• ঢাকা
  • বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪, ১৪ কার্তিক ১৪৩১, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

আইপিএল-কেন্দ্রিক জুয়ার থাবায় দেশ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৩, ১১:৫৮ এএম
আইপিএল-কেন্দ্রিক জুয়ার থাবায় দেশ

খেলা মোট ২৪০ বলের। ম্যাচ ধুমধাড়াক্কা ছয়-চারে সয়লাব। স্টেডিয়ামে চলে ডিজের বাজানো তালে চিয়ার্সগার্লদের নাচন। জয়ী টিমের উল্লাস আর বিজিতরা আশায় বাঁচে পরের ম্যাচের।

ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ভার্সন টি-টোয়েন্টির সারসংক্ষেপ এমনই। এর সবচেয়ে ব্যয়বহুল, বড় আর তুমুল আলোচনার প্রামাণ্য যেন আইপিএল। এ টুর্নামেন্ট শুরু হলেই বিপুল পুঁজির লগ্নিতে নড়েচড়ে বসে মুনাফালোভী চক্র। এ অসাধুদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক আইন, সীমানা কিছুই মানে না।

গত ১২ এপ্রিল দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, রাজশাহীতে আইপিএলের ম্যাচ নিয়ে অনলাইনে জুয়া খেলার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তাররা বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপস ব্যবহার করে ক্যাসিনো ও জুয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করছিলেন।

গণমাধ্যমের তথ্যে আরও জানা যায়, ওয়ান এক্স বেট, বেট থ্রি-সিক্সটি-ফাইভ, মোস্ট বেট বিডি, নাইন উইকেটসসহ প্রায় ১০০ সাইটে আইপিএলের জুয়া চলছে। অনলাইন বেটিং সাইটগুলোর অনেকগুলোতে যেকোনো ইউজার ঢুকতে পারেন। আবার কিছু বেটিং সাইটে ঢুকতে নিবন্ধন করতে হয়। এমনও অনেক ওয়েবসাইট আছে যেগুলোতে ডলার খরচ করে প্রবেশ করতে হয়। জুয়ার টাকার লেনদেন হচ্ছে বিকাশ, নগদ, রকেট বা ভিসা, মাস্টারকার্ডে। অনেকে আবার বেটিং সাইটগুলোতে বিট কয়েন ইউজ করেন অংশ নিচ্ছেন। জুয়ার পর ওই সব অর্থ ক্রেডিট কার্ড, ই-ব্যাংকিং ও হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে। আইপিএলের ম্যাচ নিয়ে জুয়া বাবদ দিনে কী পরিমাণ টাকা দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে তার কোনো হিসাব নেই সরকারের কাছে।

সরকার গত কয়েক বছরে ৩ হাজার ৫০০টির বেশি অনলাইন জুয়ার সাইট বন্ধ করে দিয়েছে। সিআইডি, ডিবি এবং র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছে জুয়ার সাইট পরিচালনাকারী শতাধিক ব্যক্তি। তবে প্রতিটি সাইট বন্ধ করার পর জুয়াড়ি চক্র ভিপিএন দিয়ে সাইটগুলো আবার সচল করে।

গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে আইপিএলের খেলায় বাজি ধরার অভিজ্ঞতা জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন। তার ভাষ্য, এক খেলায় ওভারের শেষ বলে ক্রিজে ব্যাট করছিলেন বিরাট কোহলি। সে বলে ছক্কা মারা নিয়ে তিনি বাজি ধরেন ১ হাজার টাকা। কিন্তু ছক্কা না হওয়ায় তিনি বাজিতে হেরে যান। তিনি বলেন, “কোহলি যদি ছক্কা মারতেন, তাহলে আমি ১০ হাজার টাকা পেতাম। কিন্তু হলো না।” বিপুল অঙ্কের টাকা জুয়ার হেরে সর্বস্ব হারিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের কথাও গণমাধ্যমে উল্লেখিত।  

আইপিএলের খেলা নিয়ে এভাবেই চলছে দেশের আর্থিক খাতে নৈরাজ্য। মাঠের খেলার চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে জুয়া, বাজি ও হুন্ডির মাধ্যমে দেশের টাকা বাইরে পাচার। আমরা যাকে খেলা ভাবছি, চোখের আড়ালে তা হয়তো রূপ নিয়েছে মরণখেলায়।   

Link copied!