এবারের এশিয়া কাপ ফাইনালটা হয়ে গেল একপেশে। এমন একটা ফাইনাল হবে তা হয়তো ভাবেনি গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। ভারতের সামনে অনেকটা অসহায় আত্মসমর্পণ করে লঙ্কানরা। ভারতের এক মোহাম্মদ সিরাজের বোলিং তোপে উড়ে গেছে লঙ্কানদের ছয় ছয় জন ব্যাটার। মাত্র ১৫ ওভার ২ বল খেলে ৫০ রানে অলআউট দলটি। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১০ উইকেট ও ২৬৩ বল হাতে রেখে ম্যাচ জিতে যায় ভারত।
আসর শুরুর আগের জোড়াতালি দিয়ে স্কোয়াড ঘোষণা করেছিল শ্রীলঙ্কা। কারণ ইনজুরিতে ছিটকে যায় তাদের অনেক কি-প্লেয়ার। কিন্তু সেই দলটি মাঠে দেখায় চমক। গ্রুপপর্বে ২ ম্যাচে দুই জয়, সুপার ফোরে তিন ম্যাচে ২ জয়। দারুণ ছন্দে থাকা দলটি ফাইনালের বড় মঞ্চে এসে পুরো অচেনা। ঘরের মাঠে খেলতে নেমে মোহাম্মদ সিরাজের সুইং আর পেসে রীতিমতো খাবি খেয়েছে দলটির ব্যাটসম্যানরা। তাদের অবস্থা এমন ছিল যে ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি।
টস জিতে লঙ্কান অধিনায়ক ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ম্যাচে হানা দেয় বৃষ্টি। আর বৃষ্টি যেন সব সমীকরণ ওলট পালট করে দিল। ব্যাট হাতে নামার পরই লঙ্কান ব্যাটাররা ভারতীয় পেসারদের বোলিং তোপের মুখে পড়ে। ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেটে দেখা পায় ভারত। জাসপ্রিত বুমরাহর বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন কুশাল পেরেরা।
ম্যাচটা পুরোপুরি একপেশে হয়ে যায় শ্রীলঙ্কান ইনিংসের চতুর্থ ওভারে। সিরাজের এই এক ওভারে লঙ্কানদের ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে দেয় ভারত। এই ওভারে লঙ্কানদের ৪ টপ অর্ডার ব্যাটারকে ফেরান মোহাম্মদ সিরাজ, তছনছ করে দেন তাদের ব্যাটিং লাইন।
ওভারের প্রথম বলে শুরুটা পাথুম নিসাঙ্কাকে দিয়ে। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের লেন্থ বল হালকা ঠেলে দিতে গিয়ে জাদেজার হাতে ধরা পড়েন লঙ্কান ওপেনার। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ব্যাটিং করা সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ওভারের তৃতীয় বলে এলবিডব্লিউ করেন সিরাজ।
সামারাবিক্রমাকে আউট করার পরের বলেই চারিথ আশালঙ্কাকে ফিরিয়েছেন সিরাজ। তৈরি করেছিলেন হ্যাটট্রিকের সুযোগও। তবে সেই বলে আবার চার খেয়ে বসেন ডানহাতি পেসার। কিন্তু ওভারের শেষ বলে ঠিকই আবার উইকেট নিয়ে নেন সিরাজ, এবার ধনঞ্জয়া ডি সিলভা।
পরের ওভারে এসে দাসুন শানাকাকে ফিরিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট শিকার করেন সিরাজ। শানাকাকে বোল্ড করে তার উদযাপনটা ছিল দেখার মতো। ফুটবলের মহাতারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বিখ্যাত `সিউউ` উদযাপন করেন তিনি।
১২ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর হালকা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন কুশল মেন্ডিস এবং দুনিথ ভেল্লালাগে। কিন্তু কুশলকে ফিরিয়ে সেই জুটিও ভাঙেন সিরাজ।
লঙ্কানদের শেষ তিনটি উইকেট নিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। এর মধ্যে পাথিরানা এবং প্রমোদ মাদুশানকে পরপর দুই বলে ফিরিয়েছেন তিনি। শ্রীলঙ্কা থামে ৫০ রানে।
২১ রানে ৬ উইকেট নিয়ে নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন সিরাজ। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে ওয়ানডেতে চতুর্থ সেরা বোলিং ফিগার এটা। এর আগে জাসপ্রীত বুমরাহ, স্টুয়ার্ট বিনি এবং অনিল কুম্বলেও একই ইনিংসে ৬টি করে উইকেট পেয়েছেন। তবে সিরাজের চেয়ে রান কম দেয়ায় তালিকায় এগিয়ে আছেন তারা।
৫১ রানের মামুলি লক্ষ্য ভারতের সামনে। ব্যাট হাতে উড়ন্ত শুরু তাদের। শুবমান গিল ও ঈশান কিষাণের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৩৭ বল খেলেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত। ঈশান অপরাজিত ছিলেন ১৮ বলে ২৩ রান করে। আর গিল ২৭ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন।
ম্যাচ সেরা হয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ ও সিরিজ সেরা হয়েছেন কুলদীপ যাদব।