ফুটবলে লাল কার্ড হরহামেশাই দেখা যায়। কোনো খেলোয়াড় গুরুতর অপরাধ করলে তাকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। এবার স্লো ওভার-রেটের কারণে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে দেখা গেছে এক ক্রিকেটারকে। ক্রিকেট ইতিহাসে এটিই প্রথম লাল কার্ড প্রদর্শনের ঘটনা। যা সেন্ট কিটস দ্বীপের ওয়ার্নার পার্ক এই ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকল।
সোমবার (২৮ আগস্ট) সিপিএলে সেন্ট কিটস এন্ড নেভিস প্যাট্রিয়টসের বিপক্ষে মুখোমুখি হয় ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স। এই ম্যাচে স্লো ওভার রেটের কারণে লাল কার্ড দেখেন ত্রিনবাগোর ক্রিকেটার সুনীল নারাইন। তিনি সিপিএল ক্রিকেটের ইতিহাস হয়ে থাকলেন। যিনি প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে লাল কার্ড দেখে মাঠে ছাড়লেন।
এদিন টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নেমে নির্ধারিত সময়ে ২০তম ওভার শুরু করতে পারেনি ত্রিনবাগো। তাই অধিনায়ক কাইরন পোলার্ডকে বিষয়টি বুঝিয়ে দেওয়ার পর ১৯ ওভার শেষে তাকে লাল কার্ড দেখান আম্পায়ার জাহিদ বাসারাথ। সেই সময় ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে ইয়ান বিশপ বলেন, “এখানে ঐতিহাসিক একটি মুহূর্ত হতে পারে ‘লাল কার্ড’। কেউই এই রংয়ের কার্ড দেখতে চায় না। তাদের (ত্রিনবাগো) এখন দশজন নিয়েই ফিল্ডিং করতে হবে। তাই কাউকে মাঠ ছাড়তে হবে এবং ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে কেবল দুইজন ফিল্ডার থাকবে।”
তাই ইনিংসের ১৯তম ওভার শেষে নারাইনকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন অধিনায়ক পোলার্ড। নারাইন মাঠের বাইরে যাওয়ার আগেই নিজের ৪ ওভার বল শেষ করে ২৪ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন। একজন ফিল্ডার কম নিয়ে ইনিংস শেষ করতে হয় ত্রিনবাগোর। শুধু তা-ই নয়, নিয়ম অনুযায়ী তখন ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে ছিলেন মাত্র দুইজন ফিল্ডার।
পোলার্ডরা ১০ জনের দলে পরিণত হলে এই সুযোগে পুরো ফায়দা লুটেন প্যাট্রিয়টস ব্যাটার শেরফান রাদারফোর্ড। শেষ ওভারে ১৮ রান সংগ্রহ করে ত্রিনবাগোকে ১৭৯ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় প্যাট্রিয়টস। তারপরও পরাজয় এড়াতে পারেনি প্যাট্রিয়টস। তাদের ১৭৯ রানের লক্ষ্য ১৭ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে নেয় ত্রিনবাগো। ৩২ বলে ৬১ রানের টর্নেড ইনিংস খেলেন নিকোলাস পুরান। পোলার্ড ব্যাট থেকে আসে ১৬ বলে ৩৬ রান ও আন্দ্রে রাসেলের ৮ বলে অপরাজিত ২৩ রানের ইনিংসের সুবাদে সহজ জয় পায় পোলার্ডরা।
ম্যাচ জয়ের পর লাল কার্ড দেখানোকে হাস্যকর বলে অভিহিত করেন পোলার্ড। ত্রিনবাগো অধিনায়ক বলেন, “সত্যি বলতে এটি সকলের কঠোর পরিশ্রমকে মাটি করে দেবে। আমরা হলাম দাবার ঘুঁটির মতো এবং আমাদের যেভাবে চালাবে সেভাবেই চলছি। আমরা যতটা দ্রুত সম্ভব খেলব। এমন টুর্নামেন্টে যদি আপনাকে ৩০-৪৫ সেকেন্ড দেরির জন্য শাস্তি দেওয়া হয়, তা একদমই হাস্যকর।”
সিপিএলের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বোলিং দলের ইনিংসে ১৮তম ওভার শুরু করতে হবে ৭২ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে। তা না হলে ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে একজন ফিল্ডার কম নিয়ে খেলতে হবে তাদের। সেই ওভার শেষ করতে হবে ৭৬ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে।
এরপর ১৯তম ওভার ৮০ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের মধ্যে শেষ করতে হবে। তবে সেই ওভার শুরুর আগে ফিল্ডিং দল সময়ের চেয়ে পিছিয়ে থাকলে তখন বৃত্তের বাইরে দুইজন ফিল্ডার কম থাকবেন। অর্থাৎ তখন বৃত্তের বাইরে থাকবে ৪ জন ফিল্ডার। ইনিংসের ১৯তম ওভারেও যদি একই ঘটনা ঘটে তখন একজন ফিল্ডারকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠের বাইরে পাঠাবেন আম্পায়ার। কোন ফিল্ডার লাল কার্ড দেখবেন সেটা ঠিক করবেন ফিল্ডিং দলের অধিনায়ক।
স্লো ওভার-রেটের কারণে সাধারণত ফিল্ডিং দলই শাস্তি পায়, তবে এবার ব্যাটিং দলকেও শাস্তি ভোগ করেতে হতে পারে। আম্পায়ারের প্রথম এবং শেষ সতর্কতার পর কোনো ব্যাটিং দল যদি সময় নষ্ট করে তাহলে প্রতিটি সময় নষ্টের ঘটনায় তাদের পাঁচ রান করে কেটে নেওয়া হবে। স্লো ওভার রেটের ব্যাপারটি দেখভাল করবেন তৃতীয় আম্পায়ার। প্রতি ওভার শেষে অন-ফিল্ড আম্পায়ারদের মাধ্যমে অধিনায়কদের সময়ের ব্যাপারে জানিয়ে দেবেন তিনি।