• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩০, ২২ শা'বান ১৪৪৬

আর্জেন্টিনার কাছে ৬ গোল খাওয়া ব্রাজিলই শিরোপা জিতল


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ১০:১১ এএম
আর্জেন্টিনার কাছে ৬ গোল খাওয়া ব্রাজিলই শিরোপা জিতল
ছবি : সংগৃহীত

আর্জেন্টিনাকে পেছনে ফেলে আবারও দক্ষিণ আমেরিকান অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতল ব্রাজিল। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় এবং সব মিলিয়ে ১৩তমবার দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টটির ট্রফি জিতল সেলেসাওরা। অথচ এবারের আসরে ব্রাজিলের শুরুটা ছিল ভুলে যাওয়ার মতোই।
রাতের ম্যাচে চিলিকে ৩-০ গোলে ব্যবধানে উড়িয়ে নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক সেরে রেখেছিল ব্রাজিল। সাউথ আমেরিকান অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা উদযাপন তখন সেলেসাওদের জন্য সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সে উদযাপন ঠেকাতে পারত শুধু আর্জেন্টিনা। সেক্ষেত্রে নিজেদের ম্যাচে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে অন্তত ৪ গোলের ব্যবধানে জিততে হতো আলবিসেলেস্তেদের।

কিন্তু সমীকরণ মেলানো জয় তো দূরের কথা, আর্জেন্টিনা ম্যাচটা হেরে গেছে ৩-২ ব্যবধানে। তাতে নিশ্চিত হয়ে যায় ব্রাজিলের হাতেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো উঠছে দক্ষিণ আমেরিকান যুব ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। এ নিয়ে টুর্নামেন্টে রেকর্ড ১৩তম বারের মতো শিরোপা ঘরে তুলল সেলেসাওরা।

এ প্রতিযোগিতায় ব্রাজিলের দাপট কতটা, সেটা নিকট প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ বার শিরোপা জিতেছে উরুগুয়ে। আর তৃতীয় স্থানে থাকা আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতেছে পাঁচবার।

ব্রাজিলের শিরোপা জয়ের উল্লাস

অতীত ইতিহাস পক্ষে থাকলেও এবার টুর্নামেন্টে ব্রাজিলের শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনার কাছে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল সেলেসাওরা। গ্রুপ পর্বের শেষটাও হয়েছিল কলম্বিয়ার কাছে হার দিয়ে।

সেই ব্রাজিলই ফাইনাল রাউন্ডে দেখা দিল ভিন্নরূপে। একের পর এক ম্যাচে হারিয়েছে উরুগুয়ে-কলম্বিয়া-প্যারাগুয়েকে। চতুর্থ ম্যাচে আর্জেন্টিনার সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করলে শিরোপার জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয় শেষ ম্যাচ পর্যন্ত। সে ম্যাচে চিলিকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক সেরে রাখে তারা। পরে আর্জেন্টিনা-প্যারাগুয়ে ম্যাচ শেষ হতেই নিশ্চিত হয়ে যায়, দক্ষিণ আমেরিকার সেরা ব্রাজিলের যুবারাই।

স্কোরলাইন অবশ্য ম্যাচের পুরো বার্তা দিতে পারছে না। ভেনেজুয়েলার স্তাদিও হোসে আন্তোনিও আনসোতেগুইয়ে প্রথমার্ধে তেমন সুবিধা করতে পারেনি ব্রাজিল। এমনকি ম্যাচের ৭২ মিনিট পর্যন্ত স্কোরলাইন ছিল ০-০। তবে এরপরই যেন বদলে গেল ব্রাজিল। একে একে চিলির জালে বল জড়ায় তিনবার।

যার শুরুটা হয়েছে দেভিদ ওয়াশিংটনকে দিয়ে। ম্যাচের ৭৩ মিনিটে পেদ্রোর পাস থেকে বল পেয়ে বাঁ প্রান্ত দিয়ে বক্সের ভেতর ঢুকে শট নিয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ড। সেটা ঠিকঠাকভাবে ঠেকাতে ব্যর্থ হন চিলি গোলকিপার ইগনাসিও সায়েস। বল তাঁর হাতে লেগে গোললাইন অতিক্রম করে যায়।

ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের ৪ মিনিট আগে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় ব্রাজিল। এবার আক্রমণের শুরু বাঁ প্রান্ত দিয়ে। মধ্যমাঠের একটু সামনে থেকে রিকার্দো মাথিয়াসের পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বিপজ্জনকভাবে বক্সে ঢুকে শট নেন পেদ্রো। চিলি গোলকিপার সায়েসের চেষ্টা কোনো কাজেই আসেনি। বল আশ্রয় নেয় জালে।

এর দু মিনিট পর আবারও গোল উদযাপন করে ব্রাজিল। এবার গোলের খাতায় নাম লেখান মাথিয়াস। পেদ্রোর কর্নার থেকে হেডে ব্রাজিলের বড় জয় নিশ্চিত করেন তিনি।

ব্রাজিল ম্যাচ শেষে কিছু সময় পর একই ভেন্যুতে খেলতে নামে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের শুরু থেকে বলের দখলে জোর দেয় দিয়েগো প্লাসেন্তের দল। অন্যদিকে প্যারাগুয়ে খেলেছে প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবল। আর আক্রমণে উঠেই শট নিয়েছে আন্তোনিল আলকারাসের শিষ্যরা। পরিসংখ্যানও সেটাই বলছে। ম্যাচের ৬১ শতাংশ সময় বল দখলে রাখা আর্জেন্টিনা শট নিয়েছে ১৩টি, বিপরীতে প্যারাগুয়ে শট নিয়েছে ২৪টি! আর তাতে সফলও হয়েছে প্যারাগুয়ে।

ম্যাচের ৩০ মিনিটে অ্যালান তোবিয়াস মোরিনিগোর ক্রসে দারুণ ফিনিশিংয়ে প্যারাগুয়েকে এগিয়ে দেন লুকা কেমেত। গোল খেয়ে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া আর্জেন্টিনা চেষ্টা চালালেও প্যারাগুয়ের রক্ষণে বারবার আটকে যাচ্ছিলেন এচেভেরি-ক্যারিসোরা। তাতে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় প্যারাগুয়ে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যবধান বাড়ায় আলকারাসের দল। ৪৭ তম মিনিটে মাতিয়ান আগুয়েয়োর লম্বা করে বাড়ানো পাস থেকে স্কোরলাইন ২-০ করেন তিয়াগো কাবায়েরো। আর্জেন্টিনার শিরোপার স্বপ্ন তখনই ধূসর হতে থাকে।

৫২ মিনিটে ব্যবধান কমান (২-১) মাহের ক্যারিসো। ১৪ মিনিট পর আবারও গোল করেন ১৮ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ড। স্কোরলাইন তখন ২-২। আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখতে থাকেন। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূর্ণতা পায়নি। উল্টো ম্যাচের ৮২ মিনিটে সান্তিনো লিওনের গোলে এগিয়ে যায় প্যারাগুয়ে। শেষ পর্যন্ত ওই গোলেই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয়।

এ হারে ৫ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থেকেই টুর্নামেন্ট শেষ করল আর্জেন্টিনা।  সমান ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে প্যারাগুয়ে। কলম্বিয়ার পয়েন্ট সমান ৯ হলেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে তৃতীয় স্থান দখল করেছে তারা। অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের পয়েন্ট ১৩। আর উরুগুয়ে ও চিলি এ পর্ব শেষ করেছে ১ পয়েন্ট নিয়ে।

টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, গ্রুপের শীর্ষ চার দল সরাসরি সুযোগ পাবে আসন্ন অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে। চিলি ষষ্ঠ হয়ে শেষ করলেও স্বাগতিক হিসেবে খেলবে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে। আর পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন শিরোপা ঘরে তোলে ব্রাজিল। 

Link copied!