ম্যাচের যোগ করা সময়ের নবম মিনিটের খেলা চলছে। যোগ করা সময়ের খেলা শেষ হতে ঘড়ির কাঁটায় আর ৯০ সেকেন্ডের মতো বাকি। তখন পর্যন্ত স্কোরলাইন ১-১। ব্রাজিলের আক্রমণগুলো যেভাবে ব্যর্থ হচ্ছিল, তাতে মনে হয়েছিল, ম্যাচটা ড্র হতে যাচ্ছে। এমন সময় ব্রাজিলের ত্রাতা হয়ে হাজির হন ভিনিসিয়ুস। বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার দারুণ এক শটে কলম্বিয়ার জালে বল জড়ান রেয়াল মাদ্রিদ উইঙ্গার। তাতে ২-১ গোলের স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে দরিভাল জুনিয়রের দল।
ব্রাজিলের জন্য ম্যাচটি ছিল প্রতিশোধের। এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে কনমেবল অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে প্রথমবারের দেখায় ম্যাচের মাত্র চতুর্থ মিনিটে গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লির গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ব্রাজিল। তবে লিড ধরে রাখতে পারেনি সেলেসাওরা। ঘরের মাঠে ম্যাচের ৭৫ আর ৭৯ মিনিটে লুইস দিয়াসের জোড়া গোলে শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানের জয় পেয়েছিল কলম্বিয়া।
ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যায় ব্রাজিল। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে ভিনিসিয়ুসকে বক্সের ভেতর ফেলে দেন কলম্বিয়া রাইটব্যাক দানিয়েল মুনোস। তাতে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি অ্যালেক্সিস অ্যরেরা। স্পটকিকে কলম্বিয়া গোলকিপারকে বিপরীত দিকে পাঠিয়ে ঠান্ডা মাথায় স্কোরলাইন করেন ১-০ বার্সা উইঙ্গার।
শুরুতেই গোল পেয়ে উজ্জীবিত ব্রাজিল ধাক্কা খায় ম্যাচের ২৭তম মিনিটে। পেশিতে টান লাগায় হঠাৎ মাঝমাঠে শুয়ে পড়েন গেরসন। অস্বস্তি ফুটে ওঠে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডারের চোখে-মুখে। মাঠে ছুটে যায় চিকিৎসক দল। তাতে আশাব্যঞ্জক কিছু হয়নি। মাঠ ছেড়ে উঠে যান গেরসন। বদলি হিসেবে মাঠে নামেন জোলেনিন্তন। আর বদলি নামা জোয়েলিন্তনের ভুলেই বিরতির আগে গোল হজম করে বসে ব্রাজিল!
ম্যাচের ৪১ মিনিটে কলম্বিয়াকে সমতায় ফেরানো গোলটা করেন লুইস দিয়াস। এ গোলে জোয়েলিন্তনের অবদান কম নয়! সতীর্থকে পাস দিতে গিয়ে বিলম্ব করেন নিউনিক্যাসল ইউনাইটেডে খেলা এ মিডফিল্ডার। এ সুযোগে জোয়েলিন্তনের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে ডি বক্সের বাঁ প্রান্তে থাকা দিয়াসকে বল বাড়ান হামেস রদ্রিগেস। সে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে একটু এগিয়ে পজিশন তৈরি করে দারুণ শটে স্কোরলাইন ১-১ করেন লিভারপুল স্ট্রাইকার।
এরপর ম্যাচের সময় যত গড়িয়েছে, দুদলই শারীরিক ফুটবলে মনোযোগী হয়েছে। এর মধ্যে ম্যাচের ৭১ মিনিটে ফ্রি-কিক ঠেকাতে গোলপোস্ট থেকে কিছুটা এগিয়ে পাঞ্চ করেন আলিসন। দুর্ভাগ্যবশত ব্রাজিল গোলকিপারের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় দাভিনসন সানচেসের। এতে মাঠে পড়ে যান সানচেস। চিকিৎসক দল এসে বেশ কিছু সময় নিয়ে চেষ্টা চালানোর পর স্ট্রেচারে করে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় কলম্বিয়া ডিফেন্ডারকে।
সংঘর্ষে আঘাত পেয়েছেন আলিসনও। লিভারপুল গোলকিপারকে তুলে নিয়ে বেন্তোকে মাঠে নামান দরিফাউ। একইসঙ্গে রদ্রিগো, গিমারেস, ভেন্দেরসনকেও তুলে নিয়ে সাভিনিও, আন্দ্রে ও ওয়েসলেকে মাঠে নামান ব্রাজিল কোচ। তাতে ব্রাজিলের আক্রমণের ধার কিছুটা বাড়ে বটে, কিন্তু ভিনিসিয়ুস-রাফিনিয়াদের দারুণ সব আক্রমণ পরিণতি পাচ্ছিল না বাজে ফিনিশিংয়ের কারণে।
নির্ধারিত সময়ে আর কোনো গোল না হওয়ায় ম্যাচের পরিণতি যখন ড্র বলে ধরে নেওয়া হচ্ছিল, ঠিক তখনই ব্রাজিলকে উদ্ধার করতে হাজির হন ভিনিসিয়ুস। দৃষ্টিনন্দন গোলে আর্জেন্টিনা ম্যাচের প্রস্তুতিটাও নিয়ে রাখলেন মাদ্রিদ উইঙ্গার। পরের ম্যাচে আগামী বুধবার আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মাঠে নামবেন দরিভাল জুনিয়রের শিষ্যরা।