পদত্যাগ করেছেন আইসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিওফ অ্যালারডাইস । বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
২০১২ সালে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) অপারেশনস ম্যানেজারের দায়িত্ব ছেড়ে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে আইসিসিতে যোগ দিয়েছিলেন অ্যালারডাইস। ২০২১ সালের নভেম্বরে তিনি প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে মানু শনেকে বরখাস্ত করা হলে আট মাস ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেন।
হঠাৎ পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যায় নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন অ্যালারডাইস। আইসিসির প্রকাশিত বিবৃতিতে ৫৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেট প্রশাসক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতে পারা আমার জন্য সম্মানের। ক্রিকেটের বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে আইসিসির সদস্যদের জন্য বাণিজ্যিক ভিত্তি স্থাপন করা পর্যন্ত আমরা যা কিছু অর্জন করেছি, তাতে আমি সত্যিই গর্বিত।’
ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অ্যালারডাইস আরও বলেছেন, ‘গত ১৩ বছর ধরে আমাকে সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য আইসিসির চেয়ারম্যান, পরিচালনা পর্ষদ এবং গোটা ক্রিকেট সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, পদত্যাগ করার এবং নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য এটাই সঠিক সময়। আমার আত্মবিশ্বাসী যে, ক্রিকেটের সামনে রোমাঞ্চকর সময় অপেক্ষা করছে। আমি আইসিসি ও বিশ্ব ক্রিকেট সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ সাফল্য কামনা করছি।’
নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য অ্যালারডাইসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ, ‘প্রধান নির্বাহী হিসেবে নেতৃত্ব ও নিবেদনের জন্য আইসিসি বোর্ডের পক্ষ থেকে জিওফকে (অ্যালারডাইস) আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে তাঁর প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাঁর কাজের জন্য আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ এবং ভবিষ্যতের জন্য তাঁকে শুভকামনা জানাই।’
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, অ্যালারডাইসের উত্তরসূরি নিযুক্ত করতে আইসিসি পরবর্তী পদক্ষেপ শুরু করবে।
আইসিসির পক্ষ থেকে অ্যালারডাইসের পদত্যাগের কারণ খোলাসা করা না হলেও ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, কিছু নিন্দনীয় কর্মকাণ্ডের কারণে হয়তো সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বিশেষ করে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সূচি ও ভেন্যু চূড়ান্ত করতে দেরি করা এবং গত বছর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনে বিশৃঙ্খলার জেরে অ্যালারডাইস পদত্যাগ করতে পারেন।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে ভারতীয় দলের পাকিস্তানে না যাওয়ার বিষয়টি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও সুরাহা করতে পারেননি অ্যালারডাইস। সূচি ঘোষণায় দেরি করাসহ নানা সমস্যার সমাধান করতে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) আইসিসির প্রধান নির্বাহী বরাবর চিঠিও পাঠিয়েছিল।
এমনকি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মূল সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান স্টার স্পোর্টস সূচি প্রকাশে ক্রমাগত দেরি করতে থাকায় তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল এবং টুর্নামেন্ট শুরুর ১০০ দিন আগে অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন প্রচার করার ব্যাপারে চুক্তির বাধ্যবাধকতার বিষয়টি আইসিসিকে মনে করিয়ে দিয়েছিল।
শুধু তাই–ই নয়। অভিযোগ আছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি অর্থ খরচ করা হয়েছে। এ নিয়ে আইসিসিরই পরিচালনা পর্ষদের বেশ কয়েকজন সদস্য প্রশ্ন তোলেন। বিপদ আঁচ করতে পেরে গত জুলাইয়েই পদত্যাগ করেন সংস্থাটির বিপণন ও যোগাযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ক্লেয়ার ফারলং এবং ভেন্যু পরিদর্শক দলের সদস্য ও টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজক কমিটির প্রধান ক্রিস টেটলি। এবার তাঁদের পথ অনুসরণ করলেন জিওফ অ্যালারডাইস।