শুরুতে দারুণ বোলিং করলেও বাটলারের ক্যাচ ছেড়ে বিপদেই পড়েছিল বাংলাদেশ। ২০ রানে জীবন পাওয়া বাটলার খেলেছেন ৬৭ রানের ইনিংস। তবে অন্যদের ব্যর্থতা ও ডেথ ওভারে অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে ইংল্যান্ডকে ১৫৬ রানেই আটকে রেখেছিল টাইগাররা।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে টাইগারদের ঝড়ো শুরু এনে দিন লিটন দাস ও রনি তালুকদার। পাওয়ার প্লেতে তারা ফিরে গেলে নাজমুল হোসেন শান্তর তাণ্ডবে জয়ের ভিত তৈরি হয় বাংলাদেশের। এরপর বাকি কাজ সম্পূর্ণ করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
বৃহপ্সতিবার (৯ মার্চ) তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ইংল্যান্ডকে ছয় উইকেটের ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ইংলিশদের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের প্রথম জয়।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নাসুম ও তাসকিনের করা প্রথম দুই ওভার থেকে ১৮ রান তুলতে সক্ষম হয় ইংল্যান্ড। তৃতীয় ওভারে এক চার হজম করলেও মাত্র পাঁচ রান দেন মোস্তাফিজুর রহমান।
টাইগারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে স্বভাবসুলভ অতি আগ্রাসী ব্যাটিং করতে পারছিল না ইংল্যান্ড। তবে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মোস্তাফিজকে এক চার ও ছক্কা মেরে যেন সেটাই শুরু করতে চাইলো ইংলিশরা।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারের প্রথম বলেই জীবন পান ইংলিশ ওপেনার সল্ট। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ ফেলেন নাসুম আহমেদ। একই ওভারে জস বাটলারকে নতুন জীবন দেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। নাসুমের বলে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন বাটলার, কিন্তু সোজার উপরে উঠে গেলেও সহজ ক্যাচ ফেলে দেন সাকিব।
পরের বলেই চার মেরে দলের রান পঞ্চাশ পূর্ণ করেন সল্ট। নতুন জীবন পেয়ে দুই ওপেনার ইংলিশদের স্কোরবোর্ডে পাওয়ার প্লেতে জমা করেন ৫১ রান।
এরপর বল হাতে নিয়ে রানের গতি কিছুটা কমাতে সক্ষম হন অধিনায়ক সাকিব। তবে সাকিবকে ছক্কা হাকিয়েই রানের গতি আবারও বাড়ানো শুরু করেন বাটলার ও সল্ট। নতুন জীবন পেয়ে তার পুরোটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন দুই ইংলিশ ওপেনার।
ইনিংসের ১০ম ওভারে নিজের বোলিং কোঠা পূরণ করতে এসে দলকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন নাসুম আহমেদ। ওভারে শেষ বলে সল্টকে লিটনের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান তিনি।
তিন নম্বরে নেমে খুব বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি ডেভিড মালান। দলীয় ৮৮ রানে নাজমুল হোসেন শান্তর দারুণ ক্যাচে তাকে ফিরিয়ে দেন সাকিব।
তবে অন্যপ্রান্তে ঠিকই ইংল্যান্ডের রানের গতি বাড়িয়েছেন অধিনায়ক বাটলার। ৩২তম বলে হাসান মাহমুদকে লং অনের উপর দিয়ে উড়িয়ে মেরে স্পর্শ করেছেন হাফ সেঞ্চুরি। পরের বলে আবারও মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারেন আরও একটি ছক্কা।
বাটলারের তোপে ১৫ ওভারে ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ১২৬ রান। চার নম্বরে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিং করে অধিনায়ককে যোগ্য সঙ্গ দেন বেন ডাকেট।
এরপর টানা দুই বলে দুই উইকেট তুলে নেয় টাইগাররা। ১৬তম ওভারের শেষ বলে মোস্তাফিজ ডাকেটের স্টাম্প উপড়ে ফেলার পর ১৭তম ওভারের প্রথম বলে বাটলারকে শান্তর ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন হাসান মাহমুদ।
দলীয় ১৩৪ রানে ফেরার আগে ১৩ বলে তিন চারে ২০ রান করেন ডাকেট আর বাটলারের ব্যাট থেকে আসে ৪২ বলে সমান চারটি করে চার ও ছক্কায় ৬৭ রানের ইনিংস।
১৯তম ওভারে নিজের দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন হাসান মাহমুদ। ম্যাচে নিজের তৃতীয় ক্যাচ নিয়ে স্যাম কুরানকে বিদায় করেন শান্ত। ইনিংসের শেষ ওভারে বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই ক্রিস ওকসকে ফিরিয়ে দেন তাসকিন আহমেদ।
টাইগার বোলারদের তোপের মুখে শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র ৩০ রান তুলতে সক্ষম হয় ইংল্যান্ড। সবমিলিয়ে ছয় উইকেট হারিয়ে ২০ ওভার শেষে ১৫৬ রান করেছে ইংল্যান্ড।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে স্যাম কারেনের করা প্রথম ওভার থেকে দুই চারে ১০ রান জমা হয় বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে। আট বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা রনি তালুকদার যেন এদিন নিজের ভিতর জমে থাকা ক্ষোভ ঝাড়ছিলেন। ক্রিস ওকসের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে একাই হাঁকান আরও দুই চার।
তৃতীয় ওভার করতে আসা জোফরা আর্চারের ওভার থেকে আসে আরও ১১ রান। ওয়ানডে সিরিজে নিজের ছায়া হয়ে থাকা লিটন এদিন দিয়েছেন বড় ইনিংসের ইঙ্গিত।
তবে প্রত্যাবর্তনে ঝড়ো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি রনি তালুকদার। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ইংলিশ লেগ স্পিনার আদিল রাশিদের গুগলি বুঝতে না পারে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ফেরার আগে ১৪ বলে চার চারে ২১ রান করেন তিনি।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আর্চারের শর্ট ডেলিভারি উড়িয়ে মারতে গিয়ে ওকসের হাতে ধরা পড়েন লিটন কুমার দাস। ফেরার আগে ১০ বলে দুই চারে ১২ রান করেন লিটন।
এরপর যেন বিপিএলের ফর্ম টেনে আনলেন শান্ত। ইংলিশ পেসার মার্ক উডের করা সপ্তম ওভারের প্রথম চার বলে টানা চার বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। শুধু বাউন্ডারি নয়, রানিং বিটুইন দ্য উইকেটেও দুর্দান্ত দক্ষতা দেখিয়েছেন হৃদয় ও শান্ত।
মাত্র ২৮ বলেই ৫০ রানের জুটি গড়েন তারা। ১৫৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শান্ত আর হৃদয়ের তোপে প্রথম ১০ ওভারেই বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৯৮ রান।
২৭ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন শান্ত। দলীয় ১০৮ রানে শেষ হয় হৃদয়ের অভিষেক ইনিংস। প্রথমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নেমে হৃদয় ফেরেন ১৭ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ২৪ রানে।
হৃদয় ফেরার পর দ্রুত ফেরেন শান্ত। দলীয় ১১২ রানে বুলেট গতির ডেলিভারিতে শান্তর স্টাম্প উপড়ে ফেলেন মার্ক উড। ফেরার আগে ৩০ বলে আট চারে ৫১ রানের ইনিংস খেলেন শান্ত।
দ্রুত দুই উইকেট হারানো দলকে জয়ের পথে নেওয়ার দায়িত্ব নেন অধিনায়ক সাকিব, তাকে সঙ্গ দেন আফিফ হোসেন। শেষ পাঁচ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২৯ রান।
মঈন আলির করা ১৬তম ওভারে ১০ রান তুলে জয়ের রাস্তা আরও সহজ করেন সাকিব। শেষ পর্যন্ত দুই ওভার বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ২৪ বলে ৩৪ রানে সাকিব এবং ১৩ বলে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন আফিফ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৫৬/৬ (সল্ট ৩৮, বাটলার ৬৭, মালান ৪, ডাকেট ২০, মইন ৮*, কারান ৬, ওকস ১, জর্ডান ৫*; নাসুম ৪-০-৩১-১, তাসকিন ৪-০-৩৫-১, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৪-১, সাকিব ৪-০-২৬-১, হাসান ৪-০-২৬-২)
বাংলাদেশ: ১৮ ওভারে ১৫৭/২ (লিটন ১২, রনি ২১, শান্ত ৫১, তৌহিদ ২৪, সাকিব ৩৪, আফিফ ১৫*; কারান ২-০-১৮-০, ওকস ২-০-২১-০, আর্চার ৩-০-২৭-১, রশিদ ৩-০-২৫-১, উড ২-০-২৪-১, মইন ৪-০-২৭-১, জর্ডান ২-০-১৬-০)
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী