কাতার বিশ্বকাপে এর চেয়ে ভালো শুরু বোধহয় হতে পারতো না ইংল্যান্ডের। প্রথম ম্যাচে্র প্রতিপক্ষ ইরানকে নিয়ে রীতিমতো ইরানকে নিয়ে ছেলে খেলা করেছে সাকা-কেনরা।
একে তো ইংল্যান্ডের একের পর আক্রমণ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিল ইরান। সেখানে নাকে মারাত্মক চোট পেয়ে ম্যাচের ১৭তম মিনিটে গোলরক্ষক বেইরানব্যান্ডের উঠে যাওয়া যেন তাদের জন্য মরার উপর খারার ঘা হয়ে ওঠে!
পুরো ম্যাচে দাপট দেখিয়ে ইরানের বিপক্ষে ৬-২ গোল ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছে ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপজয়ীরা। দুই গোল করেছেন সাকা ও এক গোল করে এসেছে স্টার্লিং, বেলিংহাম, র্যাশফোর্ড ও জ্যাক গ্রিলিশের পা থেকে। বিপরীতে ইরানের হয়ে দুই গোলের দুইটাই করেছেন ত্যারেমি।
ম্যাচের প্রথম থেকে ইরানের রক্ষণে হামলে পড়ে ইংলিশ ফুটবলাররা। প্রথম আক্রমণেই পেনাল্টির আবেদন করেছিল ইংল্যান্ড। তবে ভিএআর দেখে সে আবেদন নাকচ করে দেন রেফারি।
ম্যাচের ষষ্ট মিনিটে ডান পাশ থেকে দারুণ ক্রস দিয়েছিলেন ইংলিশ ফুটবলার লুক শ। তবে সাকা তার ক্রসে পা লাগাতে না পারায় সুযোগ হাতছাড়া হয় ইংল্যান্ডের।
এরপর ম্যাচে অষ্টম মিনিটে ইংলিশ ফুটবলার ট্রিপারের মারা ফ্রি কিকক্লিয়ার করতে এসে নিজ দলের সতীর্থের সঙ্গে সংঘর্ষে মারাত্মকভাবে নাকে আঘাত পান ইরান গোলরক্ষক বেইরানব্যান্ড। দীর্ঘসময় ধরে চলে তার শুশ্রূষা। এতে করে খেলা বন্ধ ছিল প্রায় প্রায় সাত মিনিট।
এরপর আবার খেলা শুরু হলেও মাত্র এক মিনিটের ব্যবধানে নিজেকে উঠিয়ে নেওয়ার সংকেত দেন ইরান গোলরক্ষক। ফলে ম্যাচের প্রথম ১৭ মিনিটের মধ্যেই বাধ্য হয়ে গোলরক্ষক বদল করতে হয় তাকে।
এরপর আবার খেলা শুরু করলে আবারও আধিপাত্য দেখানো শুরু করে ইংল্যান্ড। তবে এর মাঝে মাঝে আক্রমণের চেষ্টা চালিয়েছে ইরানও।
ম্যাচের ৩০তম মিনিটে দারুণ এক সুযোগ হাতছাড়া করে ইংল্যান্ড। ডান পাশ থেকে মারা রহিম স্টার্লিয়ের দারুণ পাস সাকা নেটের বাইরে মারলে হতাশ হতে হয় ইংলিশ শিবিরকে।
পরের মিনিটেই আরও একবার হতাশ হতে হয় ইংল্যান্ডকে। কর্ণার থেকে উড়ে আসা বলে হ্যারি ম্যাগুয়ের হেড করলেও সেটাও ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে।
তবে গোলের জন্য এরপর আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি ইংল্যান্ডকে। ম্যাচের ৩৫তম মিনিটে সাকার ক্রসে দুর্দান্ত হেডে ইংলিশদের এগিয়ে দেন এই ম্যাচেই ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হওয়া জেড বেলিংহ্যাম। অভিষেক ম্যাচেই গোল করে রাঙিয়ে রাখলেন সদ্য কৈশোর পেরোনো এই ইংলিশ ফুটবলার।
বেলিংহ্যাম এই ম্যাচেই তৃতীয় সর্বকনিষ্ট ফুটবলার হিসেবে ইংল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েছেন। এই রেকর্ডে সবার উপরে মাইকেল ওয়েনের, যিনি ১৯৯৮ সালে মাত্র ১৮ বছর ১৯৮ ইংল্যান্ডের জার্সি পড়েছিলেন। বর্তমান দলে থাকা লুক শ’র অভিষেক হয়েছিল ২০১৪ সালে মাত্র ১৮ বছর ৩৪৭ দিন বয়সে।
গোল হজম করার পর শোধ দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ইরান। তবে ইংলিশদের শক্ত রক্ষণে থুবড়ে পড়েছে তাদের আক্রমণ।
বিরতিতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে আবারও গোলের দেখা পায় পায় ইংল্যান্ড। প্রথম গোলে অ্যাসিস্ট করে এবার নিজেই গোলদাতার আসনে বসেন সাকা। কর্ণার থেকে উড়ে আসা বলে প্রথমে সতীর্থ ভালো করে হেড দিতে না পারলে বল যায় সাকার সামনে, সেখান থেকেই দুর্দান্ত শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।
এক মিনিটের ব্যবধানে ম্যাচে এবার গোলদাতা রহিম স্টারলিং। বক্সের ডান পাশ থেকে অধিনায়ক হ্যারি কেনের ক্রসে নিখুঁত দক্ষতায় পা লাগিয়ে ইংল্যান্ডকে ৩-০ এগিয়ে দেন এই ইংলিশ ফুটবলার।
বিরতি থেকে ফিরেও আক্রমণের ধার বজায় রেখেছিল ইংল্যান্ড। ম্যাচের ৪৮তম মিনিটে অধিনায়ক হ্যারি কেইন ফাউলের শিকার হলে ফ্রি কি পায় ইংলিশরা। তবে বক্সের উপরে পাওয়া সেই ফ্রি কি কাজে লাগাতে পারেনি তারা।
ম্যাচের ৫৪তম মিনিটে একক দক্ষতায় বা পাশ থেকে বল নিয়ে ঢুকে গিয়েছিলেন ইংলিশ ফুটবলার বেলিংহাম। তবে শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক পাস দিতে না পারায় বড় কোনো সুযোগ তৈরি হয়নি।
পরের মিনিটেই কাউন্টার অ্যাটাকে প্রায় মাঝ মাঠ থেকে একাই বল নিয়ে ইরানের বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন স্টার্লিং। তবে শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ করতে পারেননি তিনি।
ম্যাচের ৬২তম মিনিটে চতুর্থ গোলের দেখা পায় ইংল্যান্ড। মাঝমাঠের একটু উপর থেকে বল পেয়ে সাকাকে বা পাশে পাস দিয়েছিলেন স্টার্লিং। বল পেয়ে সামনে থাকা একাধিক ইরান ফুটবলারকে বোকা বানিয়ে জটলার মধ্যে দিয়ে নিখুঁত শটে ম্যাচে নিজের জোড়া গোল করেন সাকা, ইংল্যান্ড এগিয়ে যায় ৪-০ গোলের ব্যবধানে।
তিন মিনিটের ব্যবধানে ম্যাচে প্রথম গোলের দেখা পায় ইরান। ডান পাশ থেকে সতীর্থে গোলজাদেহর কোনাকুনি পাস থেকে গোলার মতো শটে লক্ষ্যভেদ করেন ইরানি ফুটবলার ত্যারেমি।
ম্যাচের ৭১তম মিনিটে পঞ্চম গোলের দেখা পায় ইংল্যান্ড। বদলি হিসেবে নামার এক মিনিটের মাথায় লক্ষ্যভেদ করেন মার্কাস র্যাশফোর্ড। কেনের কাছ থেকে ডান পাশে বলে ম্যাচে প্রথমবার বল স্পর্শ করেন তিনি। এরপর বক্সে ঢুকে ডান পাশ থেকে নিখুঁত গড়ানো শটে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দেন ৫-১ গোলের ব্যবধানে।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার এক মিনিটে ইরানে জালে আবারও বল পাঠায় ইংল্যান্ড। সতীর্থ উইলসনের অ্যাসিস্ট থেকে লক্ষ্যভেদ করেন বদলি হিসেবে নামা জ্যাক গ্রিলিশ, ইংলিশরা এগিয়ে ৬-১ গোলের ব্যবধানে।
ম্যাচের একদম শেষ দিকে ব্যবধান কমানোর সুযগ পেয়েছিল ইরান। কিন্তু শট ক্রসবারে লাগলে হতাশ হতে হয় তাদের। এর এক মিনিটের ব্যবধানে ভিএআরে দেখে ইরানকে পেনাল্টি দেন রেফারি।
স্পট থেকে ইংলিশ গোলরক্ষকে বোকা বানিয়ে বা পাশ থেকে লক্ষ্যভেদ করে গোল ব্যবধান কমান ইরানি ফুটবলার ত্যারেমি। ম্যাচে এটা তার জোড়া গোল। এরপরই খেলা শেষের বাশি বাজান রেফারি। ৬-২ গোলের বড় ব্যবধানের জয়ে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করে ইংল্যান্ড।