২০২৩ সালটা ক্রিকেটে বাংলাদশের অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা নিয়েই কাটালো। অনেক সাফল্যে মোড়া ছিল এই বছরটি। আবার বিশ্বকাপে নিদারুণ ব্যর্থতাও বাংলাদেশকে লজ্জা ডুবিয়েছে। এছাড়া সাকিব-তামিমের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক ছিল আলোচিত বিষয়।
সবচেয়ে বড় কথা ২০২৩ সালে বাংলাদেশ খেলেছে ৫০টি ম্যাচ। নিজেদের ৩৭ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে এক বছরে এর আগে এতগুলো ম্যাচ খেলেনি টাইগাররা। বছরের শেষ দিনে রোববার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেই ম্যাচের অর্ধশত পূরণ করলো বাংলাদেশ।
বছরের শুরুতে প্রথম দুই মাস কোনো ম্যাচই খেলেনি বাংলাদেশ। বছরের পরের ১০ মাসে খেলেছে এই ৫০ ম্যাচ। এর মধ্যে ৪টি টেস্ট, ৩২টি ওয়ানডে এবং ১৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে টাইগাররা। ৫০ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ২৪টিতে। ২০১৮ সালে ৪৪ ম্যাচে ২১ জয় ছাপিয়ে যা নতুন রেকর্ড।
রেকর্ড ম্যাচের বছরে টি-টোয়েন্টিতে কোনো সিরিজ হারেনি টাইগাররা। সব মিলিয়ে মোট চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে তিনটিতে জয় এবং শেষ সিরিজ ড্র করেছে তারা।
বছরের শুরুতে মার্চে ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টিতে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছিলো বাংলাদেশ। একই মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জয় পেয়েছিলো টাইগাররা। এরপর গত জুলাইতে আফগানদের ২ ম্যাচের সিরিজে হারিয়েছে সাকিবের দল। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৩ ম্যাচের সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র করে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতেও ১১ ম্যাচে জয় ৮টি, একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় হেরেছে মাত্র ২টিতে। বেশির ভাগ সাফল্যই অবশ্য ঘরের মাঠে।
নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে একই বছরে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে মনে রাখার মতো জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডকে টেস্টে হারায় টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ওয়ানডে জয়ের পর টি-টোয়েন্টিতেও প্রথম জয় এসেছে বাংলাদেশের।
বিশ্বকাপে ব্যর্থতা অনেক সাফল্য ম্লান করে দিয়েছে। অথচ বাংলাদেশ বছরটা শুরু করেছিল ভারতকে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে হারানোর আমেজে। বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের স্বপ্ন নিয়ে ভারতে যাওয়া বাংলাদেশ ফিরেছে মাত্র দুটি জয় নিয়ে। সেই দুই জয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সরাসরি খেলার সুযোগ হয়তো করে দিয়েছে, কিন্তু তাতেও বাকি সাত ম্যাচে পরাজয়ের গ্লানি মুছে যায়! যে সাত পরাজয়ের মধ্যে সবচেয়ে দগদগে ক্ষত অবশ্যই নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও হেরে যাওয়া।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বছরের সেরা সাফল্য এনে দিয়েছেন বাংলাদেশের যুবারা। বছরের শেষে এসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্ব। শ্রীলঙ্কা ও ভারতের মতো বড় দলকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে যুবারা। ফাইনালে হারিয়েছে স্বাগতিক আমিরাতকে।
নারী ক্রিকেটারদের জন্যও বছরটি ছিল স্মরণীয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় নারীদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বাংলাদেশ খেলেছে সুপার সিক্সে। বছরের শুরুতে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে নারী জাতীয় দলের প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়, ওয়ানডে সিরিজ ড্র, দুটোই বড় অর্জন। জয় এসেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজেও। এশিয়ান গেমস থেকে মিলেছে ব্রোঞ্জপদক। শ্রীলঙ্কায় প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে জয় এ বছরই। প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সাদা বলের দুই সংস্করণেই জয়ের দেখা পেয়েছে নিগার সুলতানার দল।
অন্য দুই সংস্করণে বছরটা ভালোই কেটেছে। ৪ টেস্টের ৩টিতেই জয়। নিউজিল্যান্ডের আগে দুটি জয় আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এর মধ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়টা এসেছে ৫৪৬ রানে, যা টেস্ট ইতিহাসে রানের ব্যবধানে তৃতীয় সর্বোচ্চ জয়।
তামিম ইকবালের বিভিন্ন ইস্যু ছিল মিডিয়ার শিরোনামে। গত জুলাইয়ে আফগানিস্তান সিরিজ চলাকালে অবসরের ঘোষণা দেন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ফেরার ঘোষণা দেন। তবে আফগানিস্তান সিরিজটি আর খেলেননি। ছিলেন না এশিয়া কাপেও। চোট থেকে সুস্থ হলেও তামিমকে ছাড়াই বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করে বিসিবি। সাকিবকে বিশ্বকাপ পর্যন্ত অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়। বিশ্বকাপের ঠিক আগে এক সাক্ষাৎকারে তামিমের কড়া সমালোচনা করেন সাকিব। বাংলাদেশ যখন বিশ্বকাপে, তখন দেশের ক্রিকেটের দুই মহাতারকা মুখোমুখি অবস্থানে। মাঠের খেলার চেয়ে সাকিব-তামিম বিবাদই ছিল বছরের অন্যতম আলোচিত বিষয়।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ‘প্রথম’ অর্জনের সাফল্য ছিল নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিবের অনুপস্থিতিতে বছরের শেষে এসে শান্ত পান তিন সংস্করণের নেতৃত্ব। নিজের নেতৃত্বগুণের প্রমাণ দিয়েছেন তিনি।