ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী একবার সাক্ষাৎকারে এসে বলেছিলেন, "আমাকে ভালো বলা যায়, আমাকে খারাপ বলা যায় কিন্তু উপেক্ষা করা যায় না।" উপস্থাপক আবার পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়লেন, "কিন্তু তোমার গানগুলো? সেগুলো তো সকলে শোনে।"
প্রশ্ন এবার আপনার মনে আসতে পারে সাকিব আল হাসানের জন্মদিনে কেন এলো নচিকেতা প্রসঙ্গ! এবার মিলিয়ে দেখুন তো সাকিবের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গীত তারকার কথার মিল খুঁজে পাওয়া যায় কী না।
সাকিবের নামের পাশে `বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার` যেমন যোগ হয়েছে, তেমনি যোগ হয়েছে `বেয়াদব`, `ঘাড়ত্যাড়া` বিশেষণও। সে তো আর এমনি এমনি নয়! কত শতবার বিতর্কিত হয়েছেন সাকিব। তার দিকে উঠেছে আঙুল। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট? সাকিবকে ছাড়া ভাবা যায়?
সাকিবকে যারা একেবারে দৃষ্টির সীমানায়ও দেখতে পারে না তারাও ২২ গজের সাকিবকে দেখে ঝেড়ে কাশে, "ছেলেটার ক্রিকেট ঠিক আছে, যদি একটু মাঠের বাইরে ঠিকঠাক থাকত।"
সাকিবের কড়া সমালোচকও তার দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং-বোলিং দেখতে বাধ্য। তীব্র সমালোচনাও সাকিব থামাতে পারেন তার ক্যারিশম্যাটিক বোলিং ও ব্যাটিংয়ের দাপটে। মুখ ফেরানো সমালোচকও সাকিবে মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। সাকিবের সফলতা এখানেই। তিনি ভালোবাসায় রাখা মানুষ তো বটেই, তার নিন্দুককেও তিনি রাখেন তার জাদুতে বুঁদ করে।
একটা ব্যাপার দীর্ঘদিন ধরে লক্ষণীয় বাংলাদেশ ক্রিকেটে। বাংলাদেশ জিতুক বা হারুক- কোনো না কোনো রেকর্ড দখল করে বসেন সাকিব। ক্রিকেটের দুই সংস্করণে বর্তমান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তিনি, দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক, তামিম ইকবালের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, ক্রিকেটের খুঁটিনাটি পরিচিত থেকে অপরিচিত-রেকর্ড যেন সাকিবকে ছুঁতেই অপেক্ষায় থাকে। দেশের ক্রিকেটকে তিনি নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। বিশ্বব্যাপী টি-টোয়েন্টি লিগে খেলে লাল-সবুজের পতাকাকে করেছেন সুপরিচিত। হয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টারবয়। বাংলাদেশকে ঠিকঠাক না চিনলেও সাকিবের নাম জানেন, সাকিবের খেলার মুগ্ধ দর্শক- এমনও দেখা যায়।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাকিবের অভিষেক ঘটে ২০০৬ সালে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচ থেকে শুরু করে হালের আয়ারল্যান্ড সিরিজ পর্যন্ত কেটে গেছে ১৭ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছেন সাকিব। তাকে ছাড়া দলটাকেই যেন পরিপূর্ণ মনে হয় না।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি দেশকে দিয়েছেন উজাড় করে। পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসা, হয়েছেন সম্মানিত। নিন্দুকের সমালোচনাও জুটেছে তার কপালে। অবশ্য সাকিব সেসব তার বিখ্যাত মুচকি হাসি দিয়েই পার করে এসেছেন সবসময়। ৩৬ বছর বয়সে এসেও তিনি দুর্দান্ত। তার বল কথা বলে, ব্যাট হেসে ওঠে। সাকিবের আর বাড়তি শব্দ খরচের দরকার কী!
সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারে সাকিব টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন ১১২ ম্যাচ। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ৮৪সহ তার মোট রান দুই হাজারের বেশি। বল হাতে তুলে নিয়েছেন ১৩১ উইকেট। তার সেরা বোলিং ফিগার ২০ রানে ৫ উইকেট।
ওয়ানডে সংস্করণে খেলেছেন ২৩০ ম্যাচ। তার ব্যাট থেকে এসেছে সাত হাজারের বেশি রান। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস অপরাজিত ১৩৪*। সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ৯ বার, ফিফটির দেখা পেয়েছেন ৫৩ বার। বল হাতে নিয়েছেন ৩০১টি উইকেট। তার সেরা বোলিং ফিগার ২৯ রানে ৫ উইকেট। অবশ্য পাঁচ বা তার বেশি উইকেট পেয়েছেন চার বার।
ক্রিকেটের দীর্ঘ সংস্করণ টেস্টে সাকিব ম্যাচ খেলেছেন ৬৫টি। এখানে তার রান চার হাজারের বেশি। বল হাতে উইকেট নিয়েছেন ২৩১টি। সেঞ্চুরি এসেছে পাঁচবার, ফিফটির দেখা পেয়েছেন ৩০বার। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ২১৭। উইকেট নিয়েছেন ২৩১টি। সেরা বোলিং ফিগার ৩৬ রানে ৭ উইকেট।
বাংলাদেশের পোস্টার বয়ের আজ ৩৬তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন সাকিব আল হাসান।