• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

কলকাতা থেকে লর্ডস হয়ে মেলবোর্ন, সম্পন্ন হলো প্রায়শ্চিত্ত


সৌরভ কুমার দাস
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২২, ০৭:০৩ পিএম
কলকাতা থেকে লর্ডস হয়ে মেলবোর্ন, সম্পন্ন হলো প্রায়শ্চিত্ত

গত ছয় বছর ধরে বেন স্টোকস ইংল্যান্ডকে কোনো ম্যাচ জেতালেই আলোচনায় উঠে আসে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল। যেখানে প্রায় নিশ্চিত জয় ধরে নেওয়া ম্যাচে বেন স্টোকসের করা শেষ ওভারে শিরোপা খোয়াতে হয়েছিল ইংল্যান্ডকে।

এর তিন বছর ঘরের মাঠে ইতিহাসের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছে ইংল্যান্ড। লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ছিলেন স্টোকস। ফাইনালে তার অনবদ্য ৮৪ রানের অপরাজিত ইনিংসে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড।

ঠিক ওই সময়েও আলোচনায় ছিল, তবে কি ২০১৬ এর অভিশপ্ত ওভারের প্রাশ্চিত্ত লর্ডসে করলেন স্টোকস। তবে বেন স্টোকস নিজে তখন সন্তষ্ট হয়েছিলেন সেদিন! তিনি কি আসলেই লর্ডসের ইনিংসটাকেই প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে দেখেছেন! আমার ধারণা দেখেননি!

কারণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হারানো প্রায়শ্চিত তিনি ওয়ানডে বিশ্বকাপে করতে চাননি। তিনি যে চেয়েছিলেন টি-টোয়েন্টির প্রায়শ্চিত্ত টি-টোয়েন্টিতে করতে।

আর এজন্য বেঁছে নিলেন তাসমান সাগর পাড়ের দেশ অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসি মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে। বোলারদের সৌজন্য পাকিস্তানকে প্রথমে ১৩৭ রানে আটকে রেখেছিল ইংল্যান্ড।

তবে স্বল্প রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ডও শুরুতেই চাপে পড়ে! ইনিংসের প্রথম ওভারেই ফিরেন যান হেলস। তিন নম্বরে নামা ফিল সল্টও ফিরে গেলে শুরুতেই চাপে পড়ে ইংল্যান্ড।

এরপর পাল্টা আক্রমণ করে সেই চাপ সামলাতে চেয়েছিলেন ইংলিশ অধিনায়ক জশ বাটলার। তবে ছোট্ট ক্যামিও খেলে তিনিও বিদায় নিলে হার চোখ রাঙাচ্ছিল ইংল্যান্ডকে।

তবে তখনও উইকেটে ছিলেন বেঞ্জামিন স্টোকস নামকে একজন ইংলিশ ভদ্রলোক। ইংলিশদের বিপদে বরাবরই যার ব্যাটটা যেন বরাবরই চওড়া হয়ে ওঠে। মেলবোর্নের এত বড় ফাইনালে কেনো অন্যথা হবে!।

শুরুতে রান উঠলে দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে ইংল্যান্ড, মেলবোর্নের গ্যালারিতে পাকিস্তানের সমর্থনের দর্শকদের উল্লাস আর এর সাথে পাকিস্তানি বোলারদের গোলার মতো ধেয়ে ধেয়ে আসা একের পর এক ডেলিভারি! কি ছিল না স্টোকসের বিপক্ষে!

তবে সব প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলে দলকে জয় এনে দিতে পারলেই তো তাকে চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার বলা হয় আর সেটার পারফেক্ট উদাহরণ এই স্টোকস।

প্রথমে সঙ্গী হিসেবে পেলেন হ্যারি ব্রুককে। হ্যারিস, নাসিম শাহ’দের ডেডলি বাউন্সার, সাপের মতো সুইংয়ে বারবার নড়বড়ে হয়েছেন, তবে পিছু হটেননি স্টোকস। উইকেটে থিতু হয়ে সামলিয়েছেন প্রতিপক্ষের সব ব্রক্ষ্মাস্ত্র!

অপেক্ষা করেছেন সঠিক সময়ে আক্রমণে যাওয়ার। মাঝে সঙ্গী হারিয়েছেন, আবারও চাপে পড়েছেন। তবে ঠিকই চোখে চোখে রেখেই লড়াই করেছেন।

ফাইনাল থেকে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কায় থাকা দলকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছেন স্টোকসই। যদি পুরো ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপে স্টোকসের কাজ কেউ সহজ করে থাকেন সেটা মঈন আলী।

এই বাহাতির ১৯ রানের ছোট্ট ক্যামিওতে শেষদিকে স্টোকস বোধহয় একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। আর আগ পর্যন্ত রীতিমতো দম ধরেই ব্যাট হাতে লড়াই করেছেন তিনি।

যদিও মঈন ফেরার পরও বাকি পথ পারি দিতে হয়েছে স্টোকসকে। মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রের করা  ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে কাভার দিয়ে চার মারার পর ম্যাচ ড্র হয়ে গেলেও স্টোকসের শারীরি ভাষায় তার রেশ ছিল না এতটুকু।

কারণ, সব উচ্ছ্বাস, সব প্রায়শ্চিত তো ম্যাচ জয় নিশ্চিত হওয়ার পরই করবেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন তিনি। এর আগে শুধু ম্যাচ ড্র নয় নিজের ব্যাক্তিগত ইনিংস ফিফটিতে পরিণত হলেও তাতেও নিশ্চুপ ছিলেন তিনি।

এর বল এক বল ডট! পরের বল অর্থাৎ ১৯তম ওভারের শেষ বলে লেগ সাইডে সিঙ্গেল নিয়েই চূড়ান্ত উল্লাসে মাতলেন। লাফিয়ে ওঠা উদযাপনে যেন বুঝিয়ে দিতে চাইলেন ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের কলকাতার ইডেন গার্ডেনে করা সেই অভিশপ্ত ওভারের প্রায়শ্চিত্ত করলেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে।

মেলবোর্নের আকাশ, বাতাসও যেন সাক্ষি হলো কলকাতা থেকে লর্ডস হয়ে মেলবোর্নে এসে অভিশপ্ত এক ওভারের চূড়ান্ত প্রায়শ্চিত্ত।

Link copied!