শান্ত আর মুশফিকের ব্যাটে চড়ে ফাইনালের মঞ্চে ১৭৫ রানের পুঁজি পেয়েছিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। এই রান ডিফেন্ড করতে পারলেই প্রথমবারের মতো শিরোপা জিততে পারতো সিলেট। কিন্তু মাশরাফির দলের সামনে ব্যাট হাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের লিটন কুমার দাস ও জনসন চার্লস।
শুরুতে লিটনের ব্যাটের জয়ের মঞ্চ তৈরি হয় কুমিল্লার, শেষে সেই মঞ্চের রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়ে কুমিল্লার জয় নিশ্চিত করেন চার্লস। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ফাইনালের লড়াইয়ে সিলেটকে সাত উইকেটের ব্যবধানে হারিয়েছে ইমরুল কায়েসের দল। এই নিয়ে বিপিএলের ইতিহাসে রেকর্ড চতুর্থবার শিরোপা জিতলো কুমিল্লা। এর আগে ২০১৫, ২০১৯ ও ২০২২ সালেও বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দলটি।
শিরোপা জেতার লড়াইয়ে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম ওভারেই সিলেটের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ১৭ রান। কিন্তু পরের ওভারে আরেক ওপেনার তৌহিদ হৃদয় ও তিন নম্বরে নামা মাশরাফি বিন মুর্তজা দ্রুত ফিরে গেলে চাপে পড়ে সিলেট।
তবে শুরুতে দুই উইকেট হারালেও শান্তর ব্যাটিংয়ে সেটা যেন বুঝতেই পারলো না সিলেট। ছয় ওভারের পাওয়ার প্লেতে উঠলো ৪২ রান। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম।
মুশফিক আর শান্ত মিলে সিলেটের বড় রানের মঞ্চ প্রস্তুত করেন। ৩৮ বলে ফিফটি করা স্পর্শ করার পর আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন শান্ত্র। যদিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, ফেরেন ইনিংসের ১৩তম ওভারে। কুমিল্লার স্পিনার মঈন আলির বল এগিয়ে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হওয়ার আগে ৪৫ বলে ৯ চার ও এক ছক্কায় ৬৪ রান করেন তিনি।
চলতি টুর্নামেন্টে শান্তর সংগ্রহ ৫১২ রান। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিপিএলের কোনো আসরে ৫০০ বা তার বেশি রান করলেন শান্ত।
এরপর ১৩৪ থেকে ১৫২ রানের মধ্যে আরও তিন উইকেট হারায় সিলেট। উইকেটে এসে দ্রুত ফিরে যান সিলেটের জিম্বাবুইয়ান ব্যাটার রায়ার্ন বার্ল। যদিও মোস্তাফিজের পিচ্ছিল হাতের সৌজন্য একবার জীবন পেয়েছিলেন কিন্তু ফিরেছেন মাত্র এক বলের ব্যবধানে।
থিসারা পেরেরা তো রানের খাতাই খুলতে পারেননি, সুনীল নারিনের বলে ফেরেন শূন্য রানে। অন্যপাশে অবশ্য রানের চাকা সচল রেখেছিলেন মুশফিক। একপ্রান্তে ব্যাটারদের আসা যাওয়ার মিছিল লেগে থাকলেও মুশির আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যায় সিলেট।
এরপর টানা দুই বলে দুইবার জীবন পাওয়া লিন্ডে ফিরেছেন মাত্র তিন রানে। এর আগে তার ক্যাচ ফেলেছেন মঈন আলি ও লিটন দাস।
বলতে গেলে শান্ত ফেরার পর প্রায় একা হাতেই সিলেটের ইনিংস টেনেছেন মুশফিক। শেষ পর্যন্ত তার ৪৮ বলে পাঁচ চার ও তিন ছক্কায় ৭৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি আর সিলেট পায় ১৭৫ রানের সংগ্রহ।
লক্ষ্য তাড়া করতে শুরুতেই জোড়া উইকেট হারায় কুমিল্লা। আগ্রাসী শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি সুনীল নারাইন, ফিরে যান পাঁচ ১০ রান করে। তিন নম্বরে নেমে অধিনায়ক ইমরুল কায়েস ফেরেন দলীয় ৩৪ রান।
তবে অন্যপাশে লিটন কুমার দাসের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে সাবলিল গতিতেই রান উঠেছে কুমিল্লার স্কোরবোর্ডে। চার নম্বরে নামা জনসন চার্লস তাকে দিয়েছেন যোগ সঙ্গ।
প্রথম পাওয়ার প্লেতে এই জুটির ঝড়ো ব্যাটিংয়ে কুমিল্লার স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ৪৯ রান। চার্লসের চেয়ে একটু বেশিই আগ্রাসী ছিলেন লিটন। দুজনের ব্যাটিংয়ে ১২ ওভারেই স্কোরবোর্ডে জমা হয় ১০০ রান।
তবে ৩৬ বলে ফিফটি করা এই ডানহাতি ব্যাটার খুব বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি। দলীয় ১০৪ রানে রুবেল হোসেনে বলে স্কয়ার লেগে শান্তর দুর্দান্ত ক্যাচ হয়ে ফেরার আগে লিটনের ব্যাট থেকে আসে ৩৯ বলে সাত চার ও এক ছক্কায় ৫৫ রানের ইনিংস। আর এতে চার্লসের সঙ্গে ভেঙে যায় ৭০ রানের জুটি।
শেষ ছয় ওভারে জয়ের জন্য কুমিল্লার দরকার ছিল ৬০ রানের। এরপর ১৫তম ওভার করতে এসে মাত্র তিন রান দেন সিলেট স্পিনার লিন্ডে। পরের ওভারে উড পাঁচ রান দিলে জয়ের রাস্তা কঠিন হয়ে যায় কুমিল্লার সামনে।
চার ওভারে তখন প্রয়োজন হয় ৫২ রান। শুরুতে কঠিন মনে হলেও ১৬তম ওভার করতে আসা রুবেল হোসেনের এক ওভারেই তিন ছয়, এক চার ও এক সিঙ্গেলে ২৩ রান নিয়ে রাস্তা সহজ করে ফেলেন মঈন আলি ও জনসন চার্লস। চার্লসের ব্যাট থেকেই এসেছে ১৬ রান।
১৮তম ওভারে তানজিম হাসান সাকিব আট রান দিলে শেষ দুই ওভারে কুমিল্লার জয়ের জন্য প্রয়োজন হয় ২১ রান। লিন্ডের করা ১৯তম ওভারে ১৮ রান নিলে জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় কুমিল্লার।
শেষ ওভারে তিন রানের সমীকরণ মেলাতে কুমিল্লার লেগেছে দুই বল। শেষ পর্যন্ত ৫২ বলে সাত চার ও পাঁচ ছক্কায় চার্লস ৭৯ এবং ১৭ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ২৫ রানে অপরাজিত ছিলেন মঈন আলি।