গৃহযুদ্ধ- দারিদ্রতা থেকে শুরু করে নানা কারণে দিনকে দিন বেড়েই চলছে অভিবাসী শরণার্থীদের সংখ্যা। উন্নত দেশগুলোতে বিশেষ করে ইউরোপে শরণার্থী ও অভিবাসী হওয়ার সংখ্যাটাই বেশি। দেশগুলোতে যে হারে অভিবাসী বাড়ছে, তারই সমানুপাতিক হারে বাড়ছে অভিবাসী ফুটবলারের সংখ্যাও। এই অভিবাসী ফুটবলারদের কল্যাণেই ফুটবল দুনিয়ায় নিজেদের আলাদা অবস্থানও তৈরি করে নিচ্ছে দেশগুলো।
এই যেমন রাশিয়ায় বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স দল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের দলে থাকা বেশিরভাগ ফুটবলারই ছিলেন অভিবাসী। এবারও অবশ্য অভিবাসীদের কাঁধে ভর দিয়েই ধরে রাখতে চায় নিজেদের সাফল্যের ধারাবাহিকতা। শুধু ফ্রান্স নয়, বিশ্বকাপজুড়েই বাড়ছে অভিবাসী ফুটবলারদের জয়গান।
ছোট্ট একটি পরিসংখ্যানই বিষয়টি প্রমাণ করে দেয়। বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ৩২ দলের মধ্যে মাত্র ৪ দলে নেই কোনো অভিবাসী ফুটবলার। বাকি দলগুলোতে অন্তত একজন করে হলেও রয়েছে অভিবাসী ফুটবলার। বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া ৮৩১ জন ফুটবলারের মধ্যে ১৩৭ জনই নিজ মাতৃভূমির হয়ে খেলছেন না। এর মধ্যে আছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা, করিম বেনজেমার মতো বড় ফুটবল তারকারা।
অভিবাসী ফুটবলারদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ফ্রান্স দলে। তাদের দলে প্রায় ১২জন ফুটবলারই অভিবাসী। মূল একাদশেও থাকবে অভিবাসীদের দখলে। ফ্রান্সের ক্ষেত্রে উল্টো চিত্রও আছে। বিশ্বকাপের ২২তম আসরে সবচেয়ে বেশি ৩৭ জন ফুটবলার ফ্রান্স ছেড়ে অন্য দেশের হয়ে খেলছেন। অর্থাৎ, ফুটবলার রপ্তানিতেও শীর্ষে আছে ইউরোপের এই দেশটি।
ফ্রান্সের এই ৩৭ জন ফুটবলারের ৩৩জনই প্রতিনিধিত্ব করবে আফ্রিকার কোনো না দেশকে। বাকি চার ফুটবলার প্রতিনিধিত্ব করবে পর্তুগাল (রাফায়েল গুইমেরো), জার্মানি (আর্মেল বেলা কোচাপ), স্পেন (আইমারিক লাপোর্তে) ও কাতারকে (করিম বৌদিয়াফ)।
ফরাসি ফুটবলারদের আফ্রিকাকে প্রতিনিধিত্ব করার একটি বিশেষ কারণ হলো ঔপনিবেশিক শাসন। আফ্রিকার দেশগুলোর বেশিরভাগই ছিল ফ্রান্সের উপনিবেশ। সেই সূত্রে বহু আফ্রিকানের বেড়ে ওঠা ফরাসি আবহাওয়াতে। বড় হওয়া ও ফুটবল শেখা ফ্রান্সে হলেও তারা তাদের শিকড়কে ভুলতে না পারায় ফিরেছেন নিজ দেশে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেও প্রতিনিধিত্ব করছেন নিজ ভূমিকে।
ফ্রান্সের পরের অবস্থানে আছে সমগ্র আফ্রিকা। কখনও বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল খেলতে পারেনি আফ্রিকান কোনো দেশ। তবে তাদের রয়েছে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ। তার মূল কারণ, মহাদেশটি প্রতিবছরই বহু ফুটবলার রপ্তানি করছে। তার প্রমাণও পাওয়া যায় ছোট্ট একটি পরিসংখ্যানে। কাতারে বিশ্বকাপ শিরোপার জন্য লড়াই করা ৩২ দলের ১১ টিতেই আছে আফ্রিকান ফুটবলার।
সবচেয়ে বেশি ৮ জন আফ্রিকান ফুটবলার আছে জার্মানি দলে। যদিও বছর চারেক আগে অভিবাসী ফুটবলার নিয়ে ঝড় ওঠেছিল জার্মান ফুটবলে। তবুও থামেনি জার্মানদের অভিবাসী ফুটবলার নির্ভরতা। সেবার ঝড়টা উঠেছিল মূলত তুরস্ক থেকে জার্মানিতে অভিবাসী হওয়া ফুটবলার মেসুত ওজিলকে কেন্দ্র করে। জার্মানি ছাড়াও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স দলেও আছে আফ্রিকানদের আধিপত্য।
এছাড়াও নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া দলেও রয়েছে একাধিক আফ্রিকান অভিবাসী ফুটবলার। যাদের বেশিরভাগই এসেছেন ক্যামেরুন, সুদান, ঘানা, মালি, গিনি বিসাউ, অ্যাঙ্গোলা, নাইজেরিয়া, কঙ্গো ও আইভেরি কোস্ট থেকে। যদিও এই দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ঘানাই এবার খেলবে বিশ্বকাপে।
বিশ্বকাপে মাত্র চার দলে নেই কোনো অভিবাসী ফুটবলার। দলগুলো হলো- আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, সৌদি আরব ও দক্ষিণ কোরিয়া। ল্যাতিন আমেরিকার দেশ দুইটিতে প্রতি বছরই তৈরি হয় নতুন নতুন প্রতিভা। তাই তাদের দলে বেশিরভাগ সময়ই থাকে না কোনো অভিবাসী ফুটবলার। বরং, তারাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়মিতই ফুটবলার রপ্তানি করছে।