নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্পেন। নারী ফুটবল ইতিহাসে এটি তাদের প্রথম শিরোপা। শুধু তাই নয়, বিশ্ব ফুটবল ইতিহাসে স্পেনই একমাত্র দেশ যাদের নারী ও পুরুষ উভয় দল বিশ্বকাপ জিতেছে।
‘ইটস কামিং হোম’ প্রতিটি বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ড ফুটবল দলের সমর্থকেরা আশায় বুক বাঁধেন এবার ঘরে ফিরবে বিশ্বকাপ। কিন্তু সেই আশা আর পুরন হয় না। ১৯৬৬ সালের ছেলেদের পর আবরও ফাইনালে উঠলো ইংলিশরা। তবে, মেয়েদের বিশ্বকাপের ফাইনালেও পারলো না ত্রি-লায়ন্সরা শিরোপা জিততে। স্পেনের কাছে হেরে ভঙ্গ হলো বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন।
২০১০ সালে প্রথমবার ফাইনালে উঠেই বিশ্বকাপ জিতেছিল স্পেনের পুরুষ ফুটবল দল। ১৩ বছর পর প্রথমবার ফাইনাল খেলেই বিশ্বকাপ জিতল স্পেনের নারী ফুটবল দল। তবে স্পেনের ছেলেরা ফাইনালে উঠেছিল ১৩ বারের চেষ্টায়, আর দেশটির মেয়েরা তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসেই উঠেছে ফাইনালে। দু’দলের ভিতর আরও পার্থক্য আছে। ২০১০ সালে স্পেন যদি বিশ্বকাপ না জিততো তাহলে সবাই অবাক হতেন। আর এবার দেশটির মেয়েরা যে শিরোপা জিতবে তার বাজি ধরার লোকই ছিল না। ছিল না তারা বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাব্যদের সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও। সবাইকে চমক দেখিয়ে তারাই শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় পড়ল।
সিডনিতে অল-ইউরোপিয়ান ফাইনালে পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলা উপহার দেয়া এলা টনি আর লরেন হ্যাম্পরা ছিলেন নিজেদের ছায়া হয়ে। অন্যদিকে, স্পেন খেলে অল অ্যাটাকিং ফুটবল।
ম্যাচের শুরু থেকেই ইংলিশদের চাপে রেখেছিল স্পেন। বল পজিশনিং থেকেই শুরু করে গোলে শট, সবখানেই আধিপত্য ছিল স্প্যানিশদেরই।
তবে, ম্যাচের প্রথম বড় সুযোগ পেয়েছিল ইংল্যান্ডই। দলের ম্যানসিটি স্ট্রাইকার লরেন হেম্প পঞ্চম মিনিটে স্প্যানিশ গোলরক্ষক কাতা কোলের ও ১৬ মিনিটে ক্রসবারের বাধায় গোল পাননি।
ম্যাচের প্রথম বিশ মিনিট পর্যন্ত ৮০ শতাংশ বল রেখেছিল নিজেদের পায়েই। সেই ধারাতেই ২৯ মিনিটে লিড পায় স্পেন।
বাম প্রান্ত ধরে আক্রমণে উঠে আসেন বার্সেলোনা তারকা মারিওনা কালদেন্তি। ডি-বক্সের ঠিক আগেই পাস দিয়েছেন লেফটব্যাক থেকে ওভারল্যাপ করে আসা ওলগাকে। বাম পায়ের কোণাকুণি শটে ইংলিশ গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন রিয়াল মাদ্রিদের এই ফুটবলার (১-০)।
গোল হজমের পরেই যেন আরও বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিতে শুরু করে স্পেন। বল পজিশন ধরে রেখে আরও একাধিকবার আক্রমণে উঠেছে স্পেন। যদিও শেষ পর্যন্ত ফিনিশিং অভাবে আর গোল পাওয়া হয়নি তাদের।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার বাড়ানোর জন্য লরেন জেমস আর ক্লোয়ি কেলিকে মাঠে নামান ইংলিশ কোচ ওয়েগম্যান। তাতেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি ত্রি-লায়ন্সদের।
উল্টো স্পেন দারুণ দুটি সুযোগ তৈরি করে। দুইবারই তাদের গোলবঞ্চিত করেছেন ইংলিশ গোলরক্ষক মেরি ইয়ার্পস।
প্রথমে কালদেন্তির একক প্রচেষ্টায় নেওয়া শট ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। এর পরে তো জেনিফার হারমোসোর পেনাল্টি ঠেকিয়েছেন এই গোলরক্ষক। তার কাছেই যেন স্পেনকে বারবার হার মানতে হয়েছে। ইংল্যান্ডকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলেন ইয়ার্পস। তবে, দলের ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় গোল আর পাওয়া হয়নি।
যোগ করা ১৬ মিনিটেও সুবিধা করতে পারেনি ইংলিশ মেয়েরা। শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক ওলগার গোলেই প্রহমবারের মত নারীদের বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেলো স্পেন।