রূপকথা কি শুধুমাত্র সমাজের বিত্তবানরাই লিখতে পারেন? নীতিশ কুমার রেড্ডি দেখিয়ে দিলেন কীভাবে দারিদ্রেরও রূপকথা লেখা যায়। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা একটা ছেলে নীতিশ। কিছুদিন আগে নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন, ‘আমার এই ক্রিকেটের জন্য বাবা একটা সময় চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। একদিন তো সংসারে টাকা-পয়সার এতটাই টানাটানি ছিল যে, দুই বেলা ঠিকমতো খেতেও পারতাম না আমরা। তার জন্য আমি বাবাকে কাঁদতেও দেখেছি। এই দৃশ্যটাই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। মনস্থির করে ফেলি, যতই প্রতিবন্ধকতা আসুক না কেন, ক্রিকেটার আমি হবই।’
একটি সাফল্য যে কীভাবে একটি সাধারণ পরিবারের জন্য আনন্দের বন্য বইয়ে দেয়, তা এবার দেখা গেল। ভারতের নীতিশ মাত্র ২১ বছর বয়সে মেলবোর্নের মাঠে ৮৩ হাজার দর্শকের সামনে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন।
একটা সময়ে ভারত ফলোঅনের সঙ্গে লড়াই করছিল, নীতিশের এই শতরান শুধু ফলোঅনের হুমকি থেকে দলকে রক্ষা করেনি, এর পাশাপাশি নিজের দলকে ম্যাচেও ফিরিয়ে এনে ছিল। এই সেঞ্চুরি দেখতে স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন তার বাবা মুতয়ালা রেড্ডি সহ পরিবারের সকল সদস্য।
নীতিশ যখন স্কট বোল্যান্ডের বলে সামনে একটি বড় শট মেরে নিজের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন, তখন তার বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি তা থামাতে না পেরে হাজারো মানুষের মাঝে কাঁদতে থাকেন। চারপাশের সকলের কাছ থেকে অভিনন্দন পেতে থাকেন। তিনি হাত জোড় করে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানান। নীতিশের মায়ের চোখ দিয়েও গড়িয়ে পড়ে পানি।
এই সিরিজেই টেস্ট অভিষেক হয় নীতিশের। তিনি ক্রমাগত ভালো ইনিংস খেলছিলেন, কিন্তু মেলবোর্নের ঐতিহাসিক মাঠে প্রথমবারের মতো ৫০ রানের সীমা অতিক্রম করেন। হাফ সেঞ্চুরি করেও থেমে থাকেননি তিনি। সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন নীতিশ।
মুতয়ালা রেড্ডি তার ছেলের সেঞ্চুরি সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমাদের পরিবারের জন্য, এটি একটি বিশেষ দিন এবং আমরা আমাদের জীবনে এই দিনটিকে ভুলতে পারব না। সে ১৪-১৫ বছর বয়স থেকে ভালো পারফর্ম করছে এবং এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি একটি বিশেষ অনুভূতি। আমি অনেক চাপের মধ্যে ছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে শুধু শেষ উইকেটে সিরাজ বাকি ছিল।’