ পান্তও আছেন দারুণ ছন্দে। এছাড়া বোলিংয়ে জাসপ্রিত বুমরাহ, আর্শদীপ সিংরাও আছেন। স্পিনে যুজবেন্দ্র চাহালের সঙ্গে রবীন্দ্র জাদেজা, আজ একাদশে আসতে পারেন চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদব।
ভারত যেখানে সব মিলিয়ে সুখি পরিবার, সেখানে পাকিস্তান যেন হঠাৎ ঝড়ে বিধ্বস্ত শিবির। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে হারটা নিশ্চিতভাবেই মানসিকভাবে তাদের অনেকদিন পোড়াবে। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচেই নামতে হচ্ছে ভারতের বিপক্ষে। চীরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে মাঠে নামা সবসময়ই বাড়তি চাপের, এবার সেটা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাবর আজমের দলের জন্য। প্রথম ম্যাচে মাত্র ২৬ রানেই ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান। মোহাম্মদ রিজওয়ান ফেরার পর উসমান খান ও ফখর জামান উইকেট ছুড়ে দেন। এরপর শাদাব খানের ২৫ বলে ৪০ রানের ইনিংস ম্যাচে ফেরায় তাদের। তবে অন্যপ্রান্তে অধিনায়ক বাবর আজম যেন সংগ্রাম করছিলেন। তার অস্বস্তিকর ইনিংস শেষ হয় ৪৩ বলে ৪৪ রানে! এরপর শেষদিকে আর কেউ ঝড় তুলতে পারেননি। ১৫৯ রান ডিফেন্ড করতে নেমে শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটারদের সামনে পাত্তা পায়নি পাকিস্তানের বোলাররা। তবে এক পর্যায়ে জয়ের কাছেই চলে গিয়েছিল পাকিস্তান। জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে ২১ রান প্রয়োজন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটারদের এই রানের মধ্যেই আটকে ফেলার সামর্থ্য মোহাম্মদ আমির-হারিস রউফদের থাকলেও এদিন তারা পারেননি। শেষ ৩ বলে ১২ রান দরকার, ১১ রান নিয়ে ম্যাচ টাই করে স্বাগতিকরা।
এরপর সুপার ওভারে মোহাম্মদ আমির খরচ করেন ১৮ রান। সেটা তাড়া করতে নেমে দলের অন্যতম সেরা হিটার ফখর জামান স্ট্রাইকই পাননি। ফলাফল, হার দেখতে হয় পাকিস্তানকে। সবমিলিয়ে প্রথম ম্যাচে বড় ধাক্কা খাওয়া পাকিস্তানের ভারতের বিপক্ষে জয়ের কোনো বিকল্প নেই।
